ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ক্রেতাজোটের হঠকারিতায় আইনের দ্বারস্থ গার্মেন্টস মালিকরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৫, ১৬ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২০:২০, ১৭ আগস্ট ২০১৭

পোশাক শিল্প কারখানা পরিদর্শনে কর্মরত ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের হঠকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন কারখানা মালিকরা। মালিকদের অভিযোগ খোড়া যুক্তি দেখিয়ে ক্রেতাজোট দুটি এ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে মালিক পক্ষ বড় ধরণের ক্ষতিতে পড়েছেন। যদিও জোট দুটির ব্যবসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট দায়ের করে এরই মধ্যে কেউ কেউ স্থগিতাদেশও পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি টঙ্গির বিএইচআইএফ অ্যাপারেলের সঙ্গে ব্যবসা ছিন্ন করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অ্যালায়েন্স। এটি চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে কারখানাটি। সম্প্রতি আদালত ব্যবসা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দুই মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এর পর অ্যালায়েন্সের ওয়েবসাইটে স্থগিতাদেশের তালিকা থেকে ওই কারখানার নাম সরিয়ে নেওয়া হয়।

 চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপের একাধিক পোশাক কারখানার সঙ্গেও এমন ঘটনায় রিট হয়েছে। সূত্র জানায়, কারখানাটি অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বায়ারদের পোশাক তৈরি করে। অ্যালায়েন্স কারখানাটিতে সংস্কার কাজ দেখভাল করলেও সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ব্যবসা বাতিলের ঘোষণা দেয় অ্যাকর্ড। এর পর কারখানা মালিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আজ এ বিষয়ে শুনানি হবে বলে রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট জাফরুল হাসান শরিফ গণমাধ্যমকে জানান।

 আরো বেশ কয়েকজন কারখানা মালিক অ্যাকর্ড কিংবা অ্যালায়েন্সের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর লিবার্টি ফ্যাশন নামে একটি কারখানার ইউরোপীয় ক্রেতারা কারখানা ভবনটি পাকিস্তানের একটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরীক্ষা করায়। তখনো অ্যাকর্ডের জন্ম হয়নি। পরীক্ষা করে কারখানাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটির। কিন্তু মালিকপক্ষ দাবি করে আসছিলেন, কারখানাটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কারখানাটি ফের পরীক্ষা করার জন্য অ্যাকর্ডকে অনুরোধ জানানোর পরও কাজ হয়নি। পরবর্তীতে আদালতে যায় লিবার্টি কর্তৃপক্ষ। আদালত অ্যাকর্ডকে কারখানাটি পরীক্ষার নির্দেশ দেন। গত কয়েক মাস আগে অ্যাকর্ড ওই কারখানা ভবনের কাঠামো পরীক্ষা করে। পরীক্ষায় কারখানাটি ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে প্রমাণ হয়। অথচ প্রথম প্রতিবেদনের কারণে বড় আকারের এ কারখানাটির সঙ্গে ব্যবসা করতে আসেনি কোনো বায়ার। ফলে ক্ষতি গুণতে হয় কোটি কোটি টাকার। এখন কারখানা কর্তৃপক্ষ ব্র্যান্ড ও অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

 আদালতে রিটের বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েস বলেন, কমপ্লায়েন্সের ঘাটতির কারণে অ্যাকর্ডভুক্ত ব্র্যান্ডের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণায় কিছু কারখানা মালিক আদালতে রিট দায়ের করেছেন। বিষয়টি আদালত পর্যায়ে থাকায় তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

 উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যে সব কারখানায় অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের ব্র্যান্ড রয়েছে - এমন কারখানার সংস্কার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মূলত সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটি পক্ষ তদারক করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিলে অন্য পক্ষ তা মানার কথা। কিন্তু এটি মানা হচ্ছে না। তবে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ড কিংবা অ্যালায়েন্সের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আদালতে যাওয়া কারখানা মালিকদের ব্যক্তিগত বিষয়। এটি বিজিএমইএ’র কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

 অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স প্রায় দুই হাজার দুইশ’ কারখানার সংস্কার দেখভাল করছে। এর মধ্যে অ্যাকর্ড এক হাজার ছয়শ’ ও অ্যালায়েন্সের অধীনে ছিল প্রায় ছয়শ’ কারখানা। ইতিমধ্যে উভয় জোট ২৪৮টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসা বাতিল করেছে। অ্যালায়েন্স ছয়শ’ কারখানার মধ্যে ১৫৭টির সঙ্গে ব্যবসা বাতিল করেছে। আর অ্যকর্ড বাতিল করেছে ৯১টির সঙ্গে।

আরকে/ডব্লিউএন

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি