ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কেন কেটে নেওয়া হয়েছিল খনার জিব

প্রকাশিত : ১৮:৪৩, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ২০:৪৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

কখন কোন কাজ করলে ভালো হবে, কোন মাসে কোন ফসলের বীজ বপন করলে উত্তম হবে, কোন পরিস্থিতিতে ঝড়, তুফান, বন্যা হবে ইত্যাদি বিষয়ে বাস্তবসম্মত উপদেশ দিতেন খনা।

কথিত আছে খনা ছিলেন একজন বিদুষী নারী। তার নামে এখনও ছড়া-বচন প্রচলিত আছে গ্রামে গ্রামে মানুষের মুখে মুখে।বিদুষী এ নারীর জিব কেটে নিয়েছিলেন তার স্বামী ও শ্বশুর।

কিন্তু কেন? খনার এমন পরিণতি। আসুন জেনে নেওয়া যাক জিব কেটে নেওয়ার সে কারণ।

খনার শ্বশুর বরাহ কাজ করতেন বিক্রমাদিত্যের রাজ্যের রাজসভায়। খনার স্বামী মিহির একসময় পিতার সাথে রাজসভায় কাজে যোগ দেন এবং জ্যোতিষবিদ্যায় বুৎপত্তি লাভ করেন। একসময় তারা গণনায় একটি সমস্যা দেখা দেয়। কোনোভাবেই সে সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় এ সমস্যা সমাধান করে দেন লীলাবতী তথা খনা। সমাধান করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজার। এতে সভার পদ হারানোর সম্ভাবনা দেখেন শ্বশুর। একপর্যায়ে সম্ভবত খনার সাথে তার তর্কও হয়। একজন নারীর তর্কে না পেরে এবং রাজ সভাসদের পদ হারানোর ভয়ে পুত্রকে আদেশ দেন তার জিহ্বা কেটে নিতে, যেন আর কোনোদিন কথা বলতে না পারে।

স্বামী ও শ্বশুর মিলে তার জিহ্বা কেটে দিলে সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাতেই খনা মৃত্যুবরণ করেন।
কথিত আছে, জিহ্বা কেটে ফেলার আগে তিনি ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন তার কিছু কথা বলার আছে, কারণ জিহ্বা কেটে ফেললে সেগুলো আর বলা সম্ভব হবে না। তাকে অনুমতি দেয়া হলো। একজন সে কথাগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করলো কিংবা শ্রুতিতে ধরে রাখার চেষ্টা করলো। সেগুলোই পরবর্তীতে খনার বচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
খনার অনেকগুলো বচনের মাঝে কয়েটি উদাহরণ-
ষোল চাষে মুলা- তার অর্ধেক তুলা; তার অর্ধেক ধান-বিনা চাষে পান।

এটির মানে হলো ১৬টি চাষ দিয়ে মূলা বপন করলে ফলন পাওয়া যাবে ভালো। তুলা চাষ করতে হলে এর অর্ধেক চাষ অর্থাৎ ৮টি চাষ দিলেই হবে। ধান রোপণে এত চাষের প্রয়োজন নেই, মূলার অর্ধেক পরিমাণ অর্থাৎ ৪টি চাষ হলেই যথেষ্ট। অন্যদিকে পান উৎপাদন করলে কোনো চাষেরই প্রয়োজন নেই।

শীষ দেখে বিশ দিন- কাটতে মাড়তে দশ দিন। অর্থাৎ চাষি যখন তার ধানের গাছে শীষ দেখতে পাবে তার ঠিক ২০ দিন পরেই যেন সে ধান কেটে নেয়। শীষ বের হবার ২০ দিন পর ধান কাটার এবং মাড়াই করার উপযুক্ত সময়।

খনা সম্পর্কে টিকটিকি নিয়ে একটি ধারণা অনেকের আছে। সেটা হলো খনার জিব যখন কাটা হয়, ঘটনাক্রমে সে জিবের কর্তিত অংশ খেয়ে ফেলে একটি টিকটিকি। ফলে টিকটিকিটি খনার জ্ঞান লাভ করে। ভালো-মন্দ, সঠিক-বেঠিক, সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারে। জ্ঞান লাভ করলেও মানুষের মতো কথা তো আর বলতে পারে না। তাই মানুষের কোনো কথায় সত্যতা বা সঠিকতা পেলে তাতে সমর্থন দেয় টিক টিক টিক শব্দের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে ঐ টিকটিকির বংশধর বাড়তে থাকে এবং খনার জ্ঞান সম্পন্ন টিকটিকিতে দেশ ছেয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে যেসব টিকটিকি দেখতে পাই তার সবই সেই খনার জিব খাওয়া টিকটিকির বংশধর। তারা উপযুক্ত সময়ে টিক টিক শব্দের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় সত্যের সমর্থন।

একটি ধারণা অনুসারে খনার জন্ম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসতের দেউলি গ্রামে। সেখানে তার বাবার নাম অটনাচার্য। বাবার নাম কীভাবে এখন বেরিয়ে এলো? অটনাচার্যই যে তার বাবা এর শক্ত কোনো ভিত্তি নেই। শুধু খনার একটি বচনে তার উল্লেখ আছে বলে একেই তার বাবা বলে অনুমান করা হয়। বচনটি এরকম- “আমি অটনাচার্যের বেটি, গণতে গাঁথতে কারে বা আঁটি।”

এটি যদি তার পরিচয় হয়ে থাকে তাহলে এই ধারণা অনুসারে খনা বেড়ে উঠেছিল রাজা ধর্মকেতুর আমলে। সে এলাকায় মাটি খনন করে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় এগুলো রাজা ধর্মকেতুর রাজ্যে চন্দ্রকেতুর ধ্বংসাবশেষ। স্থানীয় লোকেরা এখানে একটি পাকা সমাধি বা ঢিবির মতো অংশ খুঁজে পান। তাদের ধারণা এটিই খনার সমাধি। এ ধারণা থেকে তারা একে ‘খনা-মিহির ঢিবি’ বলেও ডাকে।

তিনি কত আগে জীবনকাল অতিবাহিত করেছিলেন সেটি নিয়েও মতভেদ আছে। কেউ কেউ অনুমান করেন ৮০০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝে কোনো একসময়ে তার জীবনকাল ব্যাপ্ত ছিল। কিন্তু তার শ্বশুর হিসেবে যদি রাজ জ্যোতিষবিদ বরাহকে মেনে নেয়া হয় তাহলে বাধে আরেক বিপত্তি। কারণ বরাহের জীবনকাল ৫০৫ থেকে ৫৮৭ খ্রিস্টাব্দ। তারা যদি পুত্রবধূ-শ্বশুর সম্পর্কের হয়ে থাকে তাহলে তাদের জীবনকালের মাঝে ৩০০ বছরের ব্যবধান থাকবে না কোনোক্রমেই।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি