ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

চলতি বছরের বন্যায় ত্রাণ বিতরণে ছিল বৈষম্য : টিআইবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

চলতি বছর বন্যা মোকাবেলায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব থাকায় ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ করায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে প্রকৃত দুস্থরা ত্রাণ পায়নি। এমনকি ত্রাণের অর্থ দিয়ে মন্ত্রীসহ তার লোকজন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলেও টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ইফতেখারুজ্জামান ‘বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং ত্রাণ কার্যক্রমে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব কথা জানান।

বন্যা মোকাবেলায় উদ্যোগের ঘাটতি, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অব্যবস্থাপনা, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে নানা দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে প্রতিবেদনে। বন্যাকবলিত ২৮টি জেলার ৫টিতে গবেষণা করে এমন চিত্রই তুলে ধরেছে সংস্থাটি। এতে ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের বন্যায় স্থান ভেদে ৪০ লাখ মানুষ ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত পানিবন্দী ছিল। সরকারি হিসেবে এ বন্যায় সারাদেশ মোট ১০৮ জন মারা গেছেন। যদিও বেসরকারি হিসেবে এ হিসাব ১১৯ জন দেখানো হয়েছে। অথচ বন্যায় ঝুঁকি যথাযথভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। চর ও হাওর অঞ্চলে বন্যার নিয়মিত প্রকোপকে প্রশাসন স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত মহড়ার আয়োজন, সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক বার্তা প্রচার করা হয়নি। স্থানীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায়ে পদক্ষেপে ঘাটতি পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। বাঁধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কার এবং নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে পর্যান্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব, ত্রাণের চাহিদা নিরূপণ না করা, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিতে প্রস্তুতি না থাকা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন নিশ্চিতে ঘাটতি, বন্যাকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রস্তুতি গ্রহণে ঘাটতি, ত্রাণের অর্থে মন্ত্রীর পরিদর্শন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার, শিক্ষা সামগ্রী সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণের পদেক্ষেপে ঘাটতি, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ রক্ষা, ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি, অপর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দের ঘাটতি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এসব কারণে বন্যায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধির মৃত্যু হয়েছে। পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম না হওয়ায় বিপুল পরিমাণে গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

১৮টি সুপারিশের মধ্যে- বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, গবাদিপ্রাণি ও সম্পদ রক্ষায় কমিউনিটিভিত্তিক সুরক্ষা কেন্দ্র তৈরি ও সম্পদ সুরক্ষার কৌশল হাতে কলমে শেখানো, বন্যায় ২৪ ঘণ্টা সর্তকবার্তা প্রচার, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধিদের প্রাধান্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতকরণ, বর্ষা মৌসুমের আগেই বাঁধ বা বেড়িবাঁধ ও যোগাযোগ অবকাঠামো সংস্কার করাসহ ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, লোকবল ও বাজেট ঘাটতির কারণে সার্বিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি ছিলো। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে অবহেলা এবং দুর্নীতি ছিলো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা ধরনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তার গভীরে গেলে নানা ধরণের অনিয়ম-দুর্নীতি উঠে আসছে।

তিনি বলেন, প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সমন্বয় না থাকা ও তাদের অবহেলায় বন্যা প্রস্তুতি ও তা মোকাবিলায় ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। রাজনৈতিভাবে ত্রাণ বিতরণ ও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। স্বজনপ্রীতি করে কাউকে একাধিকবার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, আবার কেউ একবারও ত্রাণ পায়নি। ত্রাণের অর্থে মন্ত্রীসহ তার লোকজন বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। অথচ অনেককে ত্রাণ না পেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চলতি বছর বন্যা মোকাবিলায় সরকারের লোকবল ও বাজেট ঘাটতি ছিল। বন্যা পরবর্তীকালে সরকারিভাবে প্রস্তুতি ও সচেতনতার ঘাটতি দেখা গেছে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এসব কারণে টিআইবির পক্ষ থেকে ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আই/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি