গণমাধ্যমকে যেসব সমস্যায় ফেলছে কপি-কাট-পেস্ট
প্রকাশিত : ১২:১৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
কপি, কাট ও পেস্ট এখন বহুল প্রচলিত শব্দ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে মিডিয়া পাড়ায় এ শব্দটি জানে না এমন কেউ নেই।
যারা এখন দৈনিক পত্রিকা বের করার স্বপ্ন দেখেন অথবা যারা নিয়মিত বিরতিতে বের করছেন তাদের জানা হয়ে গেছে পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে এখন আর তেমন একটা দক্ষ জনবলের দরকার হয় না। এক্ষেত্রে শুধু একজন অভিজ্ঞ কম্পিউটার অপারেটর থাকলেই হয়।
আমার জানা মতে, বরিশালের অনেক দৈনিক পত্রিকায় বার্তা সম্পাদকের চেয়ে একজন কম্পিউটার অপারেটরের বেতন অনেক অনেক বেশি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মূল্যায়নও অনেক বেশি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, পত্রিকা বের করতে একজন কম্পিউটার অপারেটর বর্তমান সময়ে অনেক ভূমিকা পালন করে। আগে যেখানে একজন কম্পিউটার অপারেটরের একটি পত্রিকায় কাজ করে বাড়ি ফিরতে রাত দুইটা তিনটা বেজে যেত, এখন সেই অপারেটর একসঙ্গে তিনটা পত্রিকায় কাজ করে রাত ১২ টা একটার মধ্যেই বাড়ি ফিরে।
কাজ এত সহজ হলো কিভাবে সে নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করতে করতে কম্পিউটার অপারেটররা এক একজন অনেক পারদর্শী হয়ে উঠে। বার্তা সম্পাদকের কৌশল রপ্ত করে তারাই ভিতরে ভিতরে বার্তা সম্পাদক হয়ে উঠে। প্রতি রাতে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ বার্তা সম্পাদক অফিসে গিয়েই বেশ কয়েকটি অনলাইন খুলে বসে পড়েন। তারপর সেই সব অনলাইন থেকে নিউজ টেনে একটা ফাইল করেন। বেশ তাদের কাজ শেষ। তারপর যা করার কম্পিউটার অপারেটররাই করেন। এত বৃত্তান্ত দেয়ার কারণ হচ্ছে, বার্তা সম্পাদকদের সঙ্গে কাজ করতে করতে কম্পিউটার অপারেটররা বুঝে গেছেন কিভাবে এবং কোন নিউজ টানতে হয়। এই অভিজ্ঞতার কারণে যখন বার্তা সম্পাদক কোনও কারণে অফিসে অনুপস্থিত থাকেন, তখন একজন কম্পিউটার অপারেটরের উপর সব দায়িত্ব অর্পিত হয়। তার বদৌলতে পরদিন পত্রিকা পাঠকের হাতে পৌঁছে।
এ বিষয়টি মালিকপক্ষ বুঝে উঠার পর দাম বাড়ে অপারেটরের। এরপর পত্রিকায় কেউ কাজ করুক আর না করুক তাতে মালিকের কিছু যায় আসে না। কারণ তিনি জেনে ও বুঝে গেছেন যে নিউজ টানতে পারে তাকে দিয়ে সব সম্ভব। তাই কাড়ি কাড়ি বেতন দিয়ে সাংবাদিক না রেখে একটু বেতন বাড়িয়ে দিয়ে একজন দক্ষ কম্পিউটার অপারেটর রাখা অনেক উত্তম। কপি, কাট ও পেস্টের বর্তমান সময়ে বেশি জনবলের দরকার নেই তা লেখার শুরুতেই বলেছিলাম। এতে যেমন অনেক উপকারিতা আছে তেমনি কিছু অপকারিতাও আছে।
কারণ এটাও দেখা যায় মফস্বলের কোনও সাংবাদিক একটি অনলাইন থেকে নিউজ টেনে তা তার কর্মরত পত্রিকায় পাঠায়। এই টানাটানির ফলে দেখা যায় দৈনিক হাওয়া পত্রিকার প্রতিনিধির নিউজের ভিতরে পত্রিকার পরিবর্তে কোনও এক ডটকম অনলাইনকে একথা জানানো হয়েছে তা উল্লেখ রয়েছে। এবং এটি যার সম্পাদন করার কথা তিনি যে কোনও কারণে তা না করায় দেখা যায় পরদিন তাই ছাপা হচ্ছে।
এছাড়া কপি, কাট ও পেস্টের কারণে প্রতিনিয়ত বরিশালের একাধিক পত্রিকায় একই শিরোনামে হুবাহু একই খবর প্রকাশিত হয়। এত কিছুর পরেও যারা একটু মানসম্মত পত্রিকা বের করার চেষ্টা করেন তারা পড়ে বিপাকে। বিষয়বস্তু ও বর্ণানায় কোনও পরিবর্তন না পাওয়ায় স্থানীয় পত্রিকা পড়ার পাঠক দিনদিন কমে যাচ্ছে। অনেক মালিককে গুণতে হচ্ছে লোকসান। আবার কপি, কাটের কারণে লাভের মুখ দেখা মালিকের সংখ্যা কম নয়। তাই কারো কারো কাছে কপি, কাট, পেস্ট হয়ে উঠে বহুতি বেস্ট…।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।