ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামে বন্যায় ৪ জনের মৃত্যু, পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০৮, ২৩ আগস্ট ২০২৪ | আপডেট: ১৯:১৩, ২৩ আগস্ট ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, হালদা নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে ওঠায় উপজেলাগুলোর অধিকাংশ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ১০টি উপজেলার দুই লাখ ৬২ হাজার ৪০০ জন মানুষ। চট্টগ্রামে বন্যায় তিন উপজেলায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। 

মৃতদের মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলায় দুজন, হাটহাজারীতে একজন এবং রাঙ্গুনিয়ায় একজন রয়েছেন। এর মধ্যে হাটহাজারীতে বন্যার পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট একজনের মৃত্যু হলেও বাকিদের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর পানির তীব্রতা আরও বাড়ে। এখনো কার্যত পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) বিকেলেও এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে পানি ওঠায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা বিভিন্ন যানবাহন আটকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকামুখী লেন ব্যবহার করতে না পারায় উদ্ধার কাজেরও বিঘ্ন ঘটছে।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম ও ইছাখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দিনান্তের মধ্যে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও বাড়িঘর ফেলে যাননি অসংখ্য মানুষ। পরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় উদ্ধার কাজে নানা বিঘ্ন ঘটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধুরং ও হালদা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি উঠেছে।

ফটিকছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, উপজেলার কমবেশি সব এলাকা প্লাবিত। প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। এলাকার বেশ কিছু মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া রাউজানের পশ্চিম নোয়াপাড়া, পালোয়ান পাড়া, মোকামীপাড়া, সাম মাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা, বৈইজ্জাখালি, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, গহিরা, নোয়াজিশপুর, চিকদাইর, ডাবুয়াসহ কয়েকটি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলার বন্যায় প্লাবিত এলাকার মধ্যে রয়েছে ফরহাদাবার, মান্দাকীনি, বুড়িশ্চর, শিকারপুর, গড়দোয়ারা, দক্ষিণ মাদার্শা, উত্তর মাদার্শা, মেখল, পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ড, নাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী। হালদা নদীর পানি উপচে পড়ে তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর পানিতে ডুবে রয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বোট নিয়ে এসব এলাকায় উদ্ধার কাজ চালান বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। তারা এসময় শুকনো খাবারেরও ব্যবস্থা করেন।

মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী জানান, বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ পানির তীব্রতা বেড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎসেবা বিচ্ছিন্ন, এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। এতে উদ্ধারের থেকে নিশ্চিত সংবাদ পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে। এ ছাড়া অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী করেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার ও তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করছে।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি