খুলনায় এসআই শাহআলমের ৭ বছরের কারাদণ্ড
প্রকাশিত : ১৪:২৭, ২৩ মার্চ ২০২৫

খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় মিল্কি আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসানের বাসার নিখোঁজ গৃহকর্মী সীমা হত্যার নাটক সাজিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ হয়রানির অভিযোগে কেএমপি’র বরখাস্তকৃত উপপরিদর্শক মো. শাহ আলমকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ৭ হাজার টাকা জরিমানার রায় দিয়েছে আদালত।
রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে খুলনার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মিল্কিওয়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন ২০০৯ সালে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ওলিয়ার রহমানের নয় বছরের মেয়ে সীমাকে তাদের বাসার কাজের জন্য নিয়ে আসে। দীর্ঘদিন কাজ করার পর সীমা ওই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়।
নিখোঁজের ঘটনায় সীমার মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে গৃহকর্তা মাসুদ হাসান, মোহাম্মদ আলী খোন্দকার ও মো. মাসুদ শেখকে আসামি করে ২০১২ সালের ৭ মে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই শাহ আলম ওই পরিবারটির কাছে তিন লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু উৎকোচ দিতে রাজি না হওয়ায় এসআই শাহ আলম নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘হত্যা নাটক’ সাজান।
পরবর্তীতে ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলার একটি খাল থেকে বস্তাবন্দী ২৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী একটি অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশকে যাচাই বাছাই না করে সীমা হিসেবে সনাক্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালান।
তদন্ত কার্যক্রমে এই পুলিশ কর্মকর্তা গৃহস্বামী ও তার স্ত্রীকে অভিযুক্ত করেন।
২০১২ সালের ৯-১৫ নভেম্বর সাপ্তাহিক বর্তমান দিনকাল পত্রিকায় ‘শিল্পপতির লালসার শিকার গৃহকর্মী সীমা’ শিরোনামের সংবাদ পড়ে অ্যাডভাকেট কামরুজ্জামান ভূইয়া আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সীমাকে ফেরত দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেন।
২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আদালত সীমাকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন। আদালত ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন। গৃহকর্মী সীমা হত্যা নাটক ও জীবিত উদ্ধার ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে এসআই মো. শাহআলমের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন (যার নং ২২)। মামলাটি তদন্তকালে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
চার্জগঠনকালে আদালতের বিচারক উল্লেখ করেন, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসদাচরণের মাধ্যমে দাবিকৃত ঘুষ ও মানুষকে মামলায় ফাাঁসনোর অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৬১/১৬৬/১৬৭/৪২০ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামী এসআই মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হল।
সর্বশেষ গত বছরের ৩১ আগস্ট খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন (নং-১৭০)। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ২০১২ সালের ৭ মে দায়েরকৃত নারী ও শিশু-২৫৭/১২ নম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে খালিশপুর থানার তৎকালীন এসআই শাহ আলম নগদ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ ছাড়াও মাসুদ হাসানের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু ওই টাকা না পেয়ে কাজের মেয়ে সীমা হত্যার কল্পকাহিনী তৈরি করে মাসুদ হাসান দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেন।
গ্রেপ্তারের সময় মাসুদ হাসানের ছয় মাসের পুত্র সন্তান ছিল। যার বয়স এখন চার বছর। কথিত অপহরণ মামলায় মাসুদ হাসানের নাম উল্লেখ থাকলেও তার স্ত্রীর নাম ছিল না। তারপরেও শিশু সন্তানের সামনে থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেই এসআই শাহ আলম দ্রুত সাংবাদিকদের ডেকে ছবি তুলে তাদেরকে আসামি হিসেবে আদালতে পাঠান। এরপর ডুমুরিয়ার একটি অজ্ঞাতনামা লাশ নিয়েই তৈরি করা হয় সীমা হত্যার ‘কল্পকাহিনী’।
দুদকের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, বরখাস্তকৃত এসআই শাহ আলম অপহরণ মামলা তদন্তকালে জনৈক মাজেদা বেগম ও দিপালী সরকারকে দিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধি মিথ্যা সাক্ষের উদ্ভাবনের মাধ্যমে ১৬৪ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বক্তব্য প্রদানের ব্যবস্থা করেন। অথচ তারা দুজনই সীমাকে চেনেন না বলে তদন্তকালে প্রমাণ মেলে।
এএইচ
আরও পড়ুন