ঘোষণা দিয়ে সুনামগঞ্জের ১০ জলমহালের মাছ লুট
প্রকাশিত : ০৮:১৩, ৭ মার্চ ২০২৫

সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই, জামালগঞ্জ উপজেলায় ঘোষণা দিয়ে ইজারাকৃত বৈধ জলমহালের মাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে লুটে নেওয়া হয়েছে তিন উপজেলার অন্তত ১০টি জলমহালের মাছ। মাইকিং করে জলমহালের আশপাশের কয়েক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতা জলমহালগুলোর কোটি কোটি টাকার মাছ লুটে নেয়।
গত বুধবার (৫ মার্চ) দিরাই উপজেলার মেধা বিল ও বেতরগাং জলমহাল এবং জামালগঞ্জ উপজেলার আইলা বিল লুট করেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। পূর্ব ঘোষণা দিয়ে লুট চালালেও হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে যেন অসহায় প্রশাসন।
এদিকে, জলমহালের কোটি কোটি টাকার মাছ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন ইজারাদাররা। সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, বুধবার দিরাই উপজেলার মেধা ও বেতর বিলে জাল, পলো, কুচা হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়। মিছিল করে তারা পানিতে নেমে লুটে নেয় মাছরাঙ্গা মৎস্যজীবী সমিতির নামের ইজারাকৃত বিলের কোটি টাকার মাছ। একই কায়দায় জামালগঞ্জ উপজেলার আইলা বিলেও পূর্ব ঘোষণা দিয়ে মাছ লুটে নেওয়া হয়।
স্থানীয় লোকজন ও বিলের ইজারাদার জানান, আগের রাতেই মাইক ও মোবইল ফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিল লুটের খবর। ভোর থেকে বিলের পাড়ে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। মাছ শিকারের সরঞ্জামের পাশাপাশি সঙ্গে দেশীয় অস্ত্রও নিয়ে আসেন উচ্ছৃঙ্খল জনতা। দিরাই-শাল্লা উপজেলার শ্যামারচর, ললোয়ারচর, মাইতি, চন্দ্রপুর, ইসলামপুর, সন্তোষপুর, কার্তিকপুর, নোয়াগাঁও, চিকাডুপি, বল্লবপুর, উজানগাঁও, সোনাকানি, নিজগাঁও, মির্জাপুর, রাহুতলা, শরিফপুর, কাশীপুরসহ আশপাশের গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল লোকজন দিরাই-শাল্লার কামান ও লাইরা দীঘা, সতোয়া নদী, মেদা বিল ও বেতরগাং জলমহালের মাছ লুটে জড়িত বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিল লুটের খবর পেয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে লুট না করার জন্য আকুতি জানান ইজারাদার। তাতেও কাজ না হলে পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ভোরে বিলে উপস্থিত হয়েও রক্ষা করতে পারেননি নিজেদের জলমহাল। হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে অসহায় ছিল পুলিশ ও ইজারাদার। লুটে নেওয়া হয় কোটি টাকার মাছ। জলমহাল লুটের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
মাছরাঙ্গা সমবায় সমিতির সভাপতি রুশন মিয়া বলেন, “মাইকে ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষ এসে আমাদের সমিতির জলমহাল লুটে নিয়ে গেছে। আমরা বাধা দিয়েও পারিনি। আমাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেবো এটা আমাদের জানা নেই।”
এদিকে, গত রোববার সকালে দিরাই উপজেলার মেঘনা জলমহালের একটি বিল ও একই উপজেলার আতনি বিলের (শাল্লা উপজেলার জয়পুর গ্রামের সামনে) মাছ লুটে নেয় হাজারো মানুষ। এরপর সোমবার দিরাই উপজেলার কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির এলংজুরি ও আলীপুর গ্রামের পেছনের লাইরা-দীঘা ও চনপইট্টা বিলের পাইলের (অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে মাছ বড় করা) প্রায় কোটি টাকার মাছ লুটে নেয় বিল এলাকার ৮-১০ হাজার উচ্ছৃঙ্খল জনতা।
পরে গত মঙ্গলবার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের কাছের কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ ফিশারির সতোয়া নদীর মাছ লুট করে দিরাই ও শাল্লার ১০-১৫টি গ্রামের উচ্ছৃঙ্খল মানুষ।
কাশীপুর লাইরা দীঘা গ্রুপ জলমহালের ইজারাদার উত্তর জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ দাস বলেন, “এমন পরিস্থিতি জীবনেও দেখিনি। প্রতি বছর ৪৫ লাখ টাকা রাজস্ব দেই। তিন বছর অন্তর অন্তর মাছ ধরা হয়। আগামী বছর মাছ ধরার কথা থাকলেও ১০-১৫ হাজার উচ্ছৃঙ্খল মানুষ দুই দিনে আমাদের জলমহালের কোটি টাকার বেশি মাছ লুটে নিয়ে গেছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে (ডিসি) লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।”
জলমহাল লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন বলেন, “দিরাই-শাল্লার জলমহাল লুটের বিষয়টি আমরা অবগত। ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “দিরাই, শাল্লা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জে জলমহাল লুট করার সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ জড়িত। তারা পলো, টেটা, কুচ দিয়ে সংঘব্ধভাবে মাছ ধরতে আসে। এসব জলমহাল সরকারি ইজারার আওতায়। এই জলমহালগুলো লুটের কারণে আগামীতে ইজারা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। এর ফলে দেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। এতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বিঘ্নিত হবে। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। আমি অনুরোধ করব, তারা যেন এসব কাজ থেকে বিরত থাকেন।”
ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদাররা পদক্ষেপ নিলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে অনুরোধ করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
এসএস//
আরও পড়ুন