আবেদনের বাকি ৫ দিন
কৃষি ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি
প্রকাশিত : ১৩:২৫, ১৭ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২১:১৭, ১৮ আগস্ট ২০১৭
হালের ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড তরুণদের পছন্দের চাকরিগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টর শীর্ষে অবস্থান করছে। এর প্রধান কারণগুলো হলÑ ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশ রয়েছে। বেতন কাঠামো ইর্ষণীয়। বছরে বেশ কয়েকটি ইনসেনটিভ পাওয়া যায়, যা অন্য বহু প্রতিষ্ঠানে নেই। ব্যাংকারদের সামাজিক মর্যাদার পাশাপাশি রয়েছে চাকরি নিরাপত্তা এবং পেনশনের ব্যবস্থা। নিয়মমাফিক ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটি। রয়েছে হাউস লোন, কার লোনসহ নানা সুবিধা। মোটকথা কেউ ব্যাংকে চাকরি পেলে তার অর্থনেতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত। রাষ্ট্রায়ত্ব, বিশেষায়িত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রতি বছর প্রচুর জনবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। এবার নতুনদের স্বপ্নের-আকর্ষনীয় ব্যাংকিং ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহীরা যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আবেদন করতে পারেন। লুফে নিতে পারেন কৃষি ব্যাংকে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাÐে অবদান রাখার সুযোগ।
কতজন নিয়োগ
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কৃষি ব্যাংকে দুটি পদে মোট ৬৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ডাটা এন্ট্রি/ কন্ট্রোল অপারেটর পদে ৬৩ জনকে নেওয়া হবে। আর ইলেকট্রিশিয়ান পদে নেওয়া হবে একজন।
আবেদনের যোগ্যতা
উল্লিখিত পদ দুটোতে আবেদন করতে হলে প্রার্থীদের পৃথক পৃথক শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ডাটা এট্রি কিংবা কন্ট্রোল অপারেটর পদের জন্য চাওয়া হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পাস। কিন্তু এ পদে আবেদনের জন্য একাডেমিক শিক্ষার কোনো পর্যায়ের ফলাফলে ৩য় বিভাগ বা শ্রেণি বা সমমানের গ্রেড পয়েন্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যদিকে, ইলেকট্রিশিয়ান পদের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাস হলেই চলবে। তবে এ পদের জন্য থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ট্রেড কোর্স সার্টিফিকেট।
গ্রেডিং পদ্ধতিতে প্রকাশিত ফলাফলের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এসএসসি বা সমমান, এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৩ বা এর ওপরে পেলে প্রথম বিভাগ, দুই থেকে ৩ এর কম দ্বিতীয় বিভাগ এবং এক থেকে ২ এর কম তৃতীয় বিভাগ হিসেবে গণ্য হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্যানেল প্রস্তুতির নিমিত্তে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে বর্ণিত পদগুলোতে। তবে কৃষি ব্যাংকের অধিক্ষেত্রের প্রশাসনিক বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রার্থীগণ এই পদগুলোর জন্য আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া অন্য সব বিভাগের প্রার্থীগণ আবেদন করতে পারবেন।
বয়সসীমা
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উক্ত পদগুলোতে আবেদনের জন্য প্রার্থীর বয়স ৩১ জুলাই ২০১৭ তারিখে সর্বোচ্চ ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর পর্যন্ত হতে পারবে।
আবেদনের নিয়ম
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীদের বর্ণিত তারিখের মধ্যে শুধুমাত্র বিডিজবস লিমিটেড এর নিয়োগ সংক্রান্ত এই ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। আবেদনপত্রে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সংশ্লিষ্ট বোর্ড) কর্তৃক প্রকাশিত ফলাফলের তারিখ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সফলভাবে অনলাইনে আবেদন করার পর প্রাপ্ত ইউজার আইডিটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
ডেটলাইন
প্রার্থীদের আবেদন করতে হবে অনলাইনের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ২২ আগস্ট পর্যন্ত।
পরীক্ষা পদ্ধতি
অন্যান্য সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার মতো কৃষি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষাও প্রায় একই রকম। প্রার্থীদের প্রথমে এমসিকিউ পরীক্ষা দিতে হবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নেওয়া হবে লিখিত রচনামূলক পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ডাকা হবে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষায়। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, ডাটা এন্ট্রি কিংবা কন্ট্রোল অপারেটর পদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ডাটা এন্ট্রি অপারেশনে স্ট্যান্ডার্ড এপটিচ্যুড টেস্টে অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হবে।
ডকুমেন্ট
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রের অঢ়ঢ়ষরপধহঃং ঈড়ঢ়ু, স¤প্রতি তোলা ৪ (চার) কপি রঙিন পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে পাঠাতে হবে। স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রে প্রার্থী যেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সেই এলাকার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা পৌর মেয়র কিংবা কাউন্সিলর বা কমিশনার কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয়তা সনদপত্রের সত্যায়িত কপি, বিবাহিত নারী প্রার্থীর ক্ষেত্রে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার প্রেক্ষিতে ইস্যু করা নাগরিকত্ব বা জাতীয়তা সনদপত্রের সত্যায়িত কপি। বয়স প্রমাণের জন্য এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার মূল বা সাময়িক সনদের সত্যায়িত কপি। জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধনের সত্যায়িত কপি। বিদেশ থেকে অর্জিত ডিগ্রির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত সমমান সনদের সত্যায়িত কপি। প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতি-নাতনি হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ইস্যুকৃত সনদপত্রের সত্যায়িত কপি। উপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট, আনসার-ভিডিপি এবং এতিমখানা নিবাসী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি। এছাড়া চাকরিরত প্রার্থীগণ তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আবেদন করতে পারবেন।
বেতন-ভাতা
চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ হিসেবে ডাটা এন্ট্রি কিংবা কন্ট্রোল অপারেটর পদ এবং ইলেকট্রিশিয়ান উভয় পদের জন্য ৯৩০০ টাকা থেকে ২২ হাজার চারশত ৯০ টাকা স্কেলে বেতন পাবেন। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
প্রস্তুতি
এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা সাধারণত বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি), তথ্য-প্রযুক্তি, অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। বিগত বছরগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন অনুসরণ করলে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা যাবে।
কৃষি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে ভালো করে নেয়া যেতে পারে এ বিষয়ে ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা ব্যাংকটিতে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া তিনজন কর্মকর্তার। তারা জানান, সব রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সাধারণ একই আঙ্গিকে হয়ে থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে বহু নির্বাচনী পরীক্ষার বাংলা অংশে ব্যাকরণ এবং সাহিত্য থেকে প্রশ্ন করা হয়। সাহিত্যে কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী, সাহিত্যকর্ম, বিভিন্ন কবিতার চরণ, উপন্যাস বা গল্পের চরিত্র থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ব্যাকরণ অংশে আসে বাগধারা, এককথায় প্রকাশ, সন্ধিবিচ্ছেদ, সমাস, শব্দ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, সমার্থক, বিপরীতার্থক ও পারিভাষিক শব্দ। সমসাময়িক ইস্যূতে যাদের জানাশোনা ভাল তারা লিখিত পরীক্ষায় রচনায় ভালো করেন। তারা আরও জানান, যে অংক ভালো পারে, ব্যাংক চাকরি তার জন্য। নিয়োগ পরীক্ষায় সে অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকে। যেকোনো ব্যাংকের পরীক্ষায় ভাল করতে হলে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই আয়ত্তে থাকতে হবে। বিশেষ করে ঐকিক নিয়ম, শতকরা, পরিমাপ ও একক, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি ও পরিমিতি বিষয়ে। এ ছাড়া লসাগু-গসাগু, বর্গ, সরল, মাননির্ণয় ও জ্যামিতিক সূত্র ও সংজ্ঞা তো আছেই। আর সাধারণ জ্ঞানে ভালো করার জন্য দৈনিক পত্রিকা ও সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রস্তুতি সহায়িকা
বিসিএসের প্রস্তুতি সহায়ক বই ব্যাংকের পরীক্ষায় অনেক কাজে আসে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনীর ব্যাংক রিক্রুটমেন্ট গাইড দেখতে পারেন। আইবিএ-এমবিএ ভর্তি গাইড, জিম্যাট অফিশিয়াল গণিত ও ইংরেজি উভয় বিষয়ের প্রস্তুতির জন্য দেখতে পারেন। সাধারণ জ্ঞানের জন্য মাসিক তথ্যভিত্তিক পত্রিকা, তথ্যপ্রযুক্তির জন্য এইচএসসি পর্যায়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বই বেশ সহায়ক হতে পারে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিসিএস প্রস্তুতি সহায়ক বাজারে প্রচলিক যেকোনো একটি কোম্পানীর সাধারণ জ্ঞানের বই পড়লেই যথেষ্ট।
ব্যাংকার হওয়ার জন্য তৈরি করুণ নিজেকে
ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকের চাকরি মর্যাদাসম্পন্ন ও সুযোগ সুবিধা বাড়ায় প্রার্থীদের বাড়তি যোগ্যতাগুলোও পরখ করে দেখা হয়। তাই ব্যাংকার হওয়ার জন্য একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি যোগ্যতাও থাকা চাই। ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটাদাগে আবেদনকারীর বিষয়গত জ্ঞান কতটা গভীর তা যাচাই করা হয়ে থাকে। তার ফাংশনাল নলেজ খতিয়ে দেয়া হয়। ভাইবাতে প্রার্থীর জড়তা ও প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দ্বিধাদন্দ্ব নেগেটিভ মার্কিং করা হয়। এজন্য তার বাচনভঙ্গিও স্মার্ট হওয়া জরুরি। আÍবিশ্বাস থাকা চাই অটুট। এছাড়া প্রার্থীর কমিউনিকেশন স্কিল, ইংরেজি দক্ষতা, কম্পিউটারে পারদর্শিতা, সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব গুনাগুন, দায়িত্ববোধ, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা সর্বোপরি সত্যিই তিনি কাজটির জন্য উপযুক্ত কি না সে বিষয়গুলো যাচাই শেষেই চ‚ড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন