ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

চবির হল সংকটে সময় ও আর্থিক ক্ষতিতে শিক্ষার্থীরা

চবি সংবাদদাতা:

প্রকাশিত : ১৭:৫৬, ১২ নভেম্বর ২০১৮

আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে কাগজে কলমে এটি ‘সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়’। কাগজে কলমে শতভাগ, বাস্তবে ১৬ ভাগ যেন আর পরিবর্তন হবে না। ফলে শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার অপরিচ্ছন্ন ও অনেকটা বসবাসের অনুপযোগী কটেজে (ছাত্রবাস) অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ মাইল দূরে শহরে ব্যয়বহুল বাসা ভাড়া করে। এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অন্যদিকে উদ্বোধনের ৩ বছর পরও চালু করা হয়নি দুইটি আবাসিক হল।

হল সংকটসহ বিভিন্নমুখী অবহেলা আর অযত্নে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। অনেকেই অনেক অফার আর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কারো নজর নেই। প্রতিষ্ঠার ৫২ বছরেও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অর্ধ সেঞ্চুরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ১৬ ভাগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট বইয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২৭ হাজার ৮ শত ৩৯ জন। ১০টি হল ও একটি হোস্টেল মিলিয়ে মোট ৪ হাজার ৩০১ টি আসন রয়েছে। সে হিসেবে মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ছাত্রদের জন্য আলাওল হলে সিট রয়েছে ২৬০ টি, এ এফ রহমান হলে ২৫৮ টি, শাহজালাল হলে ৪৭৫ টি, শাহ আমানত হলে ৬৩২ টি, সোহরাওয়ার্দী হলে ৩৭৫ টি, আব্দুর রব হলে ৫০৯ টি, মেয়েদের জন্য শামসুন নাহার হলে ৪৮১ টি, প্রীতিলতা হলে ৫৩১ টি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৫০৮ টি, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ২৪৫ টি, শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে রয়েছে ২৭ টি সীট।

অন্যদিকে ছেলেদের জন্য ৭৫০ টি সিট বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং ছাত্রীদের জন্য ৭৫০ টি সিট বিশিষ্ট জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করলেও তা চালু করা হয়নি। এনিয়ে নানান কথা। বাস্তবায়নেরও তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম আবাসন সংকটের কারণে হলগুলোতে অনেক জায়গায় ১ জনের সিটে বাধ্য হয়ে থাকছে ২ জন। অন্যদিকে রাজনৈতিক অবস্থান না থাকলে হলে সিটও পাওয়া যায় না। এছাড়া শিক্ষা জীবন শেষ করেও দীর্ঘদিন ধরে অনেককে হলে অবস্থান করতে দেখা যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন কটেজগুলোতে গাদাগাদি করে থাকছে শিক্ষার্থীরা।

এতে রয়েছে নানা বিপত্তি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অপরিচ্ছন্ন সেমি পাকা ঘর, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কটেজে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কটেজ চালাচ্ছে মালিকরা। কটেজগুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি কটেজর পাশেই রয়েছে ময়লার স্তূপ, সেখান থেকে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। সেনিটেশন ব্যবস্থা যাচ্ছেতাই। সুপেয় পানির সংকট। এতে করে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পরার আশংকা রয়েছে প্রবল।

অন্যদিকে দেয়ালজুড়ে জন্মেছে আগাছা। দেয়ালের পলেস্তরা খসে দেখা যাচ্ছে ইট-সুরকির গাঁথুনি। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকছে শিক্ষার্থীরা। আর এসব কিছুর সাথে চোরের উপদ্রব তো রয়েছেই।

কটেজে বসবাসরত বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারায় আমাদের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে এ সব জরাজীর্ণ কটেজগুলোতে। ছাত্রাবাসে নেই সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। ফলে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটছে।

এনায়েন সানী নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কটেজে বিশুদ্ধ পানির অভাবের পাশাপাশি রান্নার কোন ব্যবস্থা নাই। বাধ্য হয়ে বেশি দামের নিম্মমানের হলের ও হোটলের খাবার খেতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় সময়ই রুম থেকে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়।

তাবাচ্ছুম নিসু নামের এক মেয়ে শিক্ষার্থী বলেন, চট্টগ্রামের বাইরের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক মেয়ে শুধুমাত্র হলের ভরসায় এখানে পড়াশুনা করতে আসে। তবে হলের আবাসন সংকটের কারণে তাদেরকে বাইরে থাকতে হলে আলাদা একটা খরচের বোঝা তৈরি হয়। তাছাড়া শহরের ভেতরেই যারা দূর থেকে যাতায়াত করে তাদেরকেও ক্লাস এবং অন্যান্য কাজের জন্য অনেক দ্বিধাদন্দ্বে ভুগতে হয়। এছাড়া মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি তো রয়েছেই।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর মোহাম্মদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের উপরের দিকে অংশের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে সেখানে ছেলেদের উঠানো যাবে। এছাড়া মেয়েদের জন্য নির্মিত জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের ফার্নিচারগুলো এখনো আসে নাই, তা আসলে শিক্ষার্থী উঠানো যাবে। এর ফলে আবাসন সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে।

কাজ কবে শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন। আপনি ওনার সাথে যোগাযোগ করেন। দুই হলের নির্মান কাজ কবে শেষ হবে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ বলেন, ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ দুই মাসের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করতে বলেছে। আগামী বছর জানুয়ারী পর্যন্ত তাদের সময় দেয়া হয়েছে ।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি