২৮৩ বেসরকারি কলেজ
ক্যাডার অন্তর্ভূক্তির সুযোগ রেখেই জাতীয়করণ নীতিমালা
প্রকাশিত : ১৭:৫৫, ১২ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৫:০৭, ১৬ জুলাই ২০১৮
জাতীয়করণ হতে যাওয়া বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হতে পারবেন, আবার নন-ক্যাডার হিসেবেও থাকতে পারবেন। এই দুই ব্যবস্থা রেখেই নতুন আত্তীকরণ বিধিমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে ক্যাডার হওয়ার সুযোগ নিতে হলে শিক্ষকদের অবশ্যই যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।
জানা গেছে, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নির্ধারিত সময়ে একটা পরীক্ষা নেবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরাই কেবল ক্যাডারভুক্ত হতে পারবেন। আর বাকি শিক্ষকরা কলেজ জাতীয়করণ হলেও নন-ক্যাডার হিসেবে সরকারি সব সুবিধা ভোগ করবেন।
শিক্ষকদের ক্যাডার, নন-ক্যাডারের সুযোগের ভিত্তিতেই দেশের ২৮৩টি বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ করার আদেশ জারি করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে দুই বছর ধরে কলেজশিক্ষকদের মধ্যে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়ে যে দ্বন্দ্ব চলছে, সেটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তবে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি কলেজে (শিক্ষা ক্যাডার) চাকরি পাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয়করণ হওয়া কলেজশিক্ষকদের নন-ক্যাডারই করতে হবে। অন্যথায় তাঁরা মানবেন না।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, যেসব জেলা উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সেখানে একটি করে কলেজকে জাতীয়করণ পরিকল্পনা নিয়েছিলো সরকার। সে অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে কলেজেগুলোর তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। নানা জটিলতা পার করে মোট ২৮৩টি কলেজ জাতীয়করণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়।
ইতোমধ্যে এসব কলেজেগুলো নাম পরিবর্তন করে সরকারি নামে নামকরণও করা হয়েছে। এসব কলেজেগুলোতে মোট ৮ থেকে ১০ হাজার শিক্ষক আছেন। কিন্তু তাদের অবস্থান, মর্যাদা, বদলি ও পদোন্নতি কীভাবে হবে, তা দুই বছরেও ঠিক করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মূলত এ কারণেই জাতীয়করণের আদেশ জারি হচ্ছে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উল্লেখিত প্রস্তাব মানতে নারাজ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তাদের দাবি জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বেতন বোনাস সুবিধা চালু করা হোক। নতুবা কঠোর আন্দোলনের যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। পাশাপাশি এ নিয়ে মামলাও চলছে। এই অবস্থায় জাতীয়করণের তালিকায় থাকা কলেজগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরণের অনিশ্চয়তা কাজ করছে।
শুধু তাই নয় জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজগুলোতে অনেক দিন ধরে কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি করার সরকারি সিদ্ধন্তের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর প্রতিবাদে পাঠদান বন্ধ করে দিয়ে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। পাশাপাশি জাতীয়করণ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার হিসেবে আলাদা নীতিমালা তৈরির দাবি জানান তাঁরা। এরপরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় আত্তীকৃত বিধিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আই কে সেলিমুল্লাহ খন্দকার বলেন, নীতিমালা জারি করে জাতীয়করণ করতে হবে। বিধিমালায় অবশ্যই জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের ক্যাডারের বাইরে রাখতে হবে। যদি জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকদের পরীক্ষার মাধ্যমেও ক্যাডারভুক্ত করার সুযোগ রাখা হয়, তবে তা মেনে নেওয়া হবে না। নতুন করে তারা আবারও আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের বছরে দু’পক্ষের বিষয়টি মাথায় নিয়েই সরকার একটি সমাধানমূলক ও গ্রহণযোগ্য আত্তীকৃত নীতিমালা তৈরি করেছে। এ নীতিমালা পিএসসি থেকে চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আইনি কিছু শব্দগত পরিবর্তন করে গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের জন্য আত্তীকৃত বিধিমালায় সাধারণত নন-ক্যাডার হলেও এসব কলেজের প্রভাষকদের মধ্যে যাদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্যতা আছে, তাদের পিএসসির অধীনে আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর অধ্যক্ষ ও সহকারী অধ্যাপকদের বিষয়ে পিএসসির মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে পিএসসি থেকে কোনো মতামত দেওয়া হয়নি। তবে, অধ্যক্ষ ও সহকারী অধ্যাপকরা স্ব-স্ব পদে বহাল থাকবেন। কিন্তু তাদের মর্যাদা কী হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকরা এর আগেও ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সুযোগ পেতেন। যেহেতু নজির আছে, তাই সেই সুযোগ একেবারে বন্ধ করতে চাচ্ছে না সরকার। করলে জটিলতা ও মামলা-মোকদ্দমা বাড়বে। আবার সামনে জাতীয় নির্বাচন, জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজগুলো অধিকাংশই উপজেলা সদরে অবস্থিত। এসব কলেজের শিক্ষকদের অনেকেই স্থানীয়ভাবে পরিচিত, যাদের কেউ কেউ আবার রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এসব বিষয় চিন্তা করেই যোগ্যতা থাকা শিক্ষকদের পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডারে আসার সুযোগ রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান নিয়মে জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকরা ক্যাডারভুক্ত হলেও তাদের অবস্থান হবে সর্বশেষ বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিচে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠতা ও চাকরিকাল গণনায় পৃথক কিছু শর্ত রয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও জাতীয়করণ হওয়া শিক্ষকদের স্বার্থ বজায় রেখে আত্তীকরণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হবে। এরপর জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জাতীয়করণ হতে যাওয়া কলেজশিক্ষকদের অন্যতম নেতা প্রদীপ কুমার হালদার বলেন, আগে যেভাবে কলেজশিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করেছে সরকার, এবারও সেভাবেই হতে হবে। দ্রুত সরকারিকরণের আদেশ জারি করারও দাবি জানান তিনি।
এদিকে আত্তীকৃত নীতিমালায় পরীক্ষার মাধ্যমে জাতীয়করণ শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বিসিএস শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। অনেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় তুলছেন। বিসিএস ক্যাডারগুলোকে নিয়ে আবারও আন্দোলন নামার পরিকল্পনা করছেন তারা।
টিআর/ এআর