গাফফার চৌধুরীর কর্ম অনন্তকালের সাক্ষ্য
প্রকাশিত : ১৮:০২, ১৯ মে ২০২৪
মৃত্যুর পরও উদ্ভাসিত আবদুল গাফফার চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনে প্রভাত ফেরির গান লিখে জ্বলে ওঠা সব্যসাচী সাংবাদিক জীবনভর কলমযুদ্ধ চালিয়েছেন প্রগতিবাদী সমাজ বিনির্মাণে। কিংবদন্তি গাফফার চৌধুরীর দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস আজ।
তিনি ২০২২ সালের ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান।
বায়ান্ন থেকে একাত্তর। বারংবার আক্রান্ত হয়েছে দেশ। জেল জুলুম আর নির্যাতন সয়েছে এদেশের কোটি মানুষ।
জাতির সে ক্রান্তিকালে কলম ধরেছেন সাহসসঞ্চারী সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। যেমনি করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে লিখেছিলেন- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারির মতো কালজয়ী সঙ্গীত।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বাস করতেন গাফফার চৌধুরী। সেখান থেকেই অসাম্প্রদায়িক বাংলা আর বাঙালির ঐতিহ্যরক্ষায় বারংবার ঝলসে উঠেছে তাঁর কলম।
শস্য সুফলা বাংলা আর বাঙালির মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য, অবিনশ্বর ও সার্বজনীন।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে ছোট মেয়ে বিনিতা ছিলেন পিতার ছায়াসঙ্গী। সেই বিনিতাও অসুস্থ বাবাকে রেখে হঠাৎ পাড়ি জমান পরপারে। কন্যা হারানোর শোক ক্রমশ কাবু করে ফেলে কিংবদন্তি আবদুল গাফফার চৌধুরীকে। ২০২২ সালের ১৯ মে সুন্দর এ পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দূর আকাশের তারায় লীন হয়ে যান তিনি।
গাফফার চৌধুরী নেই। কিন্তু তাঁর কর্ম অনন্তকালের সাক্ষ্য হয়ে রইবে বহুদিন বহুবছর।
২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতাদের বিচারে সর্বকালের সেরা বাংলা গান বলে যে ২০টি গানকে নির্বাচিত করেছিলেন, তার তিন নম্বরে ছিল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’। কালজয়ী এই গান বাংলা ভাষায় তো বটেই বিশ্বের ১২টি ভাষায় এখন গাওয়া হয়। একুশের গান রচনা গাফফার চৌধুরীর জীবনের অন্যতম একটি ঘটনা।
গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উলানিয়া গ্রামে। মায়ের নাম জোহরা খাতুন। বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী বরিশাল জেলা কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
গাফফার চৌধুরী ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।
একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি ‘জয় বাংলা’, ‘যুগান্তর’ ও ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় কাজ করেছিলেন।
স্বাধীনতার পর, ১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে লন্ডনে চলে যান। সেখানে ‘নতুন দিন’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। প্রায় ৩৫টি বই লিখেছেন তিনি।
কাজের স্বীকৃতির জন্য জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন গাফফার চৌধুরী। উল্লেখযোগ্য হল, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক, ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা পদক (২০০৯)।
এএইচ