ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল চান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩০, ২৫ আগস্ট ২০২৩

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার পনুর্বহাল চেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা। তারা বলেন, প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ছিনিয়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ জন্য তারা ষড়যন্ত্র করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা ব্যবস্থা তুলে নিয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রশ্নবিদ্ধ করতেও পিছপা হয়নি তারা। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা দেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সরকার গঠনে মুক্তিযুদ্ধের ধারা অব্যাহত এবং অসাম্প্রদায়কি বাংলদেশ সুরক্ষার আহবান জানিয়েছেন তারা।

আজ শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সংগঠনের জেলা কনভেনশেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা এসব কথা বলেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীক।

অনুষ্ঠানের উদ্বোক ছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচয়িতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম (এসপি মাহবুব), বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের শব্দ সৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির আবায়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাসুদ রানা মিন্টু, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাকসুদা সুলতানা ঐক্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ নজরুল ইসলাম, জেলা কনভেনশন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব গোলাম রব্বানী হীরুসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

সকাল ১০ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এর পর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আগত অতিথিরা।

মূল অনুষ্ঠান শেষে দ্বিতীয় পর্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের জেলা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীক বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। রনাঙ্গণে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। এ দেশ কারো দয়ায় আমরা পাইনি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা বাংলাদেশ নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করবে সেটি আমরা হতে দেব না। দেশ বিরোধীরা-স্বাধীনা বিরোধীরা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎখাতের জন্য নানা রকম চেষ্টা চলছে। এই সময় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, ষড়যন্তকারীদের সকল ষড়যন্ত্র ভন্ডুল করে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ যেভাবে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার মাঝে বক্তৃতা দিয়ে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, ঠিক সেভাবে আবার মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাতে হবে। যেখানে উপস্থিত থেকে জাতিকে বঙ্গবন্ধুর মতো করে আবারো উদ্বুদ্ধ করবেন। তার আহবানে সামনের নির্বাচনে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে। একটি কথা সকলকে মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা না থাকলে আমরা কেউ থাকবো না। তাই আমাদের সংগঠিত হতে হবে।

ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালির অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। সবচেয়ে বড় গর্বের বিষয় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। অথচ বিভিন্ন সময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কলংকিত করা হয়েছে। আর এই কলংকের সূচনা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। ওই সময় মূল য়ড়যন্ত্রকারী ছিলেন খোন্দকার মোস্তাক। সে ইতিহাসের একজন খলনায়ক, মীর্জাফর। নতুন প্রজন্মকে এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমরা দেশটিকে গড়ে দিয়েছি, নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাব সেক্টর কমান্ডার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এবারের নির্বাচন জাতির জন্য, দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটা স্বাধীনতা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা, এই দেশ শাসনও করবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাই সামনের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে শক্তি যাতে জয়ী হয় সে লক্ষে আমাদের কাজ করতে হবে। মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই করতে হবে। সুসংগঠিতভাবে রাজনৈতিক লড়াই করতে এবং সে লড়াইযে জিততে হবে। কোনো ব্যক্তি একা কিছু করতে পারে না, সকলকে সংগঠিত হয়ে পথ চলতে হবে। দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে । এ বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে দেশ ও সরকার বিরোধী যেসব কর্মকান্ড চলতে সেগুলো প্রতিহত করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। দেশ বিরোধী যেসব ষড়যন্ত হচ্ছে এখন সেগুলো মুক্তিযুদ্ধেও সন্তানদের মোকাবিলা করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। দেশ বিরোধী কোনো শক্তিকে দেশের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না। আর কোনো রাজাকারের গাড়িতে আমরা জাতীয় পতাকা দেখতে চায় না। শব্দ সৈনিক ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু না থাকলে আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর আমাদের যে দেশ উপহার দিয়েছেন, সে দেশ নিয়ে কাউকে কোনো রকম ষড়যন্ত্র করতে দিব না আমরা। এখনই সময় মাঠে নামার, এখনই সময় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলার, বাংলাদেশের কথা বলার। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের কেউ প্রতিহত করতে পারবে না।

সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশ গড়ার স্বার্থে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য আমরা কোটা রক্ষায় আমরা আন্দোলন করেছি। নানা রকম হুমকির উপেক্ষা করে আমরা রাজপথে নেমেছি। দরকার হলে আমরা আবারও রাজপথে নামবো। এই লড়াইয়ে আমরা সকলকে আমাদের পাশে চাই।

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি