ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

কে এই নয়ন বন্ড?

প্রকাশিত : ১৪:০৩, ২ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৪:০৮, ২ জুলাই ২০১৯

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। আর প্রকাশ্যে স্বামীকে খুন করার সেই দৃশ্য দেখেছেন স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। দিনদুপুরে এভাবে খুন সিনেমার নৃশংসতাকে হার মানায়।

আজ মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে বরগুনার পুরাকাটার পায়ারা নদীর পাড়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন রিফাত হত্যার অন্যতম প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।

বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন এ খবর নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শটগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এএসপি শাজাহানসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ইতিমধ্যে নয়ন বন্ডের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু অনেকের কাছেই প্রশ্ন কে এই নয়ন বন্ড? কি তার পরিচয়? কিভাবে এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠল নয়ন? আসুন জেনে নেয়া যাক কে এই নয়ন বন্ড।

বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নয়ন বন্ড। নয়নের বাবা মৃত ছিদ্দিকুর রহমান। তার বড় ভাই মিরাজ সিঙ্গাপুর প্রবাসী।

নিহত নয়ন বন্ড ছিলেন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। ২০১৭ সালে বরগুনায় ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন ও দেশীয় অস্ত্রসহ নয়নকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেই মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসেন নয়ন বন্ড। আর জেল থেকেই বেরিয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।

পৌর শহরের বিকেবি রোডের শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগে মাদক সেবনের টাকা যোগাড় করার জন্য ছিঁচকে চুরি আর মোবাইল ছিনতাই করতেন নয়ন। ছিঁচকে চোর থেকে এক সময় তিনি হয়ে ওঠেন পেশাদার সন্ত্রাসী। একপর্যায়ে শুরু করেন হেরোইনের ব্যবসা। নিজ বাসায় মাদক সেবনের আখড়া বসান। চুরি আর ছিনতাই ছাড়াও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নিজ বাসায় মাদকসেবীদের মাদক সেবনের সুযোগও করে দিতেন নয়ন। মাদক সেবনের জন্য সেখানে যাওয়া-আসা করতেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। মাদক ব্যবসার পরিধি বাড়াতে তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন নয়ন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার।

দুই বছর আগে বরগুনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম নান্নাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেন নয়ন। এ ঘটনায় নান্না জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের কাছে বিচার দেন। তবে এ ঘটনায় তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ ছিল।

এরপর বাকিতে মালামাল বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় বিকেবি রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নয়া মিয়ার পা ভেঙে দিয়ে সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচনায় আসেন নয়ন। এর কিছুদিন পর নয়নকে তার বাসা থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের হেরোইন এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এই মামলায় কিছুদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নয়ন। এভাবেই বরগুনার ছিঁচকে চোর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম ওঠে নয়নের।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি উপস্থিতিতে একদল সন্ত্রাসী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল হালিম শরীফ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও, ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল মূলহোতা নয়ন বন্ড।

মঙ্গলবার ভোরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রিফাত হত্যার এই প্রধান আসামি। এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এই ঘটনার মূল আসামি রিফাত ফরাজী ও তার ছোট ভাই রিশান ফরাজীসহ অনেকে।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি