গাজীপুরে ভোটের আগেই ‘আসল ভোট’
প্রকাশিত : ২০:১৪, ৪ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৩১, ৫ এপ্রিল ২০১৮
উত্তরা নয় নম্বর সেক্টর পার হওয়ার আগে থেকেই চোখে পড়ে বিশাল বিশাল ব্যানার। কোন কোনো ব্যানারে লিখা `জাহাঙ্গীর আলম ভাইকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই`। আবার কোনো কোনোটিতে লিখা ‘আজমত উল্লাহ খানকে নগরপিতা হিসেবে দেখতে চাই`। এসব ফেস্টুনের শুরুতে অনেক বিশেষণ। যেমন- রাজপথের সাহসী সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, রাজপথের সাহসী পুরুষ ইত্যাদি। বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকারের নামেও দু`একটা ব্যানার দেখা যায়। তবে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যানার-ফেস্টুনের তুলনায় বাকিদের প্রচার একেবারেই ম্লান। আজমত উল্লাহ খানও বিভিন্ন কৌশলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু ব্যানার-ফেস্টুন নয়, গাজীপুরের রাস্তা-ঘাট, অলি-গলিতে পুরোদমে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজার-রাস্তাঘাট সর্বত্রই টক অব দ্য টাউন গাজীপুর সিটি নির্বাচন। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে সিটি নির্বাচনে বড় দুই দলে মনোনয়ন কে পাবেন তা নিয়েই আলোচনা সর্বত্র।
দুই দলের দু’জন দু’জন করে হেভিওয়েট নেতা মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন-ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর আলম। আর বিএনপিতে অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকার। আজমত উল্লাহ খান টঙ্গী পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন, যেই কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে নিজের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেন। পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে নানা কর্মসূচি পালন করেন।
অপরদিকে বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সারা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ধর্ম এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে এলাকার উন্নয়ন করেন। গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লাহ খানকে পরাজিত করেন। নির্বাচিত হলেও ৫ বছর মেয়াদের ২ বছরই তার কাটে কারাগারে। তার নামে ৩০টিরও বেশি মামলা। তাই মান্নান এবারের নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন দাবিদার। আর হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। জন্ম টঙ্গীর ঐতিহাসিক সরকার পরিবারে। তরুণ বয়সে টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। পরে এলাকায় শিক্ষার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তার নিজস্ব প্রচেষ্টায় ও সরকার পরিবারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় টঙ্গীতে ত্রিশটির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি, যেটি গাজীপুরের সবচেয়ে সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান উদ্দিন সরকার। বয়োজেষ্ঠ এ নেতার সমালোচকদের অভিযোগ তিনি বিভিন্ন সময়ে দল পরিবর্তন করেছেন। এরশাদের সময়ে দুই দুই বার এমপি হন। জেলা প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।
দুই দলের হেভিওয়েট চার নেতার ‘মনোনয়ন যুদ্ধ’ নিয়ে গাজীপুরের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, গাজীপুরে এবার ভোটের আগেই শুরু হয়ে গেছে নির্বাচন। মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই দলের চার নেতাই ‘বাঘা’, ‘বাঘা’। কেউ অভিজ্ঞতায় এগিয়ে তো কেউ মেধায়। কেউ কেন্দ্রে এগিয়ে তো কেউ তৃণমূলে। কেউ টাকায় এগিয়ে তো কেউ প্রভাবে। কেউ কাউকে ফেলে দিতে পারবেন না।
ভোটের আগে আসল ভোট
ভোটার সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ সিটি কর্পোরেশন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। রাজধানীর সবচেয়ে কাছের এই সিটি কর্পোরেশনটিতে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মে সেখানে অনুষ্ঠিত হবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ৫৭ ওয়ার্ডে এতে ভোটার ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫জন। তবে ভোটের আগেই আসল ভোটের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে মাঠে। তা হলো কোনো দলে কে হচ্ছেন মনোনীত প্রার্থী। স্থানীয় নাগরিকরা মনে করছেন, প্রধান দুটি দল কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে সেটার উপর নির্ভর করবে নির্বাচনের অনেক হিসাব নিকাশ। স্থানীয় আইনজীবী এডভোকেট প্রশান্ত চন্দ্র সরকার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নির্বাচন বড় কথা নয়, বরং কে মনোনয়ন পাচ্ছে সেটাই বড় কথা। প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করলেই নির্বাচনের ফল কি সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ মুহূর্তে মনোনয়নই বড় চ্যালেঞ্জ। মনোনয়নই এখানে আসল ভোট।
এক নজরে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
স্থানীয় সরকারের অন্যান্য যে কোনো নির্বাচনের মতোই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও এবার প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীক নিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধান দুটি দল যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়বেন নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে।
আওয়ামী লীগে ৪ জন
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, নগরের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সিটি কাউন্সিলর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন, মহানগর যুবলীগের আহবান কামরুল আহসান সরকার রাসেল।
আজমত উল্লাহ খান ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত হন। প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ পুরনো ও বয়স্ক ভোটারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। গাজীপুর চৌরাস্তা মোড়ের ব্যবসায়ী আবদুল খালেকের ভাষ্য, গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে যারা কাজ করেছেন আজমত উল্লাহ খান তাদের একজন। তিনি প্রয়াত এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে এক কাতারে থেকে সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র আজমত টঙ্গী পৌরসভায় তিন মেয়াদের মেয়দ ছিলেন। শুধু তাই নয়; তিনি বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাকে বলা হতো পৌর মেয়রদের মেয়র। তাই দলের পুরনো নেতাদের কাছে আজমতের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এছাড়া টঙ্গীর পৌরসভার হেট্রিক মেয়র থাকায় এই এলাকায় তার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। সবমিলিয়ে আজমতের সমর্থকরা মনে করছেন মনোনয়ন পেলে তিনিই এবার মেয়র হবেন। তাদের যুক্তি এম এ মান্নান মেয়র হয়েও খুব বেশি উন্নয়ন করতে পারেন নি। তিনি দীর্ঘসময় জেলেই ছিলেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহাঙ্গীর আলম তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডেই তার রয়েছে প্রচুর কর্মী-সমর্থক। রয়েছে কমিটিও। দলীয় কর্মী সমর্থক ছাড়াও অন্যদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় আইনজীবী এডভোকেট রায়হান কবীর বলেন, তরুণদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ভীষণ জনপ্রিয়। গত নির্বাচনে তাকে দল বসিয়ে দিলেও তিনি কার্যত মাঠ ছাড়েন নি। তিনি গত ৫ বছর ধরেই তৃণমূলে যোগাযোগ রাখছেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতির বাইরেও সমাজ সেবায় সমান ভাবে সক্রিয়। কেউ কখনো তার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফেরত আসার নজির নেই। সিটি কর্পোরেশনের ৫৭ টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকলেও জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন কাজ করছে। এতে তরুণ-যুবক-শিক্ষক ও মসজিদের ইমামরা রয়েছেন। এই সংগঠন মেধাবী ও দু:স্থ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে ১০ কোটি টাকার বৃত্তি, ও ১০০ টি ল্যাপটপ দিয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের আরেক সমর্থক যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জানান, জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটির যানজট নিরসনে নিজস্ব ট্রাফিক বাহিনী করেছেন। তারা নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় যানজট নিরসনে কাজ করে। এদের পেছনে জাহাঙ্গীর আলমের মাসিক ব্যয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা, যা তিনি ব্যাক্তিগত ফান্ড থেকেই দিয়ে থাকেন। তবে এসবের সমালোচনাও আছে। আজমত সমর্থকরা বলছেন, এগুলো লোক দেখানো। এরা মূলত জাহাঙ্গীর লীগ। সাধারণ ভোটারদের কাছে জাহাঙ্গীর লীগের জনপ্রিয়তা থাকলেও প্রবীণরা এতে নাখোস। ষাটোর্ধ্ব কবীর নেওয়াজের ভাষায়, জাহাঙ্গীর রাজনীতিটা রে নষ্ট করল। আগে রাজনীতি ছিল আদর্শ আর পরিশ্রমের জায়গা। জাহাঙ্গীর সেটারে করেছে রাজনীতির খেলা। তবে তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেন স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা রাবেয়া আক্তার। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সঙ্গে মন খুলে কথা বলা যায়। অভাব অভিযোগ জানানো যায়। এই সুযোগ অন্য কোথাও নেই। তার যুক্তি টাকা তো অনেকেরই আছে। কে যানজট নিরসনে কিংবা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিনা লাভে ব্যয় করেন। জাহাঙ্গীর-ই ব্যতিক্রম।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আরো দু`জন প্রার্থী প্রচুর পোষ্টার - বিলবোর্ড নির্ভর প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের একজন গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল। তিনি বলেন, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম আছি। দল আমায় মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করতে আগ্রহী। পুরনো প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে মনোনয়ন না দিয়ে কেন তাকে দল মনোনয়ন দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল আহসান সরকার রাসেল বলেন, আজমত উল্লাহ খান পুরনো নেতা এটা ঠিক। তবে তিনি দলে ঐক্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাছাড়া তার অহমিকার জন্য তার কাছে কর্মীরা ভিড়তে পারেন না। গত নির্বাচনের পর তিনি তৃণমূলে খুব একটা যোগাযোগ রাখেন নি।
মনোনয়ন প্রত্যাশী এই যুবলীগ নেতা আজমত উল্লাহ খানের বিরোধিতা করলেও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কিছু বলতে রাজি নন। জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতির জন্য মাঠে পড়ে আছেন বলেই মন্তব্য করেন যুবলীগের এই আহবায়ক।
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিরণ জানান, দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন। তবে তিনি নিজে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও কথা বলেন আজমত উল্লাহ খানের পক্ষেই। তার ভাষায়, আজমত উল্লাহ খান দলের দু:সময়ের কান্ডারি। আর জাহাঙ্গীর আলম সুদিনের পাখি।
বিএনপিতে তিন মেয়র প্রার্থী
বিএনপিতে অধ্যাপক এম এ মান্নান, হাসান উদ্দিন সরকার ছাড়াও আরও একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তিনি কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন।
গাজীপুর যদিও বা দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে পরিচিত তথাপি গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান। তবে মেয়র হিসেবে নিজেকে কাজে লাগানোর খুব বেশী সুযোগ তিনি পাননি। নানা মামলা মোকদ্দমার বোঝা সামলিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন আড়াই বছরের মতো সময়। সর্বশেষ গত জুন মাসে তিনি আবার মেয়রের দায়িত্ব বুঝে নেন। শারীরিক ভাবে তিনি কিছুটা অসুস্থ হলেও এবারো তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এটাও বললেন, কোনো কারণে তিনি মনোনয়ন না চাইলে তার ছেলে রনিকে মনোনয়ন চাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন বিএনপিতে তার (এমএ মান্নান) অনুসারীরা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ কালে তিনি বলেন, সরকার আমাকে নানা ভাবে নাযেহাল করেছে। প্রতি নিয়ত মামলা- জেল- জুলুমের চাপে রেখেছিল। এতে আমার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আমার বিশ্বাস এবারো দল আমাকে বা আমার পরিবারকে হতাশ করবে না।
এম এ মান্নান যতো কথাই বলুন, বিএনপি`র অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান উদ্দিন সরকার তার অবস্থানে অনড়। বিএনপি`র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার এ প্রতিবেদককে বলেন, সংসদ সদস্য ছিলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। রাজনীতির জন্য মাঠে আছি। আমার অভিজ্ঞতার মূল্য আছে। আমি মনোনয়ন চাইব।
হাসান উদ্দিন সরকারের বক্তব্যকে হেসে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। টঙ্গী কলেজ গেইটের ব্যবসায়ী মো. নুরন্নবী বলেন, বিরোধী দলে ফাইট করার জন্য যে মনোবল ও সাহসের দরকার ছিল মান্নান সাহেব তা দেখাতে পারেন নি। তবে হাসান উদ্দিন সরকার সাহসী মানুষ। তিনি মনোনয়ন পেলে গাজীপুর সিটিতে আবারো বিএনপি`র প্রার্থী বিজয়ী হবে। এছাড়া গত নির্বাচনে তিনি মান্নানকে ছাড় দিয়েছেন। তার পক্ষে কাজ করে মান্নানকে জয়ী করেছেন। দল এবার হাসান সরকারকে মূল্যায়ন করবে।
তবে মান্নান সমর্থকরা বলছেন হাসান সরকার মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনের আগেই জয়ী হয়ে যাবেন। কারণ তরুণরা হাসান সরকারকে পছন্দ করেন না। তরুণদের কাছে তার গ্যাপ রয়েছে। কিন্তু মান্নান শিক্ষক হিসেবে তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ সবার কাছে জনপ্রিয়।
কেন্দ্রীয় নেতারা কী বলছেন:
গাজীপুর জেলা বিএনপি`র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) ফজলুল হক মিলন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নিয়ে এই নেতার মন্তব্য তারা একটা সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। যদি কোনো কারণে সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব না হয় তাহলে তৃণমূল কাউন্সিলরদের ভোটে যাবেন। সেক্ষেত্রে আগামীকাল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করতে পারবে। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় একটা সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সরকারের শেষ বছর হিসেবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অামাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখানে কোনো আবেগের স্থান নেই। আগামী আট তারিখ মনোনয়ন বোর্ড বসবে। বোর্ডের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর নির্দেশনাই শেষ কথা।