ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

গণপিটুনিতে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৩৬, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১২:৪৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

রাজশাহীতে সরকার পতনের দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলা অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন।

শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এরা হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মো. সনি ও মো. কটা। মাসুদের বাড়ি নগরীর মতিহার থানার বিনোপুর এবং সানি ও কটার বাড়ি পঞ্চবটী এলাকায়। সনি দিনমজুরের কাজ করেন আর কটা ভ্যানচালক।

জানা গেছে, এক দশক আগে দুর্বৃত্তদের হামলায় পা হারান আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। তখন তার হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। এবার গণপিটুনিতে প্রাণই হারিয়েছেন তিনি। 

শনিবার দিবাগত রাতে বিনোদপুর বাজারে হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে তিনি মারা যান।

নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে রাতে বিনোদপুর বাজারে মাসুদের ওপর হামলা হয়। পরে একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু মতিহার থানায় ৫ আগস্টের সহিংসতার কোনো মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়, যেন তাকে কোনো সহিংসতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’ 

ওসি বলেন, ‘গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মাসুদ। তার শারীরিক অবস্থা দেখে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। এখন পরিবার চাইলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এতে মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাম পা-ও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল হাতের রগ। একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা ওই হামলা চালায়। 

বোয়ালিয়া থানা হাজতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদ পুলিশকে জানায়, ‘আমি বিনোদপুরে ওষুধ নিতে এসেছিলাম। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। কিন্তু আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে। রগ-টগ সব কাটা। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি।’ 

মাসুদকে যখন আনা হয়, তখন বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলাসহ এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দুই যুবককে ধরে থানায় এনেছিলেন তিনি। থানায় তিনিও মাসুদকে দেখেন। 

মাসুদের মৃত্যুর খবর শুনে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা যে দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যেই আহত অবস্থায় একজনকে আনতে দেখলাম। কিন্তু কারা তাকে এনেছিল তা চিনতে পারিনি। পুলিশের এটা ভালোভাবে দেখা উচিত ছিল।’ 

জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর কন্যা সন্তানের বাবা হন মাসুদ।

এদিকে, রাজশাহীতে সরকার পতনের দিন ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলা ও এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে দুই যুবককে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শনিবার সন্ধ্যায় তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আটক দুজন ছাত্রলীগের কর্মী। ৫ আগস্ট তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিলেন। আটক দুজন ধর্ষণ ও হত্যার কথা তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে আটক দুজনের দাবি, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। মারের চোটে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার জানান, ৫ আগস্ট তারা শুনেছিলেন, দুপুরে এক ছাত্রীকে মিছিল থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের পর লাশ পদ্মায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু কোনোভাবেই তারা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। গুজব মনে করেছিলেন। 

শনিবার দুপুরে তারা খবর পান, রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে একজন আটক হয়েছেন, যিনি ৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সনিকে পান। তখন সনি ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কটাকে খুঁজে পান।

বিকেল পাঁচটার দিকে নগরের আলুপট্টি পদ্মার পাড় এলাকায় অভিযুক্ত কটাকে খুঁজে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা তাকে ধরতে গেলে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নদীতে সাঁতরে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন তাকে পিটুনি দেন। পরে তাকে উদ্ধার করে সন্ধ্যায় বোয়ালিয়া থানায় আনা হয়।

বোয়ালিয়া থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, ৫ আগস্ট এমন কোনো ঘটনা এলাকায় ঘটেছে কি না, তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে কোনো অভিভাবকও কিছু জানাননি। রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি