খালেদা জিয়ার মুক্তি চান না বিএনপি?
প্রকাশিত : ২৩:২৩, ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৯
খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় থেকে সরে আসছে বিএনপি। তার মুক্তিকে তারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করতে চায়। গত কয়েক মাস ধরে তারা মাঠ গরম করলেও এখন সে বিষয়ে নেতারা নিশ্চুপ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি পাঠালেও তাতে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনও বক্তব্য নেই।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৫ (ক) অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলো সংসদে বা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেন। যেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনও কথা নেই।
রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে চিঠিটি দলের দুই যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে হস্তান্তর করেন।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বদেশ রায় বলেন, বিএনপি বলছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কি চুক্তি হয়েছে সে বিষয়ে তারা ওই চিঠিতে জানতে চেয়েছে। চুক্তিগুলো হয়েছে খোলামেলাভাবেই, কোনও গোপন চুক্তি নয়। এগুলো সবাই জানে, গণমাধ্যমেও এসেছে। তারা জানার চেষ্টা করলে সহজেই জানতে পারবে। এখন তারা যেটা বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে, তাতে বিভ্রান্তি সৃস্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট পথ দেখাতে পারে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে এখানে তাদের একটা বক্তব্য থাকতে পারতো। পাশাপাশি অন্য বিষয় আসতে পারতো। কিন্তু বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য দিয়ে কোনও পথ দেখানো যায় না। বিএনপির উচিৎ সোজা পথে আসা। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং রাজনৈতিক ইস্যুগুলো কিভাবে আসবে সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে, তার সহোযোগিতা চেয়েছে। এটা সত্য। তবে এটা প্রধানমন্ত্রীর বিষয় নয়, এটা আদালতের বিষয়। আদালতই ঠিক করবে খালেদা জিয়ার মুক্তি কখন হবে। তবুও এ চিঠিতে সেটা থাকলে ভালো হতো।
বিএনপি তাদের চিঠিতে ভারতের সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে সেটা জানতে চেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা দেশের সংবিধান অনুযায়ী (১৪৫-এর ক), যে কোনও চুক্তি হলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়। রাষ্ট্রপতিই সেটা সংসদে পেশ করবেন, আর দেশের জনগণ সে বিষয়ে জানতে পারবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে সেটা পেশ করা হয়েছে কিনা বিএনপি তা জানেনা। আমিও জানিনা, বিএনপি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে কিনা।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা আগেও বহুবার বলেছি, তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো দেয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশতঃ। আমরা চাই, তিনি জামিনেই মুক্তি পান। তার যে অসুস্থতা, তাতে তার প্রাণ রক্ষার জন্য এখন মুক্ত পরিবেশ দরকার। আমরা চাই, সরকার যেন বিচারকার্যে হস্তক্ষেপ না করে।
চিঠিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, যে চিঠিটা দেয়া হয়েছে তা রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনেই। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তো দেশের প্রতিটি জায়গাতেই প্রতিদিন প্রতিবাদ হচ্ছে। এটা নিয়ে আলাদা করে সরকারের কাছে চিঠি দেয়ার কিছুই নেই।
উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এটি বিএনপি মহাসচিবের লেখা প্রথম চিঠি। এই চিঠিতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি বিএনপির মহাসচিব বলেননি। বিএনপি তার সমস্ত বক্তৃতা বিবৃতিতে বারবার বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তাদের কাছে প্রধান ইস্যু। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দীর্ঘ চিঠিতে কোথাও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নেই।
প্রসঙ্গত, এদিন (১৭ নভেম্বর) সকালে বিএনপি নেতৃদ্বয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া তাদের অভ্যর্থনা জানান এবং আপ্যায়িত করেন। এ সময় তিনি বিএনপি নেতৃদ্বয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কুশলাদি বিনিময় করেন।
চিঠিটি গ্রহণ করে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আমি আপনাদের চিঠি গ্রহণ করলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারি সফরে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পরে আপনাদের চিঠিটি পৌঁছে দেব।"
এসময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার এবং প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম. এম. ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।
এনএস/এসি
আরও পড়ুন