কোরিয়ানরা এখন বুক ফুলিয়ে বলে ‘উরি নারা’
প্রকাশিত : ১৯:৪৭, ১১ আগস্ট ২০২০
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়।
আধুনিক, প্রগতিশীল দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৫০ এর দশকে বিশ্বের সবচেয়ে গরীব, নিরীহ, জরাজীর্ণ, যুদ্ধবিধস্ত, অশিক্ষিত, নিরক্ষর মানুষের দেশ ছিলো। তৎকালীন কোরিয়াকে অনেকেই আফ্রিকার দেশ চাঁদ বা কংগোর সঙ্গে তুলনা করতেন। কিন্তু সেই দেশটিই আজ বর্তমান বিশ্বের বর্ণময় মিরাকল। মিরাকলের মূল জীয়নকাঠি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। কয়েকবছর ধরে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের সেরা শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
গুগলে সার্চ দিলে দেখা যাবে, বিশ্বের এক হাজার র্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোরিয়ার ৩৫টি রয়েছে। ১৯৫৩ থেকে ২০২০ -এই ৬৭ বছরে কোরিয়ার পথচলা একেবারেই মিরাকলে মতো। কোরিয়া তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজিয়েছে প্রাণের বর্ণিল সাজে, জাতির বীজ রোপনের ধাপ হিসেবে। সকলেই জানে কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বখ্যাত ও গবেষণাপ্রসূত। বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থার র্যাংকিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান তাই নিয়মিত।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কাইস্ট, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইয়নসে ইউনিভার্সিটি, হংগিক ইউনিভার্সিটি -এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার আলো বিকিকিনি করছে গোটা কোরিয়া তথা বিশ্বজুড়ে। প্রকৌশল বিদ্যা আর গবেষণার মাধ্যমে নানা উদ্ভাবনে, উৎকর্ষে তারা প্রতিযোগিতা দিচ্ছে সমানতালে।
এই দেশের উচ্চশিক্ষার মান গবেষণার বহুমূখীতাই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত, নন্দিত। তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নত বিশ্বের ছাত্রছাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কোরিয়ার উচ্চশিক্ষার ময়দানে। কোরিয়ান পরিবারগুলোও তাদের সন্তানকে উচ্চ শিক্ষাদানে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে, সন্তান গঠন করার জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেয়। কোরিয়ান আমজনতার শিক্ষা শিক্ষণের উপরও রয়েছে অসীম-অপার আগ্রহ। শিক্ষা যেন তাদের রক্তের সাথে মিশ্রিত।
সত্যিকার অর্থে কোরিয়ানদের মধ্যে শিক্ষার এই প্রবল আগ্রহই সময়ের অংকনে অঙ্কিত করেছে। বিশ্বের উদারমনা প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থার সাথে মিল রেখে কোরিয়া তার ফোকাস নির্ধারণ করে এই পর্যায়ে এসেছে। মোট জনশক্তির শেখার আগ্রহ, রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের যুগোপযোগী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ফলে রাষ্ট্রের চিন্তকরা উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কার্ণিসে আত্মনিয়োগ করেছে।
এমনকি গত তিন দশকের মধ্যেই টেকনিক্যাল শিক্ষাখাতে কোরিয়া যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, ফেরত এসেছে তার কয়েক লাখ গুণে। তৈরী হয়েছে দক্ষ শ্রমিক। এরাই বিনির্মাণ করেছে আধুনিক কোরিয়া। পাশাপাশি জিডিপির ৪.৫% বিনিয়োগ করেছে গবেষণায়। যুগোপযোগী টেকনিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণায় এই শতাব্দীতে সেরা কোরিয়া।
লেখক
দেশকে উন্নত করতে, পর্যাপ্ত টেকনেশিয়ান তৈরী করতে বছরে ৫০ হাজার টেকনিশিয়ান তৈরীর জন্য প্রত্যেক প্রদেশে কমপক্ষে ১টি করে মোট ১১টি টেকনিক্যাল স্কুল তৈরী করেছে। যার ফলাফল পেতে কোরিয়ার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। তাইতো কোরিয়ানরা এখন গর্বে বুক ফুলিয়ে বলে, ‘উরি নারা’ অর্থাৎ ‘আমাদের দেশ’।
আজ তাই কোরিয়ানরা জাতি হিসেবে সফল। নিজেদেরকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে ও সফল শিক্ষা ব্যবস্থার পেছনে কাজ করেছে দেশটির সরকারের যুগসই পলিসি আর গণমানুষের শিক্ষাপীড়া।
লেখক: সাংবাদিক, দক্ষিণ কোরিয়া।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।