ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের মৃত্যুদিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০১, ২৮ জুন ২০২১

অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতের কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এই বিপ্লবী নেতা ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন রাজধানী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তেভাগা আন্দলোনের ‘জনক’ হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তার নামে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুরের কৃষি কলেজ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এ উন্নীত হয়।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ ১৯০০ সালে দিনাজপুর জেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে শৈশবে লেখাপড়ার হাতেখড়ি হলেও সেতাবগঞ্জ থেকে প্রবেশিকা, রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ পাস করেন। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯৩২ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করে হাজী দানেশ দিনাজপুরে আইনব্যবসা শুরু করেন।

কৃষক, বর্গা চাষি, ভাগ চাষি, ক্রান্তি চাষিদের ওপর জমিদার ও জোতদারের সীমাহীন অত্যাচার দেখে শিশু বয়সেই মোহাম্মদ দানেশের মানসিক চিন্তায় বিপ্লব ঘটে। তিনি ছাত্র জীবনেই কৃষকের ওপর অত্যাচারের প্রতিকার কল্পে কৃষক আন্দোলনে আকৃষ্ট হন। হাজী দানেশ ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তার নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। আন্দোলনকালে তিনি কারাভোগও করেন। নীলফামারী জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। তিনি দু’কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন।

হাজী দানেশ তেভাগা আন্দোলনের নেতা হিসেবেই সমধিক পরিচিত। উত্তরবঙ্গই ছিল তেভাগা আন্দোলনের সুতিকাগার। উত্তরবঙ্গে এই আন্দোলনের উদ্ভব হওয়ার কারণ ছিল উত্তরবঙ্গ বরাবর জোতদার প্রধান তথা জোতদার শাসিত এলাকা। যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আন্দোলনকে সার্থকতার উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার মরণপণ সংগ্রাম করেন সেই নেতারা অধিকাংশই ছিলেন উত্তরবঙ্গবাসী। তাদের মধ্যে দিনাজপুরের হাজী মো. দানেশ, রিপন রায় (পার্বতীপুর থেকে), গুরুদাস তালুকদার, বরদা চক্রবর্তী, রূপনারায়ন রায়, হেলেকেতু সিং প্রমুখ বিপ্লবী নেতারা ছিলেন আন্দোলনের স্বাপ্নিক রূপকার।

তেভাগা আন্দোলনের সর্বাধিক ত্যাগী ও তেজস্বী নেতারূপে হাজী মো. দানেশের নামটি ‘প্রবাদ পুরুষে’ পরিণত হয়। বর্গাচাষিদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেন। 
তেভাগা আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্বে দাবি ছিল 
১। উৎপন্ন ফলের তিন ভাগের দু’ভাগ চাই। 
২। জমিতে চাষির দখল স্বত্ব দিতে হবে। 
৩। শতকরা সাড়ে বারো ভাগের বেশি অর্থাৎ মণকরা ধানের পাঁচ সেরের বেশি সুদ নেই। 
৪। হরেক রকমের আবোয়ারসহ বাজে কোনো কর আদায় করা চলবে না। 
৫। রশিদ ছাড়া কোনো আদায় নেই। 
৬। আবাদযোগ্য সব পতিত জমি আবাদ করতে হবে। 
৭। জোতদারের পরিবর্তে ভাগচাষিদের খোলানে ধান তুলতে হবে।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনে নেতৃত্বদানকারী যে ক’জন বরেণ্য ব্যক্তির নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তাদের মধ্যে হাজী মোহাম্মদ দানেশ অন্যতম। ঠাকুরগাঁও তথা বৃহত্তর দিনাজপুরের মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে আজীবন নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। 
সূত্র: সংগৃহীত
এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি