কেন দান করবেন?
প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ৩১ জানুয়ারি ২০২০
নিঃস্বার্থভাবে এই করতে পারার আরেক নামই দান বা সাদাকা। বোখারী শরীফের হাদীস হচ্ছে-সাদাকা বা দান করা প্রত্যেক বিশ্বাসীর কর্তব্য। যার আর্থিক সামর্থ্য নেই, তার জন্যে যে-কোনো সৎ কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে (নিজেকে বা অন্যকে) বিরত রাখাও দান বা সাদাকা।
এই সৎ কাজ কী কী হতে পারে তার কয়েকটি উদাহরণ তিরমিজী, মুসলিম এবং বোখারী শরীফের হাদীসে আছে-১. হাসিমুখে কথা বলা। ২. ভালো কাজে উৎসাহিত করা। ৩. কাউকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া। ৪. পথহারা মানুষকে পথ দেখানো। ৫. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া। ৬. কাউকে পানি ঢেলে খাওয়ানো। ৭. গাছ লাগানো। ৮. কোনো ব্যক্তিকে যানবাহনে ওঠাতে বা মাল ওঠাতে সাহায্য করা। ৯. সুন্দরভাবে কারো প্রশ্নের উত্তর দেয়া। ১০. মানুষের চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টিকারী কাঁটা, পাথর বা বাধা সরিয়ে ফেলাও সাদাকা।
এখানে যা যা দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো কোনো দুর্লভ বা মহামূল্যবান জিনিস নয়। আমাদের সবার মধ্যেই এগুলো দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। এগুলো কোনো হীরা জহরত বা কোহিনুর মনিও নয়। এগুলো দিতেও কোনো কষ্ট বা ঝুঁকি নেই। এই কয়টি মৌলিক সৎ কাজ ছাড়াও আরো আরো সৎকর্ম রয়েছে। আসলে কোনটি সৎ আর কোনটি অসৎ কর্ম তা বুঝতে শুধু নিজেকে একটি প্রশ্ন করলেই চলবে। সেটি হচ্ছে-এ কাজটি করলে, এ কথাটি বললে বা এ আচরণটি করলে আমি নিজের ও অন্যের কোনো কল্যাণ করতে পারব কিনা। যদি উত্তর হয় হ্যাঁ পারব, তবে অবশ্যই তা করব বা করার চেষ্টা অন্তত করব।
এমবিবিএস চিকিৎসক ও কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছে প্রথম ব্যাচের দু'ছাত্র! ২০১৪ থেকে নেয়া শুরু হয়েছে মেয়েশিশুদেরও। প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২৬ জনই মেয়ে। প্রাইমারি, হাই স্কুল, কলেজ এবং মেয়ে কোয়ান্টাদের আলাদা আবাসন ছাড়াও পাঠদানের জন্যে রয়েছে আলাদা আলাদা ক্লাসকক্ষ, ক্রীড়াশিক্ষা ভবন, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, কম্পিউটার ল্যাব ও মিলনায়তন! ২০১৬-২০১৯ সাল, পর পর চার বছরই ক্রীড়ানৈপুণ্যে দেশের সেরা স্কুল নির্বাচিত হয়েছে স্কুলটি। জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার স্কুলভিত্তিক যে-কোনো আসরে ‘কোয়ান্টাম কসমো স্কুল’ মানেই চমকপ্রদ ফল! স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় শিশুকিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজে ২০১৫ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর প্রথম স্থান লাভ করে আসছে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ!
কবি নজরুল লিখেছিলেন-ঊষর মেরুর ধূসর বুকে বিরাট যদি শহর গড়ো, একটি জীবন সফল করা তার চাইতে অনেক বড়। পরম করুণাময়ের অনুগ্রহে কোয়ান্টামের উদ্যোগে আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দান দিয়েই এই জীবনগুলো আলোকিত হচ্ছে। আমরা সেই দিনটির অপেক্ষা করছি যেদিন একটি শিশুও আর এতিম থাকবে না, না খেয়ে থাকবে না, ছেঁড়া কাপড় পড়বে না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। বরং তাদের আত্মিক অভিভাবক হবো আমরা। তাদের লালনপালন হবে কোয়ান্টামের ছায়ায়।
কেন আমরা আমাদের সাধ্য অনুসারে এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একটু হলেও অবদান রাখছি এতিম, দুস্থ, অসহায় মানুষের জীবনকে বদলানোর জন্যে? কারণ, মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ বলবেন-হে মানুষ! আমি অসুস্থ ছিলাম। কিন্তু তোমরা আমাকে দেখ নি। আমি অভুক্ত ছিলাম, কিন্তু তোমরা খাবার দাও নি। মানুষ বলবে-তুমি তো রোগ ও ক্ষুধা থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলবেন-অমুক অসুস্থ ছিল, কিন্তু তোমরা তাকে দেখ নি। অমুক অভুক্ত ছিল, তোমরা তাকে খাবার দাও নি। এই হাদীসটির মর্মই প্রতিফলিত হয় স্বামীজি বিবেকানন্দ-এর সেই বিখ্যাত উক্তির সাথে-জীবে দয়া করে যে-ই জন সে-ই জন সেবিছে ঈশ্বর। আসলে সকল ধর্মেই মানবসেবার মধ্য দিয়ে প্রভুকে পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ, মহাবিশ্বের সবকিছুই এক স্রষ্টার সৃষ্টি। তাঁর মহাশক্তির ক্ষুদ্রাংশ শক্তি জীবজগতের প্রত্যেকের মাঝে বিরাজমান। জীবের প্রতি ভালবাসা থাকলে, জীবকে প্রেম দিলেই প্রভুর প্রতি প্রেম ও ভালবাসা প্রকাশিত হতে পারে।
তাই আমরা দুহাতে মানুষের জন্যে করে যেতে চাই আর সবসময় আমরা প্রার্থনা করতে চাই এভাবে যে, হে করুণাময়..দুঃখীর দুঃখ দূর করা..অসুস্থকে নিরাময় দান করা..মজলুমের কষ্ট মোচন করা..অভাবকে প্রাচুর্যে রূপান্তরিত করা..মানুষের জীবনকে মমতায় ভরিয়ে দেয়া আর পরিপূর্ণভাবে নিজেকে চেনার সঠিক পথে আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাও..মহাজীবনের এই সহজ স্বাভাবিক ধারায়, মহামানবের পথে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি আমাকে দাও..আমার মেধাকে পুরোপুরি বিকশিত করো..আমার ভেতর সুপ্ত অনন্য মানুষকে ইনসানে কামেলকে জাগিয়ে দাও..হে করুণাময়..হে মহামহান..হে পরমসত্তা..আমি তোমার বিশ্বজনীন মহামমতা সৃজনশীলতা ও পরিপূর্ণতারই এক ক্ষুদ্র সংস্করণ..আমি মানুষ..আমি তোমারই প্রতিনিধি..আমি তোমাতেই সমর্পিত..আমায় ক্ষমা করো..আমায় কবুল করো..তোমার গুণাবলিতে আমায় ভূষিত করো..
প্রভুর গুণাবলিতে ভূষিত হওয়ার জন্যে সৃষ্টির সেবায় আমাদেরকে সাধ্যমতো অংশগ্রহণ করতে হবে। আমাদের যার যতটুকু সময়, শ্রম, মেধা আছে, যার যতটুকু আর্থিক সামর্থ্য আছে, তা নিয়েই আমরা শুরু করতে পারি।
আর এ কাজগুলো করতে গিয়ে সবসময় মনে মনে বলব-আমার দানের স্পৃহা বাড়ছে। আমি পৃথিবীকে দিতে এসেছি। মানুষকে দুহাতে দিয়ে যাব। তাহলেই দেখব, সৎদানের তৃপ্তি ও বরকত দুটোই আমরা লাভ করছি পরম করুণাময়ের অনুগ্রহে। অনেক ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে আলোচনা শোনার জন্যে।
দান করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের আমি যা দিয়েছি তা থেকে দান করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো রকম বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)
অত্র আয়াতের অর্থ হচ্ছে কোনো সামর্থ্যবান মানুষের মৃত্যু আসার আগেই তাকে মহান আল্লাহ দান করতে বলেছেন, যাতে সে গড়িমসি করে দান করতে ব্যর্থ না হয়। এর দ্বারা দান করা বিষয়টি যে কী গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায়!
দান সম্পদকে বৃদ্ধি করে: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন:
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।” (সূরা বাকারা-২৬১)
দান সম্পর্কে হাদিসে কী বলছে?
দান করার দ্বারা শুধু যে পরকালেই উপকার পাওয়া যাবে তা নয়, এর দ্বারা ইহকালেও উপকার পাওয়া যায়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘দান আল্লাহর অসন্তুষ্টি লাঘব করে এবং লাঞ্ছিত মৃত্যু (খারাপ মৃত্যু বা অপমৃত্যু) প্রতিরোধ করে।’ (তিরমিজি)। দান করা সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমরা দান করার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে, কেননা বিপদাপদ উহাকে (দানকে) অতিক্রম করতে পারে না।’ (মেশকাত শরিফ)।
ইতিহাসে দানের উপমা:
হযরত আবু বকর(রা) এর খেলাফতকালে এক দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়। খাদ্যদ্রব্য একেবারেই দুর্লভ হয়ে পড়ে এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরম আকার ধারণ করে।
সেই সময় হযরত উসমানের প্রায় এক হাজার মন গমের একটি চালান বিদেশ হতে মদীনায় পৌঁছলো। শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁর কাছে এল। তারা তাঁর সমস্ত গমের চালান ৫০% লাভে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিল। সেই সাথে তারা এও ওয়াদা করল যে, তারা দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্যই এটা কিনতে চেয়েছে।
হযরত ওসমান(রা) বললেন, “তোমরা যদি আমাকে এক হাজার গুণ লাভ দিতে পার, তবে আমি দিতে পারি। কেননা অন্য একজন আমাকে সাতশো গুণ লাভ দিতে চেয়েছেন।”
ব্যবসায়ীরা বললো, “বলেন কি? চালান মদীনায় আসার পর তো আমরাই প্রথম এলাম আপনার কাছে। সাতশো গুণ লাভের প্রস্তাব কে কখন দিলো?”
হযরত ওসমান বললেন, “এই প্রস্তাব আমি পেয়েছি আল্লাহর কাছ থেকে। আমি এই চালানের সমস্ত গম বিনামূল্যে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করবো। এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে সাতশো গুণ বেশি পূণ্য দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন।”
আরকে//