ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:২০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চামড়ায় লবণ লাগিয়ে বেচতে হবে, বিক্রির টাকা অর্ধেক বাকি রাখতে হবে— আড়তদারদের এমন  আবদারের কারণে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এছাড়া হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে চামড়ার চাহিদা অনেকাংশে কমে গেছে।

গত দুই দিন ধরে রাজধানীর অলিগলি গিয়ে চামড়া কিনে আনার পর এখন পর্যন্ত  সেগুলো বিক্রি করতে পারেননি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। আর সময়মতো চামড়া বিক্রি করতে না পারলে তাতে পচন ধরবে। অপরদিকে, আড়তদারদের শর্ত মেনে চামড়া বিক্রির করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।

আজ রোববার ঢাকার হাজারীবাগে গিয়ে দেখা যায়, গরুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ছাগলের চামড়া ফুট হিসেবে বিক্রি না করে আকার ভেদে ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মৌসুমি বিক্রেতারা বলছেন, হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা এবার চামড়া কিনতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সরকার ছাগলের চামড়ার জন্য প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় প্রতিটি চামড়ার জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা পুরো চামড়ার জন্য ৩০ থেকে ৫০ টাকার বেশি দিতে চাইছেন না।

মোহাম্মদপুরের এক মাদ্রাসা শিক্ষক চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তিনি জানান, যারা কোরবানি দেন তারা গরুর চামড়া নিজেরা বিক্রি করে দিলেও অনেকে ছাগলের চামড়া মাদ্রাসা বা  এতিমখানায় দান করেন। এর বাইরে মাদ্রাসা এতিমখানার লোকজন নিজেরাও চামড়া সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করা চামড়ার সঙ্গে দানের চামড়া মিলিয়ে বিক্রি করছেন বলে শেষ পর্যন্ত হয়ত লোকসান হবে না, কিন্তু তেমন কোনো লাভও থাকবে না।  

তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় গতবারের তুলনায় এবার দেশে কোরবানির পশুর চামড়ার মান ভালো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, চামড়াব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা যৌথভাবে বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন। নামমাত্র মূল্যে তারা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যেই মাঠে নেমেছেন। এ কারণে এসব শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারিত দামের সঙ্গে লবণ মেখে দেওয়ার কোনও শর্ত ছিল না। কাঁচা চামড়ায় লবণ মাখাবেন পোস্তার ব্যবসায়ী বা আড়তদাররা। এরপরই তারা ট্যানারি মালিকদের কাছে লবণযুক্ত চামড়া বিক্রি করবেন। 

বাকিতে চামড়া কিনতে চাওয়া প্রসঙ্গে পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদার জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ট্যানারি মালিকদের কাছে যে চামড়া বিক্রি করেছি, তার মূল্য এখনও পাইনি। সেখানে অনেক ব্যবসায়ীর টাকা আটকে আছে। নগদ টাকায় চামড়া কেনার মূলধন এখন পাবো কোথায়?

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ বলেন, হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় থাকায় এবার চামড়া কেনার চাহিদা কমে গেছে। ছোট ট্যানারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছাগল বা ভেড়ার চামড়া ও গরুর মাথার চামড়া প্রক্রিয়া করার ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে হাজারিবাগে। ফলে চাহিদা নেই।

হাজারিবাগের এক ব্যবসায়ী জানান, হাজারীবাগে ছোট বড় প্রায় চারশ ট্যানারি ছিল। সেগুলো বন্ধ হয়ে সাভারে চালু হয়েছে মাত্র অর্ধশতাধিক ট্যানারি। এর মধ্যে মাত্র চার-পাঁচটি ট্যানারি আছে, যারা গরুর মাথার চামড়া ও ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। হাজারীবাগের ছোট ট্যানারিগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে গেছে।

তিনি জানান, গত বছর তিনি নিজে দুই হাজার পিস চামড়া কিনেছিলেন। এবার কিনেছেন মাত্র ৮০০ পিস।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক ট্যানারির কাছে গতবছরের চামড়াও জমা আছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও চামড়ার দাম কম। আর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ লাগে। এবার লবণের দাম ছিল অনেক বেশি। চামড়া সংগ্রহের মৌসুমে এসবের প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, গতবছর লক্ষমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল। এবার লক্ষ্য পূরণ না হলেও কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে তারা মনে করছেন।  এবার গরুর ৫০ লাখ, মহিষের ৫ লাখসহ ছাগল-ভেড়া মিলিয়ে ৮০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বছরে থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি