ক্যান্সার কেন বাড়ছে?
প্রকাশিত : ১২:২৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
বিশ্বজুড়েই ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতি পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজন আর প্রতি ছয়জন নারীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। এক্ষেত্রে জীবনযাপনের মানকেই বিবেচ্য হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।
চিন্তার বিষয় হচ্ছে- ক্যান্সার আক্রান্তে বিশ্বর মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোতে। যেখানে তালিকায় অনেক দেশের উপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। সেই হিসেবে প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার হচ্ছে দ্বিতীয় মারণব্যাধি রোগ। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্যান্সার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী মরণব্যাধি এই রোগে আক্রান্ত। যাদের অধিকাংশই থাকছে চিকিৎসার বাইরে।
বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যাই বেশি। তুলনামূলকভাবে এখানে নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কম। তবে দিন দিন এ ব্যবধান কমে আসছে। নারীরাও এখন অনেক বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে মুখ, ফুসফুস, ব্রেস্ট ও জরায়ু মুখের মতো ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি। বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিতে নারীদের স্তন ক্যান্সার। এছাড়া জরায়ু মুখ ও গল ব্লাডারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও যথেষ্টই।
গবেষকদের জরিপে উঠে এসেছে, বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ফুসফুসের ক্যান্সার। এছাড়া নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারও রয়েছে। তবে মেয়েদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ার কারণে তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হারও বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি, ডেনমার্ক, চীন এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে এ প্রবণতা বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের এক তথ্য মতে, নারীদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের হার বাড়ার বড় কারণ উশৃঙ্খল জীবনযাপন। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন অবাধে ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন করছেন। এছাড়া দেশের নারীদের একটি বড় অংশ পানের সঙ্গে জর্দা, সাদাপাতা বা এ ধরণের তামাকজাত খেয়ে থাকেন। এছাড়া বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অনিয়মিত খাবার বা ফ্যাটি খাবার খাওয়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বৃদ্ধির বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি।
সঠিক সময়ে ক্যান্সারের লক্ষণগুলো ধরতে না পারা বা চিকিৎসকের কাছে যেতে না পারায় বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রোগী মৃত্যুবরণ করে, যার সিংহভাগই ক্যান্সারজনিত কারণে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা অপ্রতুল। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবছর ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব। বাকি ২ লাখ রোগীর অধিকাংশই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের মধ্যে পড়ে অপচিকিৎসা বা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
ক্যান্সার কেন বাড়ছে :
অধিকাংশ ক্যান্সার কেন হয় তা এখনো জানা যায়নি। তবে কিছু কিছু কারণের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ক) বংশগত/জেনেটিক
বাবা, মা, খালা এদের মধ্যে থাকলে তাদের সন্তানদের হতে পারে বা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি যেমন ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার।
খ) ধূমপান
অতিরিক্ত ধূমপানে ফুসফুস, মুখ, গলা,প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার অন্যতম। অধিকমাত্রায় ধূমপান ও নেশাদ্রব্য গ্রহণের ফলে এটি বড়ছে।
গ) পান, জর্দা সাদা পাতা, গুল ইত্যাদি ওরাল ক্যান্সার বা জিহ্বার ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
ঘ) বিনাইন টিউমার বা ভালাবোলা টিউমার? অনেক দিন পর্যন্ত শরীরে থাকলে যে কোনো সময় ক্যান্সার হতে পারে। বেশির ভাগ কোলন ক্যান্সার এভাবেই হয়ে থাকে।
ঙ) রেডিয়েশন
কোনো জায়গায় রেডিয়েশন দিলে বা সূর্য রশ্মির ত্বকের ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। যেমন চেরনোবিল এবং জাপানের নাগাসাকির পারমাণবিক বিস্ফোরণের অনেক বছর পর এখনো সেখানে অনেকেই ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে।
চ) পাথর/স্টোন
যেমন কিডনি, পিত্তথলির পাথর ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
ছ) ক্রনিক ইনফেকশন
জরায়ুর সার্ভিক্স বা বোনের ক্রমিক ইনফেকশন থেকে জরায়ু ও বোনের ক্যান্সার হয়।
জ) রাসায়নিক বা কেমিক্যাল এজেন্ট
যেমন- এনিলিন ডাই মূত্রথলির ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
খাদ্যে ব্যবহৃত ফরমালিন এসিড/পচন রোধ পদার্থ স্টমাক বা পাকস্থলীর ক্যান্সার করে চুলের কলব স্ক্রিন/ত্বকের ক্যান্সার করে।
অতিরিক্ত ওজন :
গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত ওজনে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। বডি মাস ইনডেক্স যদি ৪০-এর বেশি হয়, তবে সাবধান। ফ্যাট সেলগুলি শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যাতে করে বাড়ে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। অতিরিক্ত ওজন কমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা ও সুস্থ জীবনচর্যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি :
ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি স্কিন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। খুব চড়া রোদ এড়িয়ে চললেই ভাল। আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশে রোদ্দুরে শুয়ে বডি ট্যানিং-এর শখ থাকলেও, এড়িয়ে চলুন।
এছাড়াও যে কারণগুলো রোগটির জন্য দায়ি তা হচ্ছে-
- দৌড়-ঝাঁপ ছাড়া থিতু জীবন
- বসে বসে কাজ
- ভুল খাদ্যাভ্যাস
- চিনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলেও ঝুঁকি থাকে।
এসএ/