কুরআনের আলোকে দান
প্রকাশিত : ১৫:২১, ৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ২২:৪৫, ৭ মে ২০১৯
রোযার উপবাসের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী মানুষের অনাহার কষ্টের কথা বুঝা যায় এবং এ দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য সঠিক ব্যবস্থা দান-সদকা করা। রাসূল (সা.) অন্যান্য মাসে বড় দাতা হওয়ার পরও রমান মাসে তিনি আরও বেশি করে দান করতেন। রমজান মাসে এক টাকা দান করলে সত্তর টাকা দানের সওয়াব পাওয়া যায়।
মুমিনের মাল-সম্পদ সঞ্চিত হয়ে থাকার জন্যে নয়। একদিক থেকে যেমন আয় হবে তেমনি অপরদিকে তা ব্যয় হয়ে যাবে। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রয়োজন পূরণের উপকরণ যোগাড় ও মহান কাজটি পরিচালনার জন্যে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যে সম্পদ খরচ করা ।
দান সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করো তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগেই। অন্যথায় অনুতাপ অনুশোচনা করে বলতে হবে, হে আল্লাহ আমাকে যদি অল্প কিছু সময় দিতে, তাহলে আমি দান খয়রাত করতাম এবং নেক লোকদের একজন হতাম। কারও মৃত্যুর নির্ধারিত সময় আসার পর আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পর্কে ভালভাবে ওয়াকেফহাল।’ (মুনাফিকুন ১০-১১)
‘খরচ কর আল্লাহর পথে, নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। উত্তমরূপে নেক কাজে আঞ্জাম দাও। এভাবে যারা নেক কাজে উত্তমরূপে আঞ্জাম দিতে যত্নবান আল্লাহ তাদের অবশ্যই ভালবাসেন।’ (বাকারা ১৯৫)
‘যারা আল্লাহর পথে তাদের মাল খরচ করে তাদের এই খরচকে এমন একটি দানার সঙ্গে তুলনা করা চলে যা জমিনে বপন বা রোপণ করার পর তা থেকে সাতটি ছড়া জন্মে এবং প্রতিটি ছড়ায় একশতটি করে দানা থাকে। এভাবে আল্লাহ যাকে চান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ সুবিশাল ও মহাজ্ঞানী।’ (বাকারা ২৬১)
‘আমার ঈমানদার বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে যেন খরচ করে, গোপনে অথবা প্রকাশ্যে, সেদিন আসার আগেই যেদিন কোন কেনাবেচার সুযোগ থাকবে না, যেদিন কোন বন্ধুত্ব কাজে আসবে না।’ (ইব্রাহিম ৩১)
‘কাফেরগণ তাদের মাল খরচ করে আল্লাহর পথে বাধা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্যে। এখন তারা তা আরও ব্যয় করবে, এভাবে অচিরেই এই মাল খরচ তাদের অনুতাপ অনুশোচনার দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। অতঃপর তাদের পরাভূত হতে হবে। পরিণামে কাফেরদের জাহান্নামে অবস্থান করতে হবে।’ (আনফাল ৩৬)
‘যারা আল্লাহর পথে মাল খরচ করে, অতঃপর এ কারণে খোটা দেয় না এবং কষ্ট দেয় না, তাদের রবের কাছে তাদের জন্য যথার্থ প্রতিদান রয়েছে, তাদের কোন চিন্তা ও ভয়ের কারণ নেই।’ (বাকারা ২৬২)
‘তোমরা তোমাদের সম্পদ থেকে যা কিছু খরচ করে থাক তার যথার্থ প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে। তোমাদের উপর কোনরূপ অবিচার করা হবে না।’ (বাকারা ২৭২)
‘তোমরা কিছুতেই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলোকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।’ (আলে ইমরান ৯২)
‘হে মুমিনগণ, তোমরা দান কর, আমি যা তোমাদেরকে দিয়েছি তা থেকে সেদিন আসার পূর্বেই যেদিন বেচাকেনা, কোন বন্ধুত্ব এবং কোন সুপারিশ চলবে না।’ (বাকারা ২৫৪)
‘যারা স্বচ্ছল অবস্থায় ও অস্বচ্ছল অবস্থায় দান করে, যারা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে এবং যারা মানুষকে ক্ষমা করে, এসব নেককার লোককেই আল্লাহ ভালবাসেন।’ (আলে ইমরান ১৩৪)
‘তারা অল্প বা বেশি যা কিছু খরচ করুক না কেন কিংবা কোন উপত্যকাই অতিক্রম করুক না কেন এসব তাদের নামে রেকর্ড করা হয়, যাতে তারা যা করেছে তার সর্বোত্তম প্রতিদান আল্লাহ তাদের দিতে পারেন।’ (তাওবাহ ১২১)
দান সম্পর্কে হাদীস : আবু ইয়াহিয়া খারীম ইবনে ফাতিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (সা,) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর পথে একটি জিনিস দান করলো, তার জন্যে সাত শত গুণ সওয়াব লেখা হবে।’ (তিরমিযি)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার নিকট যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণও স্বর্ণ থাকে, তাহলে তিন রাত অতিবাহিত হওয়ার পরও তার সামান্য কিছু আমার কাছে অবশিষ্ট থাকুক তা আমি পছন্দ করি না। তবে আমার দেনা পরিশোধের জন্য সামান্য যেটুকু প্রয়োজন কেবলমাত্র সেটুকু রেখে বাকী আল্লাহর কাজে দান করে দিব।’ (বুখারী)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখনই আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দু’জন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন হে আল্লাহ তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। আর অন্যজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ কৃপণ ব্যক্তিকে ধ্বংস কর।’ (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাক আমিও তোমাকে দান করব।’ (বুখারী, মুসলিম)
তথ্যসূত্র : অধ্যাপক মাওলানা আতিকুর রহমান ভূঁইয়ার কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন গ্রন্থ থেকে
এএইচ/