ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

খুনের দায়ে হাতির ফাঁসি!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৪, ২ মার্চ ২০২০

খুনের অপরাধে মানুষের ফাঁসি হয়েছে এমন ভুঁড়িভুঁড়ি ঘটনা রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এরকম বিচারব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কোন জীবজন্তুর ফাঁসি হয়েছে, এমন কথা কী কখনও জেনেছেন? তবে আজ জানুন, এরকম একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ১শ’ বছর আগে মাহুতকে হত্যার দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল একটি হাতিকে।

১৯১৬ সালে পৃথিবীর সার্কাস ইতিহাসে বিরলতম এই ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার অঙ্গরাজ্য টেনেসির এরউইন শহরে।   মাহুতকে খুনের অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয় সে সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্কাসের অন্যতম আকর্ষণ ‘মেরি’ নামের একটি হাতিকে। আজও সেই অপরাধ বোধ যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে মার্কিন ওই শহরটির প্রতিটি বাসিন্দাকে। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে সার্কাসে খেলা দেখাতেন শুরু করেন চার্লি স্পাইকস। এই সময় চার্লির বাবা চার বছর বয়সী ছোট্ট মেরি নামের হাতিটিকে কিনে আনেন। অল্প কয়েক দিনের মেরির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় চার্লির। বছর খানেকের মধ্যে চার্লি আলাদা একটি সার্কাস তৈরি করেন। সেটির নাম ছিল স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো। 

এই সার্কাসে খেলা দেখাতে শুরু করে মেরি। দেখতে দেখতে স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো-এর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে মেরি। নাম বদলে গিয়ে মেরি তখন ‘বিগ মেরি’ হয়ে যায়। মেরি ছিল অত্যন্ত বুদ্ধিমতি এশীয় প্রজাতির বিশালাকার হাতি। মেরির দেখভালের জন্য একজন মাহুত ছিল বটে, তবে চার্লির কথাই বেশি মানতো সে।

স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো এবং মেরির বুদ্ধিদীপ্ত কলা-কুশলের খবর দ্রুত আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ভার্জিনিয়ায় খেলা দেখানোর ডাক পায় স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো। ভার্জিনিয়ায় যাওয়ার আগেই কোনও এক অজানা কারণে মেরির পুরনো মাহুত কাজ ছেড়ে চলে যায়। 

মাহুত ছাড়াই সার্কাসের দল পৌঁছায় ভার্জিনিয়ায়। ভার্জিনিয়ার সেইন্ট পল এলাকায় তাঁবু পড়ে স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো-এর। এই সময় মেরির মাহুত হওয়ার জন্য তার ট্রেইনার পল জ্যাকোবের কাছে আবেদন জানান স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মচারী ওয়াল্টার রেড এলড্রিজ। নাছোড় এলড্রিজের আবদার রেখে চার্লি তাঁকে হাতির দেখভালের দায়িত্বে নিয়োগ করেন। এলড্রিজকে হাতি দেখভালের যাবতীয় নিয়ম-কানুন শিখিয়ে দেওয়া হয়।

১৯১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খেলা দেখানোর দিন নতুন মাহুত এলড্রিজকে হয়তো মেনে নিতে পারেনি মেরি। ফলে খেলা দেখানোর সময় এলড্রিজের নির্দেশেও তেমনভাবে সাড়া দিচ্ছিল না সে। তাই মেরির মাথায় রডের খোঁচা দিয়ে বাগে আনার চেষ্টা চালায় এলড্রিজ। আর এতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলে মেরি। 

এলড্রিজকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে আঁছাড় মারে মেরি। পা দিয়ে পিষে দেয় এলড্রিজের মাথা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এলড্রিজের। চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে আতঙ্কে সার্কাসের তাঁবু ছেড়ে পালিয়ে যান দর্শকরা।

এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু হয়ে যায় মেরিকে নিয়ে। মেরির মালিক চার্লি সকলকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, সে দিনের ঘটনায় দোষ মেরির নয়, এলড্রিজের। কিন্তু চার্লির কথা তখন কেউ শুনতে রাজি হয়নি। শহরের বেশিরভাগ মানুষ একজোটে মেরিকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়ার সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। 

অবশেষে ওই ঘটনার পরেরদিন মেরির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেন নিয়ে আসা হল। ক্রেনের শেকল শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হল মেরির গলার সঙ্গে। নির্দেশ পেতেই একটানে মেরিকে মাটি থেকে প্রায় বিশ ফুট উপরে ঝুলিয়ে দিল ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেনটি। 

কিন্তু ক্রেনের শিকল ছিঁড়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে প্রায় ৫ টন ওজনের মেরি। মেরুদণ্ড ভাঙল, পাঁজর ভাঙল, গলার কাছে চামড়া-মাংস ছিড়ে রক্ত পড়তে লাগল। কিন্তু তাতেও শান্ত হল না কয়েকশ’ মানুষ। গলায় শেকল বেঁধে ফের মেরিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। ছটফট করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মেরি।

এখন ওই শহরের মানুষরাই মেরিকে স্মরণ করে প্রতিবছর বিশেষ তহবিল গড়ে হাতির দেখভালের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করছে। এ সবের মধ্যে দিয়ে এরউইন শহরের বর্তমান নাগরিকরা যেন ১০০ বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষের করা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইছে। 

সূত্র: জি নিউজ

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি