গান আমার আশ্রয়, ইভা অনুপ্রেরণা : মাহফুজুর রহমান
প্রকাশিত : ২০:০৯, ১৪ জুন ২০১৮
ফাইল ছবি
ড. মাহফুজুর রহমান। দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দেশে বেসরকারি টেলিভিশনকে জনপ্রিয় করতে যারা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। একজন সফল ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমের কর্ণধার- এসব পরিচয়কে ছাপিয়ে যে পরিচয়টি তাকে তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে পরিচিত করে তুলেছে তা হলো- সঙ্গীত। স্ত্রী ইভা রহমান নামকরা গায়িকা। স্ত্রীর পাশাপাশি নিজেও গান গাওয়া শুরু করেছেন। যদিও তার গান গাওয়া নিয়ে কম কথা শুনতে হয় নি। ঈদের তৃতীয় দিন এটিএন বাংলায় রাত সাড়ে দশটায় প্রচারিত হবে ড. মাহফুজুর রহমানের বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান `মনে পড়ে তোমায়`।
মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সঙ্গীতের প্রতি তাঁর রয়েছে অসম্ভব ভালোবাসা। এ ভালোবাসা থেকেই তিনি অনেক শিল্পীর জীবনে পৃষ্টপোষক হিসেবে কাজ করেছেন। অনেক শিল্পীর চলার পথকে করে করে দিয়েছেন সহজ। আবার সেই ভালবাসায় নিজেই নেমে পড়েছেন গানে।
মাহফুজুর রহমান তাঁর গাওয়া গান নিয়ে প্রথম টিভি পর্দায় আসেন ২০১৬ সালে। ঈদুল আযহায় ঈদে প্রচার হয় তাঁর ‘হৃদয় ছুঁয়ে যায়’ শিরোনামের অনুষ্ঠানটি। এরপর গত বছর রোজার ঈদে প্রচার হয়েছে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘প্রিয়ারে’ এবং কোরবানির ঈদে প্রচার হয় একক সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’।
এবার ঈদেও তাঁর গাওয়া গান নিয়ে প্রচার হবে একক সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘মনে পড়ে তোমায়’। এবারের অনুষ্ঠানটি কীভাবে সাজানো হয়েছে জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, `মনে পড়ে তোমায়` অনুষ্ঠানে রয়েছে মোট ১০টি গান। দেশে এবং দেশের বাইরের মনোরম লোকেশনে চিত্রায়িত হয়েছে গানগুলো। এর মধ্যে ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ীর সুর করা গান রয়েছে দুটি। মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের লেখা গান দুটি হলো ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে’ এবং ‘এক মুঠো প্রেম’। রাজেশ ঘোষের কথা, সুর ও সঙ্গীতে রয়েছে ‘হৃদয় জুড়ে আছো’ এবং ‘কি যে ব্যথা’ শিরোনামের দুটি গান। এছাড়া বাকি ছয়টি গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মান্নান মোহাম্মদ। গানগুলো হলো তুমি বিনা আমার জীবন, বিশ্বাস করো, ইচ্ছে করে, সেই কবে থেকে, মনে কি পড়ে তোমায় এবং বন্ধু জানো কি। গানগুলো লিখেছেন শেখ রেজা শানু, নাজমা মোহাম্মদ, দেলোয়ার আরজুদা শরফ এবং শহীদুল্লাহ ফরায়জী।
এতো ব্যস্ততার মধ্যেও গানকে কীভাবে ভালোবাসলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজুর রহমান বলেন, গান আমার আশ্রয়। আর কঠিন কর্মব্যস্ত জীবনে গানের মাঝেই আমি সুখ খুঁজে পাই। আর যে মানুষ সুরকে ভালোবাসে সে কখনো `অসুর` হতে পারে না। গান শুনে যার হৃদয় আলোড়িত হয় না, সে কখনো ভাল মানুষ হতে পারে না।
মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ইভা রহমান। কাকে বেশি ভালোবাসেন, গানকে নাকি ইভাকে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মাহফুজুর রহমান হেসে বলেন, গান আমার আশ্রয় আর ইভা আমার অনুপ্রেরণা। চলার পথে আমার দুটোকেই দরকার। ইভা রহমানকে মূল্যায়ন করতে বলা হলে ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, একজন পুরুষের চলার পথে নারীর অনুপ্রেরণা খুবই দরকার। ইভা প্রতিনিয়ত আমার সেই জায়গাটি পূরণ করে রেখেছে। ইভা সুন্দরী, ইভা ভালো গান গায়, ইভা ভালো ব্যবসায়ী। এটিএন গ্রুপের পরিচালক হিসেবেও ইভা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
এই সফল ব্যবসায়ী, সংগীত শিল্পী ও টিভি ব্যাক্তিত্বের ঈদ ভাবনা নিয়ে কথা শুরু করলে উঠে আসে তাঁর (মাহফুজুর রহমান) ছোটবেলার স্মৃতিকথা। তিনি বলেন, আমার ছোট বেলায় ঈদ প্রস্তুতি শুরু হতো একমাস আগে থেকেই। পুরো রমজান মাসেই আমি ঈদ প্রস্তুতি নিতাম। মা মেশিনে হাতে কাটা সেমাই তৈরি করতেন। আমরা ভাই বোনেরা পালাক্রমে ঘর সাজাতাম। কার্টুনের বাক্স কেটে ঘরে বড় করে লিখতাম `ঈদ মোবারক`। রঙিন কাগজ কেটে ঘরে লাগাতাম। নতুন জামা কাপড় কেনার আনন্দে রাতে ঘুম হতো না। ঈদের দিন দল বেঁধে ঘুরতাম। সবার বাড়ি যেতাম।
মাহফুজুর রহমান এ সময় শিশু সুলভ হাসি দিয়ে বলেন ছোট বেলার ঈদ আমাদের কাছে যতোটা আনন্দের ছিল, এখন বড় বেলার ঈদ আমাদের কাছে ততোটা আতঙ্কের। প্রথম রোজা বা তার আগে থেকেই নিতে হয় টিভি অনুষ্ঠান নিয়ে প্রস্তুতি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় ছাড়া কোনো ফুসরত নেই। কোন কোন অনুষ্ঠান বানানো হচ্ছে, সেগুলো মার্কেটিং- এর কী প্রস্তুতি নেওয়া হলো, নির্মাতারা কী বলছে, বিজ্ঞাপন বিভাগে কোনো সমস্যা আছে কি না এসব তদারকি করতে করতেই শেষ। তাঁর উপর আছে বেতন- বোনাস ঠিক মতো পরিশোধ করা। ব্যবসা দেখা। কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা ধরনের দাবি- আবদার। পুরো রোজার মাসটা এভাবেই যায়। ঈদের জন্য কী শপিং করেছেন এবার জানতে চাইলে মাহফুযুর রহমান হাসি মুখে বলেন, অনেক দিন আমি শপিংয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই না। নিজে নিজের জন্য ঈদ শপিং কবে করেছি, তা ভুলেই গেছি। আমার এসব বিষয় আমার স্ত্রী দেখেন।
কীভাবে কাটাবেন ঈদের দিন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের দিন নামায পড়ে সারাদিন বিশ্রাম নেব। এই একটা দিন বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনা। হাসি খুশি বিনয়ী অথচ সফল ব্যবসায়ী ড. মাহফুজুর রহমান উঠে এসেছেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। জানতে চাইলাম, আপনার এই সফলতার রহস্য কী? উত্তরে তিনি বললেন, মায়ের দোয়া। আমার মা সব সময় দোয়া করতেন, আমি যেন আমার লক্ষে পৌঁছতে পারি। মায়ের দোয়া কখনো বৃথা যায় না। তিনি এসময় বলেন, তবে আমার দু:খ আমার আজকের এ অবস্থান আমার মা দেখে যেতে পারেননি। আমি যখন ব্যাবসা শুরু করছি সেই ১৯৭৪ সালে। তার আগেই মা মারা যান। সাত ভাইয়ের মধ্যে আমার অবস্থান ছয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নীট পোশাক ইউরোপে রপ্তানীর শুরু করি। দেশে প্রথম বেসরকারী টিভি চ্যানেল চালু করার কৃতিত্ব ড. মাহফুজুর রহমানের। একজন কঠিন পোশাক শিল্প ব্যাবসায়ীর মাথায় কীভাবে গণমাধ্যম চিন্তা তার মাথায় এল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে এই ব্যবসার খাতিরেই ভারতের মুম্বাই শহরে গিয়েছিলাম। সেখানে জি-টিভির কার্যক্রম দেখি। তখন আমার ইচ্ছা জাগে একই আদলে বাংলাদেশে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালু করার । সেই ইচ্ছা থেকেই সেসময়ে মুম্বাই এর একটি চ্যানেল এটিএন-এর এক ঘন্টা সময় ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান বানানো শুরু হয় করি।
একসময় মুম্বাইয়ে এই চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে চেষ্টা শুরু করেন পূর্ণাঙ্গভাবে একটি ২৪ ঘন্টার চ্যানেল শুরু করতে। থাইল্যান্ডের একটি স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে, প্রতিদিন কুরিয়ার সার্ভিসে অনুষ্ঠানের টেপ পাঠিয়ে এসময় কার্যক্রম চালাতাম। তবে সে সময় এটিএন এর অনুষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপনের মান নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা ছিল; এর উত্তরে মাহফুজুর রহমান বলেন, অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। অর্থাৎ সেসময় কোনো বিজ্ঞাপন পাওয়া যেত না বলে বিটিভি যে সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিত না তাই তারা লুফে নিতেন। আবার বাজেট কম থাকার কারণে তাদের অনুষ্ঠানের মানও ভাল ছিল না। তবে সংবাদ প্রচার করার অনুমতি পাওয়ার পরপরই তার চ্যানেলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় বলে মাহফুজুর রহমান।
/ এআর /