ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

কুয়োয় পড়া ব্যক্তি এবং মৌলভী, রাজনীতিক ও সাহায্যকর্মী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩

এক গ্রামে মেলা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের শোরগোল, আওয়াজ, হইচই। মেলার এক কোণায় একটি কুয়ো ছিল। এর চারপাশে কোনো দেয়াল ছিলো না। জনৈক ব্যক্তি মেলা দেখতে এসে আনন্দে হুঁশ হারিয়ে হঠাৎ পড়ে গেল সেই কুয়োতে। 

পড়েই চিৎকার করতে লাগলো- বাঁচাও! বাঁচাও! কিন্তু এত শোরগোলে তার আওয়াজ আর কে শোনে! কেউ আর আসে না।

এর মধ্যে এক মৌলভী এলেন সেই কুয়োর কাছে। তার পিপাসা পেয়েছিল। তিনি পানির জন্যে যে-ই কুয়োতে উঁকি দিলেন, অমনি লোকটির চিৎকার আর কান্না শুনতে পেলেন। সব শুনে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুমি কোনো পাপ করেছো! সে পাপেরই কর্মফল এটা। তোমাকে কর্মফল ভোগ করতে হবে। খামোখা চিৎকার করো না, পাপের বোঝা আরও বাড়বে। বরং ভাগ্যকে মেনে নাও।

লোকটি তখন চিৎকার করে বলল, আগে আমাকে বাঁচাও, তারপর তোমার ওয়াজ শুনবো। এ অবস্থায় কোনো ওয়াজ আমার মাথায় ঢুকবে না। সেই ধর্মাচারী ভাবলো, এই পাপিষ্ঠকে সাহায্য করে আমিও হয়তো পাপিষ্ঠ হয়ে যাব। সে তাড়াতাড়ি সরে পড়ল।

এর মধ্যে এক রাজনীতিক বুদ্ধিজীবী বা বিপ্লবী সেখানে এলেন। এসে কুয়োর ভেতরে ওই মুমূর্ষু লোকটিকে দেখলেন। তাকে দেখে কুয়োর লোকটি চিৎকার করে বলে উঠল, আমি মরে যাচ্ছি। কেউ আমাকে ওঠাচ্ছে না। আমাকে বাঁচাও। 

তখন ওই রাজনীতিক বললেন, সমাজবিজ্ঞানীরা ঠিকই বলেন- প্রত্যেকটি কূপের চারপাশে দেয়াল থাকতে হবে। তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমরা দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলব, সমাজকে বদলে দেবো। সরকারকে বাধ্য করবো প্রতিটি কূপের চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করতে, যাতে ভবিষ্যতে আর দেয়াল ছাড়া কোনো কূপ না থাকে। তুমি নিশ্চিত থাকো।

লোকটি চিৎকার করে উঠল, ততদিনে তো আমি মরে যাব! এতে আমার কী উপকার হবে! আমি তো কুয়োয় পড়ে আছি। রাজনীতিক তখন বললেন, এটা কোনো ব্যাপার না, ব্যক্তি কোনো বিষয় না। সমাজ হচ্ছে আসল। তুমি গভীর তৃপ্তির সঙ্গে মারা যেতে পারো- এই ভেবে যে, তোমার জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে কূপের চারপাশে দেয়াল নির্মাণের আন্দোলন শুরু হবে। ভবিষ্যতে আর কেউ কুয়োয় পড়ে মারা যাবে না।

সে হতাশ হয়ে ভাবলো, এখন তার কী হবে! কবে সরকার দেয়াল তুলবে আর ততদিনে সে মরে ভূত হয়ে যাবে! 

এরই মধ্যে এলো এক বিদেশি সাহায্য সংস্থার ত্রাণকর্মী বা এনজিও কর্মী। কুয়োর ভেতরে তাকিয়ে লোকটিকে দেখে সে কিছু বলার আগেই নিজের ব্যাগ খুলে সেখান থেকে রশি বের করল এবং একটা বালতি বেঁধে সেটা কুয়োর মধ্যে ফেলে দিল।

এদিকে, কুয়োর ভেতরের লোকটি চিৎকার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। ত্রাণকর্মীকে দেখে প্রথমে সে বিরক্ত বোধ করল। ভাবলো, আবার এসেছে একজন, এখন এর বক্তৃতা শুনতে হবে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলো লোকটি কিছু না বলে বালতি ফেলছে, তাকে উদ্ধার করার জন্য। 

ত্রাণকর্মী চিৎকার করে বলল, এটা ভালো করে ধরো। আমি তোমাকে টেনে তুলব, তোমার উঠতে হবে না, ওঠার কোনো চেষ্টাও করতে হবে না- বলেই ধীরে ধীরে ওপরে টেনে তুলল তাকে।

ওপরে ওঠার পর কৃতজ্ঞতায় লোকটি ওই এনজিও কর্মীর পায়ে একেবারে লুটিয়ে পড়লো- আপনি দেবতা, আমাকে বাঁচিয়েছেন, আপনার ঋণ আমি জীবনেও শোধ করতে পারবো না।

এনজিও কর্মী মনে মনে হাসলেন আর বললেন, আরে আহাম্মক! তুই কোনোদিন জানবিও না যে, এই কুয়োগুলো আমরাই এরকম করে রেখেছি। যাতে তোরা বংশানুক্রমে বার বার কুয়োয় পড়িস আর উদ্ধার করার নামে তোদের নিষ্কর্মা করে আমরা দেবতার আসনে বসে শোষণ করতে পারি। আর মেদভুঁড়ি বাড়াতে পারি।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি