কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা শরীরের যে ক্ষতি করে
প্রকাশিত : ১০:৪২, ২২ আগস্ট ২০২০
শরীর গঠনে অন্যান্য উপাদানের মত চর্বি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোটি কোটি দেহকোষের প্রাচীর, বহুসংখ্যক হরমোনসহ অসংখ্য শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়া বিক্রিয়ার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হল এই চর্বি বা কোলেস্টেরল। প্রাণীর মস্তিস্কের প্রায় পুরোটাই এই কোলেস্টেরল দিয়ে তৈরি।
আমরা সবাই হৃদরোগ আর কোলেস্টেরল শব্দের সাথে কমবেশী পরিচিত। বলা যায়, এ দুটি শব্দ একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া আরেকটি প্রায় অসম্পূর্ণ। হৃদরোগ বা হার্টের যে কোন রোগের অন্যতম প্রধান কারণ দেহে কোলেস্টেরোলের আধিক্য, অত্যধিক দুশ্চিন্তা ও অতিমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ।
দেহে কোলেস্টেরোল আধিক্যে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশী। কোলেস্টেরোল এক প্রকার চর্বি জাতীয় পদার্থ, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা থাকে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ নানা ক্রিয়াকলাপে সহায়তা করে। কিন্তু যখনই এর মাত্রা বেড়ে যায় তখনই এটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
ডিমের কুসুম, যকৃত, মস্তিষ্ক, চর্বিযুক্ত মাংস, দুগ্ধ, চিংড়ি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরোল রয়েছে। সাধারণত মানবদেহে ১০০ মিঃলিঃ রক্তে ১৫০-২০০ মিঃলিঃ কোলেস্টেরল থাকে। রক্তে এই কোলেস্টেরোলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা ধীরে ধীরে হৃদরোগের সৃষ্টি করে। খাদ্যে কোলেস্টেরোলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এথেরোসক্লেরোসিস হয়। যার ফলে ধমনীর গাত্রে একরকম আঠরি সৃষ্টি হয় এবং ধমনীর পথ সরু হতে থাকে। কোলেস্টেরোল রক্তকে ভারি করে দেয় এবং কৌশিক জালিকার গায়ে জমা হয়ে নালীপথ সরু করে দেয়। ফলে সেই পথে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় এবং প্লাক তৈরী করে। এ কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হলে হ্নদযন্ত্রের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কার্য বন্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে।
কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা শরীরের যে ক্ষতি করে :
উচ্চ রক্ত–চাপ
সংকীর্ণ ধমনী-পথ রক্ত প্রবাহের স্বাভাবিক গতিতে বাধা দেয় ফলতঃ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। আপনার ধমনী-পথ যত বেশি সংকীর্ণ হয়, ততটাই বেশি পরিমাণে আপনার রক্তচাপ বেড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রধানত হৃদরোগের দিকে মোড় নিতে পারে।
এনজাইনা (বুকে ব্যথা)
হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালনে দায়ী ধমনীগুলিতে প্লেক-এর সংশ্লেষ হলে রক্তের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে পৌঁছন অক্সিজেনের পরিমাণ ক্রমে কমতে থাকে। এর ফলে বুকে ব্যথা হতে পারে, যেটি এনজাইনা নামেও পরিচিত। এটি করোনারি ধমনীর রোগের একটি লক্ষণ এবং এটি আপনাকে সূচিত করে যে আপনার হৃদরোগ হওয়ারও যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে।
হৃদপিন্ডে হঠাৎ রোগাক্রমণ
কোনোভাবে প্লেক ছিঁড়ে গেলে বা এটির কোনো অংশ ভেঙে গেলে, এটি রক্তের ডেলা গঠনের জন্য দায়ী হতে পারে, যা রক্তের প্রবাহকে আরও বেশি করে বাধা দিতে থাকে বা এমনকী আপনার ধমনীকে সম্পূর্ণভাবে ছিপি আটকানোর মতো রুদ্ধ করে দেয়। হৃদপিণ্ডের দিকে চলমান যে কোনো ধমনীর মধ্যে এমনটি ঘটলে তবে সেই অবস্থায় হৃদপিণ্ডে রোগাক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
পক্ষাঘাত
উপরের প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কে রক্ত-সরবরাহকারী ধমনীগুলির মধ্যে যে কোনো একটিতে ঘটলে, এতে পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে।
মস্তিষ্কে এর অন্যান্য প্রভাবসমূহ
উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল রক্তবাহী নালীগুলিতে ক্রমাগত জমে সৃষ্ট অবরুদ্ধ অবস্থার কারণে রক্ত প্রবাহে বাধা পড়তে থাকে, ফলতঃ পর্যাপ্ত রক্ত-সরবরাহ না হতে পেরে মস্তিষ্কে ঘটতে থাকা নানা মানসিক কাজ-কর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এমন অবস্থা চলতে থাকলে তা স্মৃতি-শক্তি হারান জনিত ক্ষতি বা এমনকী চলাফেরা করার শক্তি হারানর মতো ভয়ঙ্কর ক্ষতির দিকেও মোড় নিতে পারে।
যকৃতে এর প্রভাব
পিত্ত-রস তৈরিতে কোলেস্টেরল-এর উপস্থিতি অপরিহার্য, পিত্ত-রস হল যকৃত দ্বারা উৎপাদিত তরল যা পরিপাক ও হজমে সহায়তা করে। কিন্তু, আপনার পিত্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে, এটি আপনার গলব্লাডার-এ ক্রমাগত জমে অত্যন্ত বেদনাদায়ক গলস্টোন তৈরি হতে পারে।
আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা, আপনার বয়সোচিত স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখা, এবং সঠিক পদ্ধতি ও সাবধানতা অনুসরণ করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিলে তা আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা অনুকূল থাকা নিশ্চিত করবে।
এছাড়া-
- হৃদরোগ এথোরোসক্লেরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি দেখা হয়।
- এটি শরীরকে ভারি করে, ওজন এবং স্থূলতা বৃদ্ধি করে। ফলে যে কোন কাজ করতে কষ্ট হয়, শরীর একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠে, বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং মনে অশান্তি দেখা দেয়।
- দেহে কোলেস্টেরোলের আধিক্যের ফলে যেসব রোগ হয় তা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য সকলেরই কোলেস্টেরোল গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
এসএ/