খাবার স্যালাইনের ৫০ বছর
প্রকাশিত : ১৫:১৪, ২১ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১২:৩১, ২২ এপ্রিল ২০১৮
প্রায় পাঁচ কোটি শিশুর প্রাণ রক্ষা করেছে খাওয়ার স্যালাইন। এর গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রয়োগ-সবই হয়েছে বাংলাদেশে। মূল গবেষণা করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা।
ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি চিকিৎসা উপকরণ খাওয়ার স্যালাইন। শুধু ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ নয়, গরমে ঘাম ঝরলে বা কায়িক পরিশ্রমের পর অনেকেই নিয়মিত স্যালাইন খান। দোকানিরা জানাচ্ছেন, গরম বাড়ছে। তাই তাদের বিক্রিও বাড়ছে।
সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) ১৯৮৫ সাল থেকে খাওয়ার স্যালাইন বা ওআরএস (ওয়াল রিহাইড্রেশন সল্যুশন) বাজারজাত করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ ডায়রিয়া। প্রতিবছর ৫ লাখ ২৫ হাজার শিশুর এতে মৃত্যু হচ্ছে। কারণ ডায়রিয়া হলে পায়খানার সঙ্গে পানি দ্রুত বের হয়ে যায়। ওআরএস সেই পানি প্রতিস্থাপন করে। এটি এ পর্যন্ত প্রায় ৫ কোটি শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে।
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। আশির দশকে এ রোগে মৃত্যুর হার ছিল অধিক। এ মৃত্যুহার কমাতে স্বল্প ব্যয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফের সহায়তায় ১৯৭০ সালে খাবার স্যালাইন প্যাকেট উৎপাদন ও বিতরণ শুরু করে। পরে ১৯৯১ সালে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধীনে খাবার স্যালাইন উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু হয়।
গত শতকের ষাটের দশকে কলেরা গবেষণার জন্য রাজধানীর মহাখালীতে কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি (সিআরএল, বর্তমান আইসিডিডিআরবি) স্থাপন করা হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা এখানে কাজ শুরু করেন। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশি গবেষকরা।
১৯৬৮ সালে মাঠপর্যায়ে ওআরএসের কার্যকারিতা নিয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় চাঁদপুর ও ঢাকায়। এর মূল গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ডেভিড আর লেনিন ও রিচার্ড এ ক্যাস। ওই গবেষণার সঙ্গে রিসার্চ ফেলো হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী রফিকুল ইসলাম ও মজিদ মোল্লা। তাদের গবেষণার ফলাফল নিয়ে ১৯৬৮ সালের আগস্টে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট-এ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, এই দ্রবণের উপাদানগুলো সস্তা ও সহজপ্রাপ্য। এরপর থেকে আইসিডিডিআরবির মহাখালীর কলেরা হাসপাতালে ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা দূর করতে ওআরএস ব্যবহার শুরু হয়।
তবে ওআরএস আবিষ্কার একক কোনও বিজ্ঞানীর কৃতত্বে হয়নি। গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা তৈরি হওয়ার অনেক অনেক দিন ধরে কাজ করা হয়েছে। অবশেষে চূড়ান্ত রূপটা এসেছে ১৯৬৭-৬৮ সালে। আর স্যালাইন প্যাকেটজাত করার কাজটি ১৯৮১ সাল থেকে শুরু প্রথম শুরু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
একে// এআর