ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চা শ্রমিক, যেন এ যুগের ক্রীতদাস! (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১৩:২৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১৩:৩৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

বেঁধে দেয়া মজুরিতে, দু’বছর পর পর বাগান মালিক ও চা শ্রমিকের মধ্যকার চুক্তি নিয়মরক্ষার অংশ মাত্র। আইনের বেড়াজালে আয় না বাড়ায় শ্রমিকদের জীবন বছরের পর বছর, থাকে তাই দারিদ্র্যসীমার নীচে। আন্দোলনের মাধ্যমে মজুরি কিছু বাড়ে ঠিকই, কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখি বাজারে ন্যায্যতার বিচারে তা কতটা যৌক্তিক? 

পঞ্চগড়ের সমতল আর, সিলেট-চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চল মিলিয়ে ১শ’৬৩টি চা বাগান। যেখানে, নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা, ১ লাখ ৩৮ হাজার।

দু’টি পাতা-একটি কুঁড়ির চা শিল্পের, সুনিপুণ কারিগর এই চা শ্রমিকরা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, পোকা-মাকড়, জোঁক কিংবা বিষাক্ত সাপের কামড়ের ঝুঁকি, মেনে নিয়ে কাজ করে তারা। 

দিনশেষে এই মেহনতের নতুন মজুরি ১শ’৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেটাও বরাবরের মতো ২৩ কেজি পাতা তোলার শর্তপূরণ হলে। আছে, প্রতারণা করে পাতার ওজন কম দেখানোর মতো ঘটনাও।

একজন চা শ্রমিক বলেন, "সাপ আছে, বিছা আছে কিন্তু আমাদের তো করাই লগবে আমরা গরীব মানুষ।"

আরেকজন চা শ্রমিক বলেন, "আমরা কেমনে চলবো ১৭০ টাকায়, তেলের কেজি ২৪০ টাকা, চালের কেজি ৫০ টাকা, তাইলে কোনটায় আমরা সুখি হলাম।"

রেশন হিসাবে তিন কেজি আটা পেলেও তা বাড়ি এসে মাপার পর তিন কেজি হয়না বলে অভিযোগ অনেক শ্রমিকের। 

সুবিধার গুণগত মান হতাশাজনক হলেও বাগানমালিকরা সবসময়ই, মজুরির বাইরের সুবিধাগুলোকে টেনে আনেন। 

টি প্ল্যান্টার আতাউর রহমান খান বলেন, "ঘর, ঘর মেরামতের টাকা, রেশন, মেটারর্নিটি লিভ, উৎসব ভাতা থেকে শুরু করে সবই উল্লেখ থাকে।"

আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশনসহ নানান সুবিধা’র অর্থমূল্য দাঁড় করানো হয় ৪শ’ ৩ টাকা। সেখানে আবার, এমন এমন সেবা যুক্ত করা হয়, যেগুলো শ্রম আইনে মজুরি হিসেবে স্বীকৃত নয়। 

চা শ্রমিক গবেষক ফিলিপ গাইন বলেন, "কোনো মালিক যদি শ্রমিককে ঘর দেয় আলো দেয় বাতাস দেয়, কাজের উপকরণ দেয় তাহলে সেটা কখই কাজের মজুরি হিসাবে গণ্য করতে পারবেন না। প্রতিটি চা বাগান শ্রম আইন বিধিমালার আটটা দশটা জায়গা লঙ্ঘন করে।" 

বাগান মালিক যখন, ‘ন্যূনতম মজুরি বোর্ড’ কে অনেকটা হাইজ্যাক করে মনমত সুপারিশ করিয়ে নেয়, তখন শ্রমিক আর কতটা ন্যায্য শ্রমের দাম পাবে? 

বাংলাদেশি চা সংসদের সভাপতি শাহ আলম বলেন, "পাশাপাশি রেশনের সুবিধা আছে, ছুটি আছে।"

চা শ্রমিক গবেষক অধ্যাপক মেজবা কামাল বলেন, " চা বাগানের জীবনে নিত্য মঙ্গা, চা শ্রকিরা আমাদের এখানে জীবনমৃত অবস্থায় বেঁচে আছে। " 

এজন্যই বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি এদেশের চা শ্রমিকদের। এটা লজ্জার, এটা অগ্রহণযোগ্য। 

চা শ্রমিক গবেষক ফিলিপ গাইন বলেন, "ভারতের আসামে এখন চা শ্রমিকদের মজুরি ২৩২ রুপি, এরসঙ্গে ১০৪ রুপি যোগ হয়।"

ঐতিহাসিভাবে লালিত একটা ঔপনিবেশিক মানসিকতা, যার ওপর ভিত্তি করে একটা দাশ প্রথার সৃষ্টি হয়েছে এবং যেটার কাছে জিম্মি চা শ্রমিকরা। উৎপাদনের একটা মূল উপাদন হচ্ছে শ্রমিকরা, তাই তাদের বঞ্চিত রেখে এই শিল্প বিকাশ ঘটবে এটা আশা করা অনুচিৎ।" 

চা শ্রমিকদের পেশা পাল্টিয়ে ভিন্ন কোন পেশায় যাবার সুযোগ নেই। অনেকটা অদৃশ্য সুতায় বাঁধা চা শ্রমিকদের তাই এ যুগের ক্রীতদাস বলাটা খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না। 

এসবি/ 
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি