ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

কীভাবে এলো শূন্য?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

শূন্য থেকে ৯ সংখ্যাকে অনেকে মৌলিক সংখ্যা বলেন। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন- শূন্য কি আদৌ কোনো সংখ্যা? ব্যাকরণের পাতায় অবশ্য শূন্য মানে একটি বিন্দু। কিন্তু অঙ্কশাস্ত্রে মোটেই তা নয়। কীভাবে হলো শূন্যের শুরু? 

মনে করা হয় সংষ্কৃতে যা শ্যুন্যেয়া তা আরব দেশে হয় সাফাইরা, যার অর্থ কিছু নেই। সাফাইরা শব্দটি গ্রিস থেকে রোমে পৌঁছায় জেফিরো অপভ্রংশ হয়ে। এই জেফিরো থেকেই আধুনিক ইংরেজি জিরো এসেছে।

শূন্যের আবিষ্কার ঠিক কবে, কোথায় হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। তবে বহুল স্বীকৃত মত হলো শূন্য আবিষ্কার হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং আবিষ্কারক হলেন আর্যভট্ট।

অনেকে মনে করেন আর্যভট্টের বহু আগেও হিন্দু পন্ডিতরা শূন্যের ব্যবহার জানতেন।কেউ কেউ আবার বলেন পন্ডিত ব্রহ্মগুপ্ত শূন্যের আবিষ্কারক।

অনেকেই ভাবতে পারেন, শূন্য আবিষ্কারের আগে কি অঙ্কশাস্ত্র ছিল না? অঙ্কশাস্ত্র শূন্য আবিষ্কারের বহু আগে থেকেই ছিল।

পিঙ্গল কর্তৃক রচিত ছন্দসূত্রে শূন্যের ব্যবহার আছে। যা খৃষ্টপূর্ব ২০০ শতকে রচিত। আর্যভট্ট, বরাহমিহির প্রমুখ গাণিতজ্ঞের গণিত বইতে, বর্গমূলের অঙ্কে এবং দশমিকের অঙ্কে শূন্যের বহুল ব্যবহার দেখা গেছে।

আলবেরুনীর ভ্রমণবৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, সে সময় ০ সংখ্যাটি লেখা হত। সপ্তম শতাব্দীর বিভিন্ন লিপিতেও ০ সংখ্যাটি ছিল।

মনে করা হয় ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ০ সংখ্যাটি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন দুই আরবি গণিতজ্ঞ আল কিন্দির এবং আল খোয়ারিজমি। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই সংখ্যাটি ইউরোপে প্রচলিত হয়।

ইউরোপ থেকেই শূন্য সংখ্যাটি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইংরেজি ভাষাতে জিরো শব্দটি প্রথম দেখা যায় ১৫৯৮ খৃষ্টাব্দের কাছাকাছি।

ভারতবর্ষে বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনো এক আনা, দুআনা এইভাবে হিসাব করেন। তাদের হিসাবে ১৬ আনায় এক টাকা নয়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২, ৬৪ এই সংখ্যাগুলোর হিসাব করা হচ্ছে।

মহেঞ্জোদারো সভত্যায় প্রাপ্ত বাটখারাগুলো ১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২, ৬৪, ১২০, ২০০, ৩২০, ৬৪০ এই হিসাবের। সেখানে ১৬ সংখ্যাটি সূচিত সংখ্যাগুলি ছিল বড় একক।

বৈদিক যুগে আবার কোটি সংখ্যাটির পরেও প্রযুত, অর্বুদ, সমুদ্র, অন্ত, পরার্থ শব্দগুলো পাই। বৈদিক যুগের পরবর্তী কালে ৫৪ এবং ১৯৮ সংখ্যার সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে বোঝাই যাচ্ছে এই সংখ্যাগুলো শূন্য ছাড়া কোনোভাবে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

আবার কোটি সংখ্যাটি হল ১০০০০০০০ অর্থাৎ ১ এর পিছনে ৭ টি শূন্য এর পরেও সংখ্যাসূচক শব্দের অস্তিত্ত্ব পাওয়া যাচ্ছে।

শূন্য সংখ্যাটির ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে যে দু’জন ভারতীয়র নাম উঠে আসে, তারা হলেন আর্যভট্ট এবং ব্রহ্মগুপ্ত।

আর্যভট্ট বা আর্যভ হলেন বেদোত্তর ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। বর্তমানের কেরালা রাজ্যে ৪৭৬ খৃষ্টপূর্বাব্দে তার জন্ম। তিনি বীজগণিত, পাটীগণিত, ত্রিকোনমিতি, জ্যামিতি, ঘাতের অঙ্ক, দ্বিঘাত সমীকরণ, প্রভৃতি পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতিতে অঙ্ক সমাধানের উদাহরন তার পুস্তকে লিখে গেছেন। 

আর্যভট্ট সূর্যের ব্যাস, বৃত্তের ক্ষেত্রফল, গোলকের আয়তন, ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল সংক্রান্ত অনেক তথ্য দিলেও শূন্যের আবিষ্কারক হিসাবে তিনি কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

আর চর্তুভুজের ক্ষেত্রফল, তল, আয়তন, ও বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্য বিষয়ক আলোচনা পাওয়া যায় ব্রহ্মগুপ্তের বইয়ে।

তিনিই প্রথম গণিতজ্ঞ, যিনি অঙ্ক হিসাবে শূন্যের গাণিতিক ব্যাখ্যা করেন এবং প্রমাণ করে দেখান যে, শূন্যের সঙ্গে কিছু যোগ বা বিয়োগ করলে আগের সংখ্যাটি অপরিবর্তিত থাকে। আবার দেখান যে, কোনো সংখ্যার সঙ্গে শূন্য গুণ করলে শূন্য হয় এবং শূন্য দিয়ে কোনো সংখ্যাকে ভাগ করলে অসীম হয়।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে শূন্যের আবিষ্কার বা প্রচলন যে ভারতীয় উপমহাদেশেই প্রথম হয় তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই।  

এএইচএস
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি