কে এই রাম রহিম
প্রকাশিত : ১৪:২১, ২৬ আগস্ট ২০১৭
ভারতের হরিয়ানায় আশ্রমের সেবিকা ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের অনুসারীদের বিক্ষোভ-সহিংসতায় ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ’ মানুষ।
এ সহিংসতা হরিয়ানা ছাড়িয়ে পাঞ্জাব ও দিল্লিতে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
কে এই ধর্মগুরু: তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক। তার মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের হাজারও ধর্মগুরুর মধ্যে বিরল।
বাবা রাম রহিম নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ডেরা সাচ্চা সওদা নামে যে আশ্রমের নেতৃত্ব দেন সেটি শিখ, হিন্দু, মুসলিমসহ সব ধর্মের চেতনার মিশেলে তৈরি। ভারতের গণমাধ্যমে তাকে বলা হয় ‘রকস্টার বাবা’।
ভারতীয় গণমাধ্যম অনুযায়ী রাম রহিমের হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে প্রায় পাঁচ লাখ সরাসরি ভক্ত রয়েছে। আর শিষ্যদের দাবি সারা বিশ্বে তার ছয় কোটি ভক্ত রয়েছে।
এর আগে ২০০২ সালে এক সাংবাদিক খুন এবং ২০১০ সালে ডেরার সাবেক ব্যবস্থাপক ফকির চাঁদকে হত্যায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দিলে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তার অনুসারীরা। ২০০৭ সালে শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
কথিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে শিষ্যদের যৌন ক্ষমতাহীন (নপুংসক) করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা রাম রহিমের জন্ম রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলার শ্রী গুরুসর মোদিয়া গ্রামে ১৯৬৭ সালের ১৫ আগস্ট। সেখানেই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন তিনি। রাম রহিম ডেরা সাচ্চা সওদার নেতৃত্বে আসেন ১৯৯০ সালে। হরিয়ানার সিরসায় ১৯৪৮ সালে এই ডেরা গড়ে তুলেছিলেন শাহ মস্তানা নামের এক ‘ধর্মগুরু’।
আশ্রম প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট, যেখানে রাম রহিম নিজেই গায়কের ভূমিকায় থাকেন। ‘ইউ আর মাই লাভ চার্জার’সহ তার বেশ কয়েকটি গান বেশ জনপ্রিয়। জাকজমকপূর্ণ পোশাক পরে গানের ভিডিওতে আসায় ‘রকস্টার বাবা’ বলেন অনেকে।
তিনটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন তিনি, এতে অভিনয়ও করেছেন। বিতর্কের পর সেগুলো কয়েকটি ভারতীয় ভাষায় মুক্তি পায়। হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ উত্তরপ্রদেশের অনেক এলাকার তরুণ-যুবক-নারীদের মধ্যে সেগুলো বেশ জনপ্রিয়। তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেখতে হাজার হাজার গাড়ির বহর নিয়ে এসে তার অনুসারীরা কয়েকবার দিল্লির কাছের গুরগাঁও অচল করে দেন।
তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ২০০২ সালে। আশ্রমের এক নারী সাধিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেনামী চিঠিতে ওই অভিযোগ করেন। ওই চিঠির ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তে সিবিআইকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ওই বছরই কথিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম।
২০০৭ সালে শুনানি শুরুর দশ বছরের মাথায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। শুক্রবার ২০০ গাড়ির বহর নিয়ে হরিয়ানার আদালতে আসেন রাম রহিম। রায় ঘোষণার পর প্রথমে তাকে হেলিকপ্টারে করে একটি গেস্ট হাউজ এবং সেখান থেকে বিশেষ কারাগারে নেওয়া হয়।
আনন্দবাজারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ৩৬ জন ব্যক্তি ‘জেড ক্যাটাগরির’ সুরক্ষা পান, তাদের একজন রাম রহিম। কথিত এই গুরুকে সব সময় ঘিরে থাকে তার সশস্ত্র ব্যক্তিগত রক্ষীদল। সোমবার রাম রহিমের বিরুদ্ধে সাত বছরের সাজা ঘোষণা করা হতে পারে। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
//আর//এআর
আরও পড়ুন