ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

কুড়িগ্রামে বন্যায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত : ২০:৫০, ১৩ জুলাই ২০১৯

কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপূত্র, তিস্তা ও দুধকুমোর নদীর পানি শনিবার দুপুরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে এ চারটি নদীর অববাহিকার চর-দ্বীপচর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সরকারি হিসাবে কমপক্ষে ২৮ হাজার ১৮২ পরিবারের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যার পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়েছে ৭২৫টি পরিবার। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রীজ ও কালভাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল বিভাগকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রাম জেলার ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ধরলা’য় ৫২ সে.মি, ব্রহ্মপূত্র নদে ৩৯ সে.মি, তিস্তা’য় ৯ সে.মি ও দুধকুমোর নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সে.মি উপর দিয়ে শনিবার দুপুর থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে সারডোবে ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। চিলমারীর নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে নদী ভাঙনে ৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় জানান, বন্দবের ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০০মি. ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া যাদুরচর ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে নেয়া হয়েছে। আর ২৮টি পরিবারকে ঘর নির্মানের জন্য ঢেউটিন ও শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

চিলমারীর তিস্তার ভাঙনে হরিপুর এলাকার মহির প্রামাণিকের বাড়ির পাশের একটি সাব-বাঁধ ভেঙে গিয়ে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজগার আলী সরকার জানান,তার ইউনিয়নের বাসন্তিপাড়া, মাঝিপাড়া, রায়পাড়া, টোন গ্রাম, উত্তর রমনা, খেউনি পাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় এসব গ্রামের বাসিন্দারা ইউনিয়নের ওয়াবদা বেরিবাঁধ, জোরগাছ ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রিয়াজুল জান্নাত মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, বাংটুর ঘাট, উলিপুরের চর বজরা ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলাল গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এই এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার  হলোখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উমর ফারুক জানান, ধরলা নদীর পানি বেড়ে তার ইউনিয়নে ধরলার উত্তর তীরবর্তী অংশের গ্রামসহ সারডোব, সাত কালোয়া, খামার হলোখানা এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বেলাল হোসেন জানান, ওই ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।’

কুড়িগ্রাম জেলা বন্যা কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলার ২৮ হাজার ১৮২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৭২৫টি পরিবার।

কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক  হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা মোকাবেলায় আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোয় ৫০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ শুরু হয়েছে।

এছাড়াও সাড়ে চারশত টন চাল ও ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরী ভিত্তিতে আরো এক হাজার মেট্রিক টন জি আর চাল, ২০ লক্ষ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

এনএম/কেআই

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি