কোরবানির বাজার ধরতে ব্যস্ত শার্শার খামারিরা
প্রকাশিত : ১১:৩৬, ৯ জুন ২০২৪
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যশোরের শার্শায় দেশীয় পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার ছোট বড় এক হাজার ২৯৫ খামারী। তবে গত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় পশু সরবরাহ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত তারা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, বৈশ্বিক কারণে গো-খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এরপরও খামারিরা ঈদে ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পশু মোটাতাজাকরণ ও সরবরাহের জন্য তাদেরকে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর এবং পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
শার্শা-বেনাপোল সীমান্তপথে গেল কয়েক বছর ধরে ভারতীয় গরু পাচার বন্ধ রয়েছে। আর এ সুযোগে উন্নতজাতের দেশি গরু মোটাতাজাকরণে ভাগ্য বদলেছে সীমান্তবাসীর। এছাড়া এ এলাকায় ছোট-বড় এক হাজারের বেশি খামার গড়ে ওঠেছে। খামারিরা বলছেন, ঈদে এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবাদিপশু সরবরাহ করা হবে। এদিকে, অনেক গরু পাচারকারী যেমন খামার ব্যবসায় যুক্ত হয়ে ভাগ্য বদলেছেন তেমনি সীমান্তে উত্তেজনাও কমেছে।
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর যশোরের শার্শায় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। এবারের ঈদে উপজেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ১০ হাজার ৯৯৫টি। চাহিদার তুলনায় ৬ হাজার ১৪৭টি পশু বেশি রয়েছে। এরমধ্যে গরু রয়েছে চার হাজার দুটি, ছাগল ১৩ হাজার ১৪০টি। মোট পশু প্রস্তুত রয়েছে ১৭ হাজার ১৪২টি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে বেশ এগিয়ে। বিশেষ করে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় খামার স্থাপনের মাধ্যমে এ উপজেলায় গরু পালন বেড়েছে। ফলে সারা বছরের চাহিদা মেটাচ্ছে এসব খামারে হৃষ্টপুষ্ট গরু।
তবে কোরবানির বাজার ধরতে খামারিদের বাড়তি উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় এক হাজার ২৯৫টি ছোট-বড় খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে পালন করা হচ্ছে লক্ষাধিক গরু ও ছাগল। পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে ব্যক্তি পর্যায়েও হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে অনেক গরু। দিন-রাতের অবিরাম পরিচর্যা এবং প্রাকৃতিক ও সুষম খাদ্য দিয়ে মোটাতাজা করা গরু-ছাগল এখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত। তবে খামারিদের অভিযোগ, ঊর্ধ্বগতির বাজারে প্রাকৃতিক ও সুষম খাদ্য দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণে খরচ বেশি হয়েছে। ফলে সন্তোষজনক দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত তারা।
কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা গেছে, পাকা ফ্লোর ও ফ্যান। খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের দেশি খাদ্য। সার্বক্ষণিক চলছে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচর্যা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার অন্তত এক হাজারের বেশি খামারে এভাবেই আদর-যত্নে লালিত হচ্ছে গরু। ২৪ ঘণ্টা এমন পরিচর্যা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এসব খামারে বেড়ে ওঠা গরুগুলো হয়ে উঠছে হৃষ্টপুষ্ট ও সুন্দর।
শার্শার রুদ্রপুর গ্রামের ইবাদুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালে দুটি দেশি প্রজাতির ষাঁড় কিনে মোটাতাজা শুরু করেন। এখন বর্তমানে তার খামারে ৯টি ষাঁড় রয়েছে। বাড়িতেই ষাঁড়গুলো পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাহায্য সহযোগিতায় লালন পালন করে আসছেন। কোরবানির ঈদে গরুগুলো বিক্রি করবেন তিনি। কোনো অসাধু পন্থা অবলম্বন না করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে খড়, খৈল, ভূষি ও কাঁচা ঘাস খাইয়ে গরুগুলোকে মোটাতাজা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা খরচ একটু বেশি হলেও পশু কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে থাকে না।
বেনাপোলের পুটখালি গ্রামে নাসিরের খামারের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, আমাদের খামারে ১০০র বেশি গরু আছে, যার প্রায় সবকটি বিক্রি উপযোগী। এবার খরচ অনেক বেশি। দাম পাওয়া নিয়ে একটু চিন্তিত। তারপরও আশা করি, এবার কোরবানির পশুর হাটে ভালো দাম পাবো। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে গরুর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, ভিটামিন ও ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন। যা পশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বেনাপোলের বড়আঁচড়া গ্রামের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, আমার খামারে ২০০ গরু আছে। এবার ঈদে ৫০টি গরু বিক্রি করবো। প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি আমরাও নিয়মিত পরিচর্ষা করে থাকি।
সীমান্তবর্তী পুটখালীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার সরদার জানান, গরু পাচার বন্ধ হওয়ায় সীমান্তে উত্তেজনা কমেছে। পাশাপাশি খামার গড়ে এলাকার বেকার যুবকরা আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন।
শার্শা উপজেলা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, সীমান্তে গরুর খামার করে অনেকে এখন স্বাবলম্বী। শার্শায় আসন্ন কোরবানি ঈদে মোট পশুর চাহিদা রয়েছে ১০ হাজার ৯শ ৯৫টি। এর মধ্যে চাহিদার চেয়ে ৬ হাজার ১শ ৪৭টি বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে নিরাপদ মাংস সরবরাহের লক্ষে খামারিদের সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
এএইচ
আরও পড়ুন