‘গুলিতে না মরলে জবাই করে’
প্রকাশিত : ২১:৩৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৫৪, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব খুব কাছ থেকে দেখেছেন আব্দুল আজিজ। তিনি নির্যাতনের শিকার হলেও পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। বিবিসির কাছে তিনি নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। আব্দুল আজিজের কথা হবহু বর্ণনা করা হল।
সেদিন ছিল বুধবার। বিকেলে আসরের নামাজ পড়তে বের হয়েছি। সেসময় আমাকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
আমার বাড়ি রাখাইনের গারোতো বিলে। বাড়ি থেকে চোখ বেধে নিয়ে যায়, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
চোখ খুললে বুঝতে পারলাম আমাকে একটা `গ্যারানের টেরায়` যাকে বলা হয় `গোয়াল ঘরে` নিয়ে রাখা হয়েছে।
দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। আমার মতই তাদেরকেও ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।
সেখানে আমাদেরকে নিয়ে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে ।
যখন বেঁধে রেখেছিল তখন দুইজন পাহারা দিয়েছে, কারোর বের হওয়ার সুযোগ ছিল না ।
প্রচণ্ড মারধর করে আমাকে। তারা মিয়ানমারে ভাষায় বলছিলো "লো কালা" অর্থাৎ তোরা আমাদের দেশি না, তোরা বাঙ্গালি, তোরা ওখানেই চলে যা।
আমার সামনে কয়েকজনকে জবাই করছে আবার কাউকে কাউকে গুলি করে মেরেছে।
আব্দুল আজিজ বলেন, গুলি মারার পর তখনো যদি সে নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয়।
পাহারাদাররা যখন দরজা থেকে সরে গেছে তখন তাদের অবস্থান দেখে আমি পালিয়ে আসি । আমাকে ধরে নিয়ে গেছিলো আসরের সময় আর আমি পালিয়ে আসি এশার সময় ।
আমি যখন ওইখান থেকে বের হয়ে আসি তখন যাদেরকে তখনো হত্যা করেনি তাদের সবার হাত পা বাঁধা ছিল।
এর পর কি করেছে আমি জানি না । আমি যখন এসেছি তখনো ঐখানে অনেক মানুষ ছিল, শুধু ছিল পুরুষ মুসলিম, কোনো মহিলা ছিল না ।
আমি যখন বাড়ি ফিরে আসি তখন দেখি আমার ঘর আগে যেরকম ছিল সেরকম আর নেই ।
আমার বাড়ি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে নাকি ম্যাচের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেটা আমি জানি না, কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা বলেছে বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে ।
এরপর থেকে আমার মা বাবার সাথে দেখা হয়নি, বাংলাদেশে এসেও তাদের খোঁজ পাইনি ।
ওখানে মুসলিমের কোনো দাম নাই, খাবার বা পানি দেয় না ওরা। ভয়ে আতঙ্কে আমার গলা শুকিয়ে আসছিল।
বন্দি অবস্থায় দুই আড়াই ঘণ্টা ছিলাম তখন অন্যদের জিজ্ঞাসা করেছি এখানে কোন খাবার পানি দেয় কিনা, তারা বলেছে কোনো খাবার বা পানি দেয় না ।
ঐখানে আমার মতো যুবক যারা ছিল তাদেরকে আগেই ধরে নিয়ে গেছে, তাদেরকে মেরে ফেলেছে, কেটে ফেলেছে । এর পরে ওখানে বেধে রাখা কতগুলো আছে ।
ওখানে যুদ্ধ করছে এমন কোনো রোহিঙ্গা আমরা পাইনি। ওখানে যুদ্ধ করার মতো লোক আছে বলে আমার মনে হয় না । সূত্র : বিবিসি বাংলা।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন