ঘুরে আসুন বাংলার নায়াগ্রা নাফাখুম
প্রকাশিত : ১৪:৪১, ১০ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ১২:১৯, ১৪ আগস্ট ২০১৭
পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পথ আর শুভ্র মেঘের কার্পেট দিয়ে ঢাকা বান্দবানের থানচি। পাহাড়ের সঙ্গে নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে। চাইলে আপনি সহজেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের নায়াগ্রা জলপ্রপাত খ্যাত নাফাখুম থেকে।
বান্দরবান থেকে থানচি পৌঁছানোর পর স্থানীয় গাইড ভাড়া করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এখানে গাইড ভাড়ার পাশাপাশি থানচি থানায় পুলিশের অনুমতি নিতে ভুলবেন না।
এখানে পাহাড়ের সঙ্গে মিশে থাকা মেঘ দেখতে দেখতে সাক্ষাত পাবেন চিম্বুক পাহাড়ের। ক্ষুধা নিবারণের রয়েছে অনেক হোটেলে, সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই আহার করতে পারেন। চাইলে কিছুক্ষণ বিরতি নিতে পারেন। আর চারিদিকের অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের ছবি তুলতে তুলতে কেটে যাবে অনেক সময়।
এবার থানচি ঘাট থেকে ট্রলারে করে রওনা হতে হবে রেমাক্রির উদ্দেশে। সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে। উপরে ওঠা মানে নদীটা রেমাক্রি থেকে থানচির দিকে ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে এসেছে। আর এ কারণে এখানে খুবই স্রোত।
শীতকালে পানি কিছুটা কমলেও স্রোতের দাপট থাকে বেশ কিছু ঢালু জায়গায়। বর্ষায় এর রূপ হতে পারে ভয়ঙ্কর তা আন্দাজ করতেই গা শিউরে উঠে। নদীর কিছু দূর পরপর এক-দুই ফুট, এমনকি কোথাও কোথাও চার-পাঁচ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। প্রকৃতি এখানে এত সুন্দর আর নির্মল হতে পারে ভাবাই যায় না। নদীর পানি নীলাভ সবুজ।
কোথাও শুভ্র সাদা। নদীর দুই পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। সবুজে মোড়ানো প্রতিটি পাহাড় যেন মেঘের কোলে শুয়ে আছে অবলীলায়। কোনো কোনো পাহাড় এতই উঁচু যে তার চূড়া ঢেকে আছে মেঘের আস্তরে। অসাধারণ সে দৃশ্য! মনে হচ্ছে কোনো প্রাচীন স্বর্গে চলে এসেছি। সবুজে ঘেরা সে পাহাড়ে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় দু-একটি উপজাতিদের বসতঘর, চাষাবাদের জমি।
রেমাক্রি যাবার আগেই চোখে পড়ে ‘তিন্দু’। এই ‘তিন্দু’ বলা যায় ভূ-স্বর্গের রাজধানী। বড় বড় সব পাথর বোল্ডারের মতো পথ আগলে আছে। কোনোটার নাম ‘রাজা পাথর’, কোনোটার নাম ‘বড় পাথর’। স্থানীয়দের কাছে ভীষণ পূজনীয় এই জায়গা। আর এখানে নৌকা থেকে নেমে হেঁটে পার হতে হয়। তবে সাবধান থাকতে হবে নৌকা থেকে নামার সময় যেন পা মচকে না যায়।
এখান থেকে দু-তিন ঘণ্টা পথ হেঁটে নাফাখুম যেতে হয়। এর আগে চাইলে রেমাক্রির শীতল জলে গোসল সেরে নিতে পারেন।
দুই পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। মাঝখানে রেমাক্রি খাল। খুবই সুন্দর সেই দৃশ্য। পিঠে কিছুটা ভারী ব্যাগ নিয়ে যখন হাঁটবেন মাঝেমধ্যে শীতল খালের পানি সেই ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করবে।
এবার হালকা আলো-আঁধারিতে সে এক অপরূপ দৃশ্য। রেমাক্রি খালের পানিপ্রবাহ এই নাফাখুমে এসে বাঁক খেয়ে হঠাৎ করেই নেমে গেছে প্রায় ২০-২৫ ফুট। প্রকৃতির খেয়ালে সৃষ্টি হয়েছে চমৎকার এক জলপ্রপাত।
এখানকার মূল আনন্দ রাত্রী যাপন। চাইলে কয়েকজন মিলে তাবু খাটিয়ে থাকতে পারেন।
তাঁবুগুলো সেট করে চারপাশে বসাতে পারেন ক্যাম্প ফায়ার। যার মধ্যে জ্বলবে কাঠের ডালপালা। সেই আলোয় রাতের খাবার বা প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে পারেন। এ যেন এক রাতের জন্য সেই প্রাচীণ যুগে ফিরে যাওয়া।
রাতের পাহাড় ডিঙিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠা চাঁদ। সেই চাঁদের আলোর উজ্জ্বলতায় হানা দেয় কুয়াশা। সে এক ভয়ংকর মোহনীয় আর নেশাসক্ত পরিবেশ। এমন রাত জীবনে কখনো আসবে ভাবতে পারবেন না আপনি।
ভোরে তাঁবু থেকে উঠে দেখবেন নাফাখুমের আসল সৌন্দর্য। এ রকম নৈসর্গিক দৃশ্য আপনাকে পাগল করে তুলবে। নাফাখুম ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। মনে হবে যেন, এই জলপ্রপাতের পাশেই থেকে যাই বাকিটা জীবন।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বান্দরবান বাসে যেতে ৬২০ টাকা লাগবে। বান্দরবান থেকে থানচি লোকাল বাস বা জিপ রিজার্ভ নিয়ে যেতে পারেন। গাইড ঠিক করে তাঁকে নিয়ে যেতে হবে থানচি থানা ও স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে। অনুমতি নিয়ে রিজার্ভ বোটে (পাঁচজন করে) যেতে হবে রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে দুই ঘণ্টার মতো হেঁটে যেতে হবে নাফাখুম।
আর/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন