চকবাজারে আগুন: ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন জরিনা বেগম
প্রকাশিত : ১২:০৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
পুরান ঢাকার চকবাজারের পাঁচটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে নন্দ কুমার দত্ত সড়কের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশপাশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের লাশ উদ্ধার হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতেই একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিথর ঝলসানো দেহ। অর্ধশতাধিক ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে ভর্তি।
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় স্বজনদের আহাজারীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে কান্নার রোল। কেউ কেউ ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। কেউ স্বজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
হাসপাতালে সামনে জরিনা বেগম নামে এমন একজনকে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা যায়। তার দুই ভাই মোহাম্মদ আলী ও অপু। মোহাম্মদ আলীর তিন বছরের ছেলে আরাফাত পুড়ে মারা গেছে। ঘটনার সময় তারা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এছাড়া তুহিন নামের একজন কেঁদে কেঁদে মোবাইলে তার পরিবারকে বলছে, ‘আব্বা, আমি তুহিন, এনামুল পুইড়া মইরা গেছে। আমি আর রাজীব খুঁইজ্যা খুঁইজ্যা ঢাকা মেডিকেল মেডিকেল এসে তাকে খুঁইজ্যা পাইছি।’
এনামুলের পুরা নাম কাজী এনামুল হক অভি। তিনি ঢাকা সিটি কলেজ থেকে বিবিএ পড়েছেন। রূপালী ইনস্যুরেন্সে ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এনামুলের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ। তিনি ওই এলাকায় থাকতেন। রাতে দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। তুহিন, কাজী আর নিহত এনামুল সমবয়সী। সম্পর্কে তুহিনের ভাতিজা এনামুল।
মোহাম্মদ বাবু (২০) নামের একজন তার বাবাকে হারিয়ে মেডিকেলের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন। তার বাবার নাম সিদ্দিকুল্লাহ। তার বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে। তিনি চকবাজারে কসমেটিকসের ব্যবসা করতেন। সিদ্দিকুল্লাহ একটি হোটেলে খেতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু সেই হোটেল থেকে আর বেরুতে পারেননি তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লাশগুলো শনাক্তের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে রাখা হচ্ছে। স্বজনেরা এসে শনাক্ত করতে পারলে তাদের নম্বরগুলো জানানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, চুড়িহাট্টা বড় মসজিদের সামনে থাকা প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর বিকট শব্দ হয়। প্রাইভেটকারে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশের হোটেল ও কেমিক্যালের গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক কর্মীসহ অনেকেই এখানে কাজ করছেন। নগরবাসী, দেশবাসী সবার দোয়া চাচ্ছি, যাতে করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হলো আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। যারা আহত হয়েছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা ঘটনার তদন্ত করব।
একে//
আরও পড়ুন