গর্ভাবস্থায় করোনা হলে কী কী ঝুঁকি তৈরি হতে পারে?
প্রকাশিত : ১৭:১৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৭:২০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভারতের ইয়াশোদা হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডা. ভাগ্য লাক্সমি এস
দীর্ঘ তিন বছর ধরে চলছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এই তিন বছরে আমরা প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কোভিডের মোকাবিলা করা শিখলেও, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ঝুঁকি বরাবরই ভাবিয়েছে বিশ্ববাসীকে। অন্যান্য শারীরিক জটিলতা থাকাকালীন কোভিড সংক্রমণ নিঃসন্দেহে বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ। তবে গর্ভাবস্থায় যদি কোভিড সংক্রমণ হয়, তাহলে ঝুঁকির মাত্রাটা কতখানি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তথ্য মতে, প্রসূতিদের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি নয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কোভিড আক্রান্ত হলে জটিলতা বৃদ্ধির ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
সম্প্রতি, গর্ভাবস্থায় কোভিডের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছেন ভারতের ইয়াশোদা হসপিটালস-এর গাইনোকোলজিস্ট ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন এবং কনসালটেন্ট (প্রসূতি) ডা. ভাগ্য লাক্সমি এস। প্রসূতিদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি এবং আক্রান্ত হলে অবস্থা গুরুতর বা মৃত্যুঝুঁকি কতখানি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক হ্রাস পায়। ফলে প্রসূতিরা কোভিডসহ যেকোন সংক্রমণেরই বাড়তি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। একই কারণে অসুস্থতাও গুরুতর হতে পারে এবং মৃত্যুঝুঁকিও শারীরিক অবস্থার উপরেই নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় সব ধরণের ঔষধ খাওয়াও নিরাপদ নয় তাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।”
গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হলে নিজেকে ও বিশেষ করে শিশুকে রক্ষার উপায় নিয়ে প্রায় সকলের মনেই প্রশ্ন জাগে। প্রশ্নের সহজ উত্তরে ডা. ভাগ্য লাক্সমি বলেন, “অন্যান্যদের মতো প্রসূতিদের ক্ষেত্রেও সতর্কতার নিয়ম এক। শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে হলে তাই প্রথমে নিজেকে নিরাপদ থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব (নূন্যতম ২ ফিট) বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান করা, হাত ধোয়া, নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করানো ইত্যাদি কঠোরভাবে অনুসরণ এবং উপসর্গ দেখা গেলে বা আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।”
কোভিড সংক্রমণ হলে গর্ভপাত বা প্রি-টার্ম ডেলিভারির সম্ভাবনা কতটুকু? প্রশ্নের উত্তরে ডা. ভাগ্য লাক্সমি বলেন, “কোভিডের কারণে যে সকল ক্ষেত্রেই জটিলতা বৃদ্ধি পায় তা সঠিক নয়। যেকোন শারীরিক জটিলতা, ইনফেকশন, অনিয়ন্ত্রিত অসুস্থতার কারণে গর্ভপাত বা প্রি-টার্ম ডেলিভারির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যা কোভিডের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। তাই বাড়তি দুশ্চিন্তা না করে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা।”
অনেকেই ভাবছেন যদি মা সংক্রমিত হয় তবে ভ্রূণও সংক্রমিত হতে পারে কিনা, তা নিয়ে। এই বিষয়ে ডা. ভাগ্য লাক্সমি বলেন, “এখন পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের মধ্যে ট্রান্সপ্লাসেন্টাল সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। অর্থাৎ, মা সংক্রমিত হলেও গর্ভে থাকা শিশু কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকিতে নেই।”
প্রসূতি মা বা নতুন মায়েদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো কোভিড সংক্রমিত হলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে কিনা, তা নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্ন সম্পর্কে ডা. ভাগ্য লাক্সমি জানান, “এই বিষয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। বরং এমতাবস্থায় বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার জন্য উপকারী। কারণ এতে করে বাচ্চা প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি অ্যান্টিবডিও গ্রহণ করছে। তবে শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে মা-কে কঠর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন; শিশুর কাছে যাওয়ার আগে যথাযথভাবে স্যানিটাইজ হয়ে নেওয়া, মাস্ক পরিধান করা ইত্যাদি। শিশুর প্রাথমিক পরিচর্যাকারী হিসেবে একজন অসংক্রমিত ব্যক্তি রাখাই শ্রেয়। তবে মা যদি ঝুঁকি নিতে না চান অথবা সংক্রমিত অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থাস্বরূপ বুকের দুধ পাম্প করেও শিশুকে খাওয়াতে পারেন। এতে করে শিশু অনেকাংশেই ঝুঁকিমুক্ত থাকে।”
সবশেষ ডা. ভাগ্য লাক্সমি বলেন, “আগামী আরও কিছু দিন আমাদের কোভিডের সাথে মানিয়ে চলতে হবে। তাই কোভিড নিয়ে ভাড়তি দুশ্চিন্তা না করে আমরা যদি সঠিক নিয়ম পালন করি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তবেই আমরা ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারবো।”