ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ৩৫ দিন, অনিশ্চয়তায় নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

নোবিপ্রবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১৫:০৬, ৫ নভেম্বর ২০২০

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নিয়োগ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ৩৫তম দিন অতিবাহিত হলেও কোনও সমাধান মেলেনি। শিক্ষক সমিতির অনির্দিষ্টকালের এমন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে শিক্ষা জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দেয়। এর পরের দিন থেকে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখেন তারা। এর আগে একই দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও আল্টিমেটাম দিয়ে কোনও সমাধানে যেতে না পারায় এ কর্মসূচির ডাক দেন শিক্ষক নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ওয়াহিদুজ্জামান-এর সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল নোবিপ্রবির সব পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই স্থগিতাদেশের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সে আদেশ তুলে নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকট চললেও নতুন করে নিয়োগ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কোনও পদোন্নতি পায়নি অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষক। অথচ, তাদের পরে স্থায়ী পদে নিয়োগপ্রাপ্তরাও পদোন্নতি পেয়ে গেছেন। ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন অস্থায়ী শিক্ষকরা।

শিক্ষক সমিতির মতে, এসবের সমাধান চেয়ে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো দিদার-উল-আলমের কাছে গেলে উনি শুধুই আশ্বাস দেন। তবে এর কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি। এরফলে অস্থায়ী শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পুনঃরায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে সহায়তা করবে বলেই আশা করছে শিক্ষক সমিতি।

এদিকে, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে একমাসেরও বেশি সময় ধরে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করছে না কোনও মহলই। বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এ কারণে আরও পিছিয়ে পড়ছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। তাদের মতে, মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টির অভাবে উপাচার্যের মন্ত্রণালয় থেকে সমাধান আনতে না পারা এবং শিক্ষক সমিতি কর্তৃক সমাধানের দিকে চেয়ে থাকা তাদের চরম ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রেখে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম আরও পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুল হাসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, শিক্ষকদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষকরা যেখানে আমাদেরকে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে তৈরি করছেন, তারা কী একটুও চিন্তা করছেন না যে, আমরা কতোটা পিছিয়ে যাচ্ছি?

এই বিরুপ পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম আমার মতে অত্যন্ত ফলপ্রসু আমাদের জন্য, যা চালিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর আমরা তাদের থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। সেশন জটের অভিশাপ কী তাহলে এবার আমরা ভোগ করতে যাচ্ছি? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়ররা কী তাহলে আমাদের সাথেই বা আমাদেরও আগে বের হচ্ছে? আর বেকারত্বের অভিশাপটাও যেন আরও প্রবলভাবে ডাকছে আমাদের।

শুধু এই শিক্ষার্থীই নয়, বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- নিজেদের শিক্ষা কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন তারা। তারা চান, দায়িত্বশীল মহল থেকে তাদের পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত আসুক।

এ ব্যাপারে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন,
গতকাল শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। 

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবহেলা আর শিক্ষকদের দাবীর কারণে শিক্ষার্থীরা কেন এটার ভুক্তভোগী হবে- এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে আমরা তাদের যেই ক্ষতিটুকু হয়েছে এটা পুষিয়ে দিবো।

এ ব্যাপারে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো দিদার-উল-আলম বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম থেকে দূরে থাকায় এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে অফিসে ফিরলে নোবিপ্রবির নিয়োগ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি