ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

কোটা সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রাখা যেতে পারে: আবু ইউসুফ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫৫, ১০ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১০:৩৫, ১২ জুন ২০১৮

অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ

অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ

বিসিএসসহ সব ধরণের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের একপর্যায়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দুই মাস পেরোলেও কোটার সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ফলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আশা-নিরাশার দোলাচলে কাটছে চাকরি প্রত্যাশী লাখো তরুণের সময়।

এ পরিস্থিতিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা, চাকরিতের প্রবেশের বয়সসীমা, গ্রাজুয়েশনের পরও চাকরির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, পাবলিক ও চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্ট্যাডিস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফের। কোটা পদ্ধতি ছাড়াও তাঁর কথায় উঠে এসেছে প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষা পদ্ধতি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা, কোচিং বাণিজ্য, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয়ে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি নিয়ে আপনার মত কি? কোটার সংস্কার আসলে কেমন হতে পারে?

আবু ইউসুফ: কোটার ব্যপারে প্রধানমন্ত্রী সংসদে একটা ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি একটি দেশের প্রধান, তিনি যেহেতু মুখ দিয়ে এটার ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন সেহেতু এটা হবে বলে আমি আশাবাদী। যদিও তিনি কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবুও আমি মনে করি এটা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রাখা যেতে পারে বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থে। প্রধানমন্ত্রী কথা বলার পর আর কিছু বলার নাই। এটা হবে এবং সরকার এ নিয়ে কাজ করছেন বলে আমার বিশ্বাস।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী কথা বলার পর আন্দোলনকারীরা প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষা করছে। কিন্তু আজও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এর জন্য আন্দোলনকারীরা সংশ্লিষ্ট আমলাদের অবহেলাকে দায়ী করছে। আপনিও কি তাই মনে করেন?

আবু ইউসুফ: কেউ তো আর সরকার প্রধানের ঊর্ধ্বে নয়। সরকার প্রধান যেহেতু বলেছেন এটা বাস্তবায়ন হবে। তবে অন্যদের বিলম্বের যে অভিযোগ উঠেছে তার জন্য আমি বলবো যদি কারো এটার ব্যপারে পিছুটান বা বিলম্ব করার মানসিকতা থাকে তারা লাভবান হতে পারবে না। কারণ এটা সংসদে রেকর্ডের এবং জাতির প্রতিনিধিদের সামনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোটা আন্দোলন চলাবস্থায় উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কিভাবে দেখছেন?

আবু ইউসুফ:  উপাচার্যের বাসভবনে যে হামলা হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শুধু উপাচার্য নয়, এমন ঘটনা কোন শিক্ষকের ক্ষেত্রেই মেনে নেওয়া যায় না।আমরা এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শস্তিও চাই।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিসিএসসহ সরকারি সব চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি উঠেছে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে। তাদের দাবি কতটা যৌক্তিক মনে করেন?

আবু ইউসুফ: সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার বিষয়টি একটু চিন্তা উচিত। যেহেতু গড় আয়ু বাড়ছে, অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। অন্যান্য দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আমাদের চেয়ে বেশি। তবে এটাও সত্য যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগের মতো সেশন জট নেই। যেমন-আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজট নেই। আমাদের ছাত্ররা কিন্তু চার বছরে বের হয়ে যাচ্ছে। এখন ছাত্ররা চাকরির জন্য প্রস্তুতির সময় পাচ্ছে অনেক। তাই শুধু সেশন জট বন্ধের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে আমি বলবো ৩০ বছর-ই যথেষ্ট। এক সময় অনেক সেশন জট ছিল। সে সময় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছিল।

এসবের পরেও সরকার যদি মনে করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর করবে, করতে পারে। তবে যেহেতু এখন প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে বের হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগিই বেকার। সেহেতু চাকরির বয়স বাড়ানোর চেয়ে কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সরকারি বিভিন্ন পরিক্ষায় প্রশ্নফাঁস ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। যা বন্ধে এরই মধ্যে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বশেষ পরীক্ষায় তেমন প্রশ্নফাঁসের খবর পাওয়া যায়নি। প্রশ্নফাঁস স্বমূলে উৎপাটন করতে করণীয়টা আসলে কি হতে পারে?    

আবু ইউসুফ: এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কিন্তু আমরা প্রশ্নফাঁসের কোনো অফিযোগ পাইনি। আমি মনে করি সরকার এখন এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে আছে। আমি মনে করি প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সরকারের জিরো টলারেন্স থাকাই দরকার। সেটা শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা যেই হোক সবার জন্য সরকারের জিরো টলারেন্স থাকা দরকার। আশা করছি এটা সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেটা কার্যকরি।এটা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অধিক মুনাফা করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিরেট সেবামুখী কিভাবে করা যায়?

আবু ইউসুফ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কাজ করে। আমাদের দেশে যে পরিমান বিশ্ববিদ্যালয়, আমি মনে করি এতো বিশ্ববিদ্যালয় দরকার নেই। এ জায়গাতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। যথাযথ তদারকির মাধ্যমে তাদের গাইডলাইন করলে এতো বেশি মুনাফা করার সুযোগ তারা পাবে না। শিক্ষার সেবা সবাই নিতে পারবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কোচিং বাণিজ্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মান নষ্ট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এটা বন্ধের পদক্ষেপটা কি হতে  পারে?

আবু ইউসুফ: আমি মনে করি কোচিং বাণিজ্য পুরোটাই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। একান্তই যদি কোচিং রাখতে হয়, তবে সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কারিকুলামের ভেতরেই রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেটা মূল শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েও প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক যুবককে বেকার থাকতে হচ্ছে। শিক্ষিত হয়েও কেন তাদের বেকার থাকতে হচ্ছে?

আবু ইউসুফ: আমরা যে প্রতিবছর হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে বের করছি এদের কতজনকে চাহিদা অনুযায়ী লেখা-পড়া করাতে পারছি? চাকরির বাজারে যে বিষয়ে দক্ষ ও শিক্ষিত লোক দরকার আমরা সে অনুযায়ী তাদের তৈরি করতে পারছি কি না। আমি মনে করি কর্মমুখী শিক্ষার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক একটা সংস্কার দরকার।

/ এআর /

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি