ক্যান্সারে দেশে বছরে মৃত্যু এক লাখ ২০ হাজার মানুষের
প্রকাশিত : ০৯:০৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১০:২৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ক্রমশ মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় ক্যান্সার। চিকিৎসা ব্যয়বহুল, কিন্তু সফলতার হার খুবই কম। দেশে বছরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় প্রায় দেড় লাখ মানুষ, যার এক লাখ ২০ হাজারের মতো রোগীর মৃত্যু ঘটে। সেভাবে গড়ে ওঠেনি চিকিৎসা সুবিধা ও অবকাঠামোও। এই বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।
চিকিৎসা ও সেবায় ঘাটতি এবং রোগীর কষ্ট কমানোর বার্তায় এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’।
আলোকচিত্রী শামসেদ সাদিয়া। এই হাতে চিত্রিত হয়েছে হাজারো মানুষ-প্রকৃতি। ছবি তুলতে ছুটে বেড়িয়েছেন পথে প্রান্তরে। প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরা জীবন এখন আঁধারে ভরা সাদিয়ার। শরীরে বাসা বেধেছে, ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার।
শামসেদ সাদিয়া বলেন, “চিকিৎসক বুঝতে পারছেন না যে সিস্ট কোন দিক দিয়ে গেছে, টিউবার কোন দিক দিয়ে গেছে। একাকার অবস্থা পেটের। ব্লাড টেস্টের যেটা ৩৫’র নীচে থাকতে হয় সেটা আমার ১৮শ’। তখন আমি নিশ্চিত হলাম এটা ক্যান্সার।”
ঘরবন্দি একসময়ের মুক্তবিহঙ্গ। যখন সব কিছু জানা গেলো, তখন ঢের দেরি হয়ে গেছে।
সাদিয়া বলেন, “চিকিৎসকের কথায় মনে হলো খারাপ অবস্থায় আছি।”
সাদিয়ার মতোই হাজারো মানুষ এই রোগের ভুক্তভোগী।
সঠিক সময়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসায় সুফল মেলে। দেরি হলে ভোগান্তি বাড়ে, সুস্থতার হার কমে। হয় মুত্যুর কারণও। প্রতিষেধক উদ্ভাবনে খুব বেশি সফল হয়নি চিকিৎসাবিজ্ঞানও।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখের মতো নতুন নতুন রোগী শনাক্ত হয় ক্যান্সারে।”
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি সভাপতি ডা. আবদুল হাই বলেন, “এর কিছু ধরন রয়েছে যার চিকিৎসা এখন পর্যন্ত জানা নেই। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায় তখন হাতে বাইরে চলে যায়।”
গবেষকরা জানাচ্ছেন, পান-জর্দাসহ ধূমপান, সবজি ফলমূল ও আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া, শারীরিক স্থুলতা, আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্স-রে রেডিয়েশনসহ কিছু ভাইরাসের সংক্রমণে এই রোগ হতে পারে। পান, জর্দা, ধূমপানসহ মদ্যপান, মাদক গ্রহণের মতো অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনও এর কারণ।
অধ্যাপক ডা. নিজামুল হক বলেন, “আমরা এখন ফার্স্টফুডের প্রতি ঝুঁকে পড়েছি। স্মোকিং ফুড অর্থাৎ আগুনে পুড়িয়ে খাবার খাই। এই খাবারগুলো পাকস্থিলির ক্যান্সার বা অন্ত্রনালীর যেসব ক্যান্সার আছে এগুলোর জন্য মূলত দায়ী। কর্মের মধ্যে যদি আমাদের শরীরকে রাখা যায় তাতে ইমিউনিটি বৃদ্ধি হয়। এই ইমিউনিটির মাধ্যমে শরীরে অনেক ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ডা. আবদুল হাই বলেন, “ক্যান্সার নিয়ে কোনো কথাবার্তা রোগীর সঙ্গে আলাপ করা যাবেনা। যতদূর সম্ভব তার টেনশন দূর করতে হবে।”
ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোল-ইউআইসিসি বলছে, বছরে বিশ্বে ৯৬ লাখ মানুষ এই রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে ঝুঁকির মাত্রা তুলনামূলক অনেক বেশি।
দেশে ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য রোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠেনি। সরকারি পর্যায়ে যৎসামান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও তাতেও আছে হাজারও ভোগান্তি। বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসায় সর্বশান্ত হয়ে যায় পুরো পরিবার। এমন রোগ যাতে কারোর শরীরে বাসা না বাধে তার জন্য স্বাস্থ্য সম্মত জীবন সবাইকে ধারণ করতে হবে। আর আক্রান্ত পরিবার যাতে অসহায় বোধ না করে তার জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে পরম মমতায়।
এএইচ