চরম হুমকির মুখে হস্তচালিত তাঁতশিল্প
প্রকাশিত : ১৫:৪৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
চরম হুমকির মুখে পড়েছে হস্তচালিত তাঁতশিল্প। আয় কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এই পেশা ছেড়ে যাচ্ছেন শ্রমিক ও উদ্যোক্তারা। যে কারণে দেশের তাঁতশিল্পে কর্মসংস্থান দিন দিন কমছে।
গত ১৫ বছরে এ শিল্পে কর্মসংস্থান কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। বর্তমানে এখানে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ জন। ২০০৩ সালে ছিল ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জন। ১৫ বছরে কমেছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তাঁত শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁত শুমারি ২০১৮-এর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। দেশে তৃতীয়বারের মতো তাঁতশুমারি পরিচালনা করেছে বিবিএস। এর আগে প্রথমবার ১৯৯০ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০০৩ সালে তাঁতশুমারি পরিচালিত হয়। ১৫ বছর পর গত বছর শুমারি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৩ সাল এবং ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা কমেছে যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে তাঁতশিল্পে কর্মসংস্থান কমার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পেশায় আয় কমে যাওয়া, হস্তশিল্প থেকে যান্ত্রিক শিল্পের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, শ্রমিকের অভাব এবং বাজারজাতকরণের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে গৃহস্থালি তাঁতের সংখ্যা এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫টি। কারখানাভিত্তিক তাঁতের কাপড় উৎপাদন হচ্ছে ৫৮১টি কারখানায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে। সব মিলিয়ে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা এক লাখ ১৬ হাজার ৬টি। দেশে এক লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি তাঁত ইউনিট ছিল ২০০৩ সালে। এর মধ্যে কারখানার সংখ্যা ১২ হাজার ৮১৯টি। ওই সময়ে এক লাখ ৭০ হাজার ৬৯৩ গৃহস্থালি তাঁত ছিল।
শুমারিতে দেখা যাচ্ছে, কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তাঁতের সংখ্যা ২০১৮ সালে কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ, যা ২০০৩ সালে ছিল ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বর্তমানে ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ তাঁতই হচ্ছে খানা বা গৃহস্থালিভিত্তিক। ২০০৩ সালে যা ছিল ৯৩ দশমিক ০১ শতাংশ।
বিবিএসের শুমারি অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পে এখন কাজ করছে এক লাখ ৬৮ জন নারী। অন্যদিকে পুরুষের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৪ জন। শিল্পে নারীর শ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বর্তমানে তাঁত শ্রমিকদের ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ নারী। ২০০৩ ও ১৯৯০ সালে নারীর অংশগ্রহণ ছিল যথাক্রমে ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে তাঁতশিল্পে পুরুষের অংশগ্রহণের হার ৪৪ শতাংশ। ২০০৩ এবং ১৯৯০ সালে এ হার ছিল যথাক্রমে ৫৩ শতাংশ এবং ৫৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে তাঁত শিল্পের প্রাধান্য দেখা গেছে। দেশের ৭৩ দশমিক ১০ শতাংশ তাঁত এই দুই বিভাগে। অন্যদিকে, শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে বিশেষ করে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান জেলায় আছে দেশের অর্ধেকেরও বেশি বা ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ তাঁত। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে, শহর এলাকার তুলনায় পল্লী এলাকায় তাঁত ইউনিটের সংখ্যা অনেক বেশি। পল্লী এলাকায় এ হার ৮৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শহর এলাকায় ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হস্তচালিত তাঁত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কুটির শিল্প। ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে সরকার তাঁতশিল্পের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এ শুমারির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে তাঁত বোর্ড এ শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বলেন, তাঁত খানার সংখ্যা কমে গেছে। বিগত তিনটি তাঁতশুমারির ফলাফল বিবেচনা করলে সামগ্রিক চিত্রের একটি নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বিবিএসের মহাপরিচালক বলেন, তাঁত শুমারির মূল উদ্দেশ্য এ খাতের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন করা এবং কার্যকর ও অকার্যকর তাঁত সনাক্ত করা। একই সঙ্গে তাঁতী ও স্বজাতীয় কর্মীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্ধারণ করা এর উদ্দেশ্য। এ শুমারির তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের জন্য এ খাতের উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন সহায়ক হবে।
এসএ/
আরও পড়ুন