কোরআন একটি পথের নাম
প্রকাশিত : ২০:১১, ১৭ মে ২০১৯
সমগ্র কোরআন একটা কেন্দ্রবিন্দুর দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। সে কেন্দ্রবিন্দুটি হচ্ছে আল্লাহ। সমগ্র কোরআনের নির্যাস হচ্ছে সুরা ফাতেহা। যার শেষ দু’টি আয়াতে সঠিক পথে চালানোর জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। প্রার্থনা করা হচ্ছে ভুল পথে পরিচালনা না করার জন্য। আর সুরা বাকারার শুরুতেই বলা হচ্ছে কোরআন হচ্ছে মুত্তাকীদের জন্য পথ-নির্দেশ। সুতরাং কোরআন যে একটি পথের নাম সে কথা তো কোরআনই বলছে।
সে পথে চললে হয়তো একদিন তাঁর দেখা মিলবে কিন্তু মিলবেই এমন নিশ্চয়তা কোথায়? আল্লাহর প্রেম আর সেই পথে চলা এক নয়। পথে চললেই একজন প্রেমিক হবে এমন কথা কি বলা যায়? সেই জন্যই বলা হয় আল্লাহ ছাড়া আল্লাহ মেলে না। মানুষ নিজেকে চক্ষুষ্মান ভেবে অহংকার করে। ইন্দ্রয়গ্রাহ্য জগতে ছাড়া কিছু স্বীকার করে না। কিন্তু বহু জিনিস তার চোখের সামনে রয়েছে অথচ সে দেখতে পায় না।
কোরআনের আয়াতগুলোকে আল্লাহ চরণ বলেননি, বলেছেন আয়াত বা নিদর্শন। বলেছেন এই যে আকাশ, মাটি, বৃক্ষলতা, নক্ষত্র এ সবই তাঁর নিদর্শন। জ্ঞানীদের জন্য এতেই রয়েছে রহস্যের ইঙ্গিত। আমরা কিন্তু একবার ভেবেও দেখি না যে, আয়াতগুলো এক একটা জ্বলন্ত নিদর্শন যার একটা রূপ আছে। বৃক্ষলতার যেমন রূপ আছে এদেরও তেমনি রূপ আছে। এরা অদ্ভুত ভাষায় কথা বলে। কিন্তু আমাদের কানে তাঁর ভাষা পৌঁছায় না। আমরা এগুলোকে কালো কালো অক্ষরই মনে করি। ফলে যতটা সহজ পড়ি বা তেলাওয়াত করি, ঠিক ততটা সহজেই অমান্য করি। ঐ জীবন্ত নিদর্শনগুলোর সঙ্গে যদি আমাদের আত্মার আত্মীয়তা থাকতো তাহলে কিন্তু আমরা তাদের অস্বীকার করতাম না। আমাদের অনেকেরই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কটা ঐ কালো কালো অক্ষরের সঙ্গে সম্পর্কের মতই-আত্মার আত্মীয়তা নয়। ঐ বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে দেখ, সে এক স্পর্শাতীত পবিত্রতা নিয়ে তার কাজ করে যাচ্ছে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখি কি অদ্ভুত অলঙ্ঘনীয় নিয়মে সে পৃথিবীর জীব জগতের ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে। অক্সিজেন সরবারহ করছে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিচ্ছে। নিজ নিজ অর্পিত দায়িত্ব পালনই বৃক্ষ বা সমৃদ্রের জন্য আল্লাহর জিকর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ তার দায়িত্ব পালন করছে কিনা। না, সে করছে না। কারণ অন্যান্য আয়াতের মত সীমাবদ্ধ নয়। তাকে ইচ্ছার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে আর এখানেই মানুষ সরে এসেছে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে। তাঁর মধ্যে অনেকগুলো শক্তি আছে। যে শক্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে তার সঙ্গে অন্যান্য জীবনবিশিষ্ট পশুর কোন তফাৎ থাকে না। কিন্তু মানুষ পারে নিজ উৎসবমুখের কথা মনে রেখে প্রত্যাবর্তনের নৌকা সীমাহীন সাগরে ভাসিয়ে দিতে। এরা শুধু পথের সন্ধান করেই ক্ষান্ত নয়। এরা পথের মালিকের সন্ধান করে। কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা ইমানদার বলে দাবি করে তার অনেকই না চিনতে পারে পথকে, না চেনে পথের মালিককে।
আমাদের চোখের সামনেই তো রয়েছে ঐ সমস্ত ইমানদার ব্যক্তিরা। এদের সম্পর্কেই সুরা নিসার ১৫০ এবং ১৫১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণকে প্রত্যাখান করে এবং আল্লাহতে ইমান এবং রাসূলে ইমানের ব্যাপারে তারতম্য করতে চায় এবং বলে ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে প্রত্যাখান কর’ এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করতে চায়। এরাই হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কাফের এবং এদের জন্যই প্রস্তুত রেখেছি লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’
সূত্র : হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।
এমএস/