কৃষিশুমারিতে হবে যুগোপযোগি উন্নয়ন কৌশল: পরিকল্পনামন্ত্রী
প্রকাশিত : ২৩:৪৩, ৯ জুন ২০১৯
দশবছর পর দেশে কৃষিশুমারি শুরু হচ্ছে। এ শুমারি পরিচালনার মাধ্যমে কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির ব্যবহার, কৃষির প্রকার, শস্যের ধরণ, চাষ পদ্ধতি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর সংখ্যা, কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। এ ধরণের তথ্য কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বেঞ্চমার্ক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান পরিসংখ্যান ভবনের সামনে সাদা পায়রা ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে কৃষিশুমারি কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন। উদ্বোধনী ঘোষনার পর এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। “কৃষি শুমারি ২০১৮” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কৃষি শুমারি ২০১৯ এর বাস্তবায়নাধীন করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
৯ জুন হতে ২০ জুন, ২০১৯ খ্রি. সময়ে সমগ্র দেশে শহর ও পল্লি এলাকায় কৃষি শুমারির মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন, প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্মসচিব জাফর আহাম্মদ খান। র্যালিতে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আবহমানকাল থেকে বাঙালির প্রাত্যহিক জীবন জীবিকার পাশাপাশি কৃষি আমাদের সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবসহ নানা কারণে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কৃষিখাত উন্নয়নে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্থাৎ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব প্রদান করে কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সবোর্চ্চ বিবেচনায় নিয়ে রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, ৭ম পঞ্চবাষির্কী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ এবং অন্যান্য পরিকল্পনা দলিলের আলোকে বতর্মান সরকার সময়াবদ্ধ কমর্পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
কৃষিক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিক-নিদের্শনায় কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে দেশে কমর্সংস্থান সম্প্রসারিত হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান দশম। কৃষি খাতে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার প্রেক্ষিতে আমরা ইতোমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য টেকসই খাদ্য স্বয়ংসম্পূণর্তা অজর্ন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার মানোন্নয়নে উন্নয়ন পরিকল্পনা যথাযথ করার লক্ষ্যে এ বছর সরকার কৃষি শুমারি অনুষ্ঠান করছে। তিনি কৃষি শুমারি ২০১৯ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে মাঠ পর্যায়ে আসন্ন তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের সার্বিক সফলতা কামনা করেন এবং দেশবাসীকে সঠিক তথ্য প্রদান করে শুমারি কর্মীগণকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, কৃষি শুমারি ২০১৯ এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি খানা হতে কৃষি বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন খামারের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এ শুমারি পরিচালনার মাধ্যমে কৃষি খানার সংখ্যা, খানার আকার, ভূমির ব্যবহার, কৃষির প্রকার, শস্যের ধরণ, চাষ পদ্ধতি, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগীর সংখ্যা, কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত জনবল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। এ ধরণের তথ্য কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বেঞ্চমার্ক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণপূর্বক সারা দেশে শহর ও গ্রামে কৃষি শুমারি পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটাই দেশব্যাপী বৃহৎ আকারে পরিচালিত পরিসংখ্যানিক কার্যক্রম। প্রতি দশ বছর অন্তর কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সমগ্র দেশে শহর ও পল্লী এলাকার সকল খানায় কৃষি শুমারি অনুষ্ঠিত হয়। এ শুমারিতে Dejure পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রথমত দেশের শহর ও পল্লী এলাকায় একইসাথে একই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শুমারি শেষে প্রত্যেক গণনাকারী গণনা বই হতে একটি খানা তালিকা প্রস্তুত করবে। তালিকায় মোট পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ, হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ও মহিষ ইত্যাদির সংখ্যা এবং খানা মৎস্য চাষ/মৎস্য শিকারে নিয়োজিত কিনা এ বিষয়ক তথ্য থাকবে। শুমারি গণনা শেষে এ তালিকা হতে ঢাকা সদর দপ্তরে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খানার তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী ০৯-২০ জুন তথ্য সংগ্রহ শেষে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হবে এবং পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ও অনুষ্ঠানের সভাপতি সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপদান করার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” হিসেবে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সরকারের অঙ্গীকার “রূপকল্প-২০২১” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন বিবিএস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি শুমারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও কৌশল প্রণয়নে সহায়ক হবে এবং জনসাধারণের মাঝে এই শুমারির ফলাফল সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে পরিচালিত কৃষি শুমারি ২০১৯ সফলভাবে যথাসময়ে সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক কৃষি শুমারি ২০১৯ এর তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন এবং র্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য মন্ত্রী এবং সচিবকে ধন্যবাদ জানান। তিনি শুমারি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে একটি সুষ্ঠু ও নির্ভুল শুমারি পরিচালনার মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানান।
আরকে//
আরও পড়ুন