ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

চট্টলার অভিভাবক ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৪:০০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

মহিউদ্দিন চৌধুরী শুধু একজন আওয়ামী লীগ নেতাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুরো চট্টগ্রামের অভিভাবক। বিভিন্ন সময়ে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে একাধিকবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, চট্টগ্রামের আপামর মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। শরীরের নানা রোগ-ব্যাধিকে উপেক্ষা করে অসীম সাহস, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত আর জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে দাড়িয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের অভিভাবকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন

১৯৪৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে এই মহান নেতা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মরহুম হোসেন আহমদ চৌধুরী, আর মাতা মরহুম বেদৌরা বেগম। আট ভাইবোনের মাঝে মহিউদ্দিন মেঝ। বাবা চাকরি করতেন আসাম বেঙ্গল রেলওয়েতে।

মহিউদ্দিন চৌধুরী স্কুল জীবনেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। মাধ্যমিক পড়াশুনা শেষেই ভর্তি হন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোর্সে। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠ না চুকিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রামের অন্যতম বিদ্যাপিঠ চট্টগ্রাম কলেজে। বছর না ঘুরতেই ভর্তি হন কমার্স কলেজ, পরে সিটি কলেজে।

সিটি কলেজে থাকাকালেই বিপ্লবী রাজনীতির হাতেখড়ি হয় তাঁর। সিটি কলেজের পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে লাভ করেন স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর সান্নিধ্য পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুবই কাছের আর আদরের ছাত্রনেতা ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। জাতিরজনকের ডাকে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন তিনি। এজন্য পাক বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হয়েছেন অসংখ্যবার। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি সদর দফতরের কাছে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ চারমাস অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন এই নেতা।

তার গ্রেফতারের খবরের কিছুদিন পর ধরেই নেওয়া হয় যে মহিউদ্দিন আর বেঁছে নেই। এজন্য ভারতের একটি মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে ‘শহীদ মহিউদ্দীন’ ক্যাম্প নামে একটি ক্যাম্প খোলা হয়েছিলো। হঠাৎ একদিন মানসিক রোগীর নাটক করে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালিয়ে বের হন মহিউদ্দিন। কারাগার থেকে বের হয়ে পাড়ি জমান ভারতে। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে সক্রিয়ভাবে সম্মুখসমরে অংশ নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন ভারত-বাংলা যৌথবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের অধীনে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জহুর আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ঝাপিয়ে পড়েন নতুন সংগ্রামে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। অল্পের জন্য মহিউদ্দিন ধরা পড়া থেকে বেঁচে যান, মৃত্যুবরণ করেন সাথী মৌলভি সৈয়দ। সক্রিয় হন প্রকাশ্য রাজনীতিতে।

৯০ দশকের দিকে স্বৈরাচারী জান্তা এরশাদের শাসনামলে চট্টগ্রামে স্বয়ং জান্তা প্রধানকে অবান্চিত ঘোষণা করে সরকারের চক্ষুশূল হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ফলে আবারও কারাবন্দি হন তিনি। ১৯৯০-এর গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চট্টগ্রামবাসীর আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হয়েই বিজয়ী হন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র হন তিনি । এরপর ২০০৫ সালে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন মহিউদ্দিন। ২০০৬ সালের ২৭ জুন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এর আগে প্রায় দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য এক জীবন ছিলো চট্টলবীর খ্যাত এই নেতার। মহান এই নেতার মৃত্যু চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

 

//এমআর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি