কোটা বাতিল নয়, সংস্কারেই সমাধান : মনজুরুল ইসলাম
প্রকাশিত : ১৮:৪০, ২১ মে ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২৩, ২৬ মে ২০১৮
অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেব সুপরিচিতি অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। প্রতিথযশা এ শিক্ষাবিদ শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবরর্তন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে আসছেন। যেগুলো জাতির জন্য দিশা হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমান শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং কোটা পদ্ধতির সংস্কার, চাকরিতে প্রবেশের বয়সীমাসহ সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জানতে সম্প্রতি একুশে টিভি অনলাইন মুখোমুখি হয় এ শিক্ষাবিদের। তিনি মনে করেন সংবিধান অনুসারে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখাটা যুক্তিসঙ্গত। কোটা বাতিল নয়, যুক্তিসঙ্গতভাবে সংস্কারে সমাধান নিহিত। সেক্ষেত্রে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে বড়জোর ২০ শতাংশ করা যেতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানের জন্য হলেও ৫ থেকে ৭ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ রুবেল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো-
একুশে টিভি অনলাইন: প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক মাস পেরিয়ে গেলে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নেমেছেন। পুরো বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম: আমি মনে করি কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা যাবে না। প্রশ্নটা হচ্ছে কি অবস্থায় কোটা থাকতে পারে তা নিয়ে। বর্তমানে যে অবস্থায় ৫৬ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে তা অযৌক্তিক। আমি মনে করি কোটা বাতিল নয়, সংস্কার করে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।
একুশে টিভি অনলাইন : সরকার তো কোটা বাতিলের কথা বলছে…
অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম : কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও কোটা বাতিল চাচ্ছে না। তারা সংস্কার চাচ্ছে। সরকার প্রধান কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সংবিধান সরকারকে আদিবাসীদের, অস্বচ্ছলদের এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। তাই তাদের জন্য কোটা রাখতে হবে। একই ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ৫ থেকে ৭ শতাংশ রাখতে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন : মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিদের কোটা সুবিধা দেওয়া নিয়ে সমালোচনা আছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম : মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা এমনিতেই অনেক মেধাবী। আমার জানা মতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনেকে এমনও আছেন যারা কোটার সুবিধা ভোগ করেন না। সুতরাং মুক্তিযোদ্ধা কোটার সঙ্গে মেধা বা অমেধার কোনো সম্পর্ক নাই। যারা এ নিয়ে কথা বলছেন তারা অহেতুক বিষয়টি নিয়ে বির্তক করছেন।
একুশে টিভি অনলাইন : অনেকেই বলছেন মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাতনিদের কোটা দেওয়ার কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। আপনার মত…
অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম : যেসব শিক্ষার্থী বিসিএস দিয়ে কোটায় চাকরি নিচ্ছেন তাদেরও ৪টি পরীক্ষায়-ই উর্ত্তীণ হতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা নাতি নাতনিরা এর ব্যাতিক্রম নন। সুতরাং এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এ বির্তক অবসানের জন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারে আলোচনায় বসা উচিত। তাদেরকে (কোটা আন্দোলনকারী) প্রতিপক্ষ ভাবলে চলবে না। তাদেরকে তরুণদের প্রতিনিধি ভাবতে হবে। মনে রাখতে তরুণরাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ।
আমি মনে করি কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের মোক্ষম সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সেই সুযোগের দরজাটি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাই আবারও বলছি এ সুযোগটি গ্রহণ করে আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ না বানিয়ে তাদের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় বসতে হবে। আন্দোলনকারীদেরও ভুল পথে হাটা ঠিক হবে না। দুই-য়ে মিলেই একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে তরুণরাই আগামীদিনের ভবিষ্যৎ।
একুশে টিভি অনলাইন: সর্বত্র উচ্চ শিক্ষার সনদের ছড়াছড়ি। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে সর্বোচ্চ সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও চাকরি পাচ্ছে না। এর পেছনে কারণ কি? সমাধান-ই কোথায় নিহিত?
অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম: বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে, কোচিং বাণিজ্য একটি বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যবস্থায় ভুড়ি ভুড়ি জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে। আবার সহজে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদও মিলছে। কিন্তু এই ব্যবস্থায় চাকুরী মিলছে না। বিপুল শিক্ষার্থী আজ বেকার। কেন চাকরি মিলছে না? এর কারণটা হচ্ছে আমরা এখনও পর্যন্ত উৎপাদন মুখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে পারি নি।
যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মদক্ষতার সমাহার করা সম্ভব হয়নি। ফলে যে প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে তারা সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা করে পারে না। শুধু তোতা পাখির মত মুখস্থ করে খাতায় লিখে দিতে পারে। জীবনে দক্ষতা বলতে যা বুঝায়, তার কিছু্ই অর্জন করতে পারছে না বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থায়। তাই শিক্ষিত প্রজন্ম মার খাচ্ছে চাকরির বাজারে। প্রভাব পড়ছে জাতীয় জীবনের উপর। এভাবে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বাস্তবতায় বেকার রোধে উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
একুশে টিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অধ্যাপক মনজুরুল ইসলাম : একুশে পরিবারের প্রতি শুভ কামনা।
/ এআর /
আরও পড়ুন