ঘামের গন্ধে কাছে আসে যে সাপ
প্রকাশিত : ১৫:৪৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
সারাদিন কাজের পর ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরা হয়, ঠিক এ সময় শরীরে ঘামের গন্ধ ছোটে। আর এই গন্ধ নিয়েই বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার পর ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। কেননা মানুষের এই গন্ধে বিছানায় উঠে আসতে পারে ‘কালাচ’ সাপ। শুনেই হয়তো অবাক হবেন, কারণ এই সাপটি অনেকের কাছেই অপরিচিত। অনেকেই হয়তো জানেন না ক্লান্ত শরীরের ত্বক নিঃসৃত ঘামের গন্ধে নেশাতুর কালাচ সাপ। আপনার অজান্তেই সেই গন্ধ নিতে হাজির হবে বিছানায়।
আসলে বিষধর সাপের যে এলিট ক্লাস, তার মধ্যে এই সাপের নামটি তেমন প্রচলিত নয়। অথচ এদের বিষ কিন্তু কেউটে বা অন্য বিষাক্ত সাপের থেকে বেশি তীব্র। পশ্চিমবঙ্গে এটি খুব বেশি পরিচিত। এদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এমনই যেটা অন্য বিষধর সাপেদের সঙ্গে মেলে না।
প্রথম কথা, এই সাপ ফণাহীন। দ্বিতীয়ত, এই সাপ কামড়ালে ব্যথা হয় না। জায়গাটা ফোলেও না। ফলে যাকে কামড়াল, সে বুঝতেও পারে না। অথচ আস্তে আস্তে নার্ভবিষের লক্ষণগুলি দেখা যায়। শুরু হয় পেটে ব্যথা, গলায় ব্যথা কিংবা সারা শরীর জুড়ে অস্বস্তি। যেন জ্বর আসছে। চিকিৎসা সময়মতো শুরু না হলে অবধারিত মৃত্যু। কারণ আদতে ভীষণ শান্ত স্বভাবের এই কালাচ। যার দংশনে নিমেষে অনিবার্য মৃত্যু।
শান্ত স্বভাবের হলেও সাপটির বিষ খুবই তীব্র। কাউকে কামড়ালে ব্যথা না হওয়ায় প্রথমাবস্থায় কেউ বুঝতেই পারবেন না যে তাকে সাপে দংশন করেছে। এমনকি কাটা জায়গা ফুলবেও না। থাকবে না কোনও অনুভূতিও। এই অবস্থায় অনেকের কাছেই সাপের কামড়ের ব্যাপারটি প্রথমে অজানাই থেকে যায়।
তবে ধীরে ধীরে বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় গলা ও পেটের ব্যথা এমনকি অস্বস্তি বোধের মত লক্ষণগুলিও। সময়ে চিকিৎসার সুযোগ না হলে যার পরবর্তী পর্যায় মৃত্যু। কালাচকে কেউ কেউ ইন্ডিয়াম ক্রেট, কেউ আবার ব্ল্যাক ক্রেট এমনকি ঘামচিতি নামেও ডাকেন। মানুষের গায়ের ঘামের গন্ধ এদের খুবই প্রিয়।
ঘামের গন্ধের টানে এরা মাঠ ছেড়ে মানুষের শোওয়ার ঘরে রীতিমতো বিছানায় উঠে লুকিয়ে পড়ে। ঘুমের ঘোরে গায়ে হাত পা পড়লে তখনই কামড় বসিয়ে পালিয়ে যায়। কোনও কিছুর কামড়ের ঘটনা ঘটুক না কেন অহেতুক ভীত হওয়া নয়। ঠাণ্ডা মাথায় এক মুহূর্তও দেরি না করে সোজা হাসপাতালে চলে যাওয়া উচিত।
কালাচ সাপের কামড়ের বিশেষ লক্ষণগুলো-
১) গলা বা পেটে ব্যথা। তাও সাধারণত সকাল বা ভোরের দিকে। মনে রাখতে হবে, কালাচ কিন্তু নিশাচর সাপ। তাই তার কামড়ের প্রতিক্রিয়া ভোর বা সকালেই বেশি দেখা যাবে।
২) শরীরে এক ধরনের অস্বস্তিবোধ অনুভূত হবে। জ্বর আসবে।
৩) সময় গড়ালে রোগীর চোখের পাতা পড়ে আসবে। কিছুতেই সে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।
৪) মনে রাখতে হবে, কালাচের কামড়ে ক্ষতস্থান ফুলে যায় না। ব্যথাও হয় না। তাই এই বিষয় নজর রাখতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে, না হলে মৃত্যু হবে।
সূত্র : এ বেলা।
কেএনইউ/