একুশের বিজনেস
‘চালের দাম বৃদ্ধির কারণ সিন্ডিকেট’
প্রকাশিত : ১৬:২৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
দেশের চালের বাজারে অস্থিরতা থামছেই না। দিনের পর দিন দাম বেড়ে হয়েছে আকাশচুম্বী। অসাধু কোন একটি চক্রের হাতে জিম্মি সাধারণ ক্রেতারা। কিন্তু সেই চক্রটি কারা? কেনোইবা দামের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার? কেনোই বা চালের বাজারের এই অদৃশ্য আগুনে পুড়ছে দরিদ্র মানুষ?
‘একুশের বিজনেস’ এর আজকের আলোচনার বিষয় ‘চলের মজুদ ও বাজার দর পরিস্থিতি’। বিশেষ এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন খোরশেদ আলম খান, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস ওনার্স এসোসিয়েশন।
একুশে বিজনেস : ২০১৭ সালে আমরা দেখেছি দেশের বাজারে কয়েক দফা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঝে কিছুটা স্থিতিশিল ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে গত এক সপ্তাহে আমরা দেখেছি আবারও চালে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কি অবস্থা, কেনো বাড়ছে?
খোরশেদ আলম খান : আপনি ঠিকই বলেছেন, ২০১৭ সালে ৪০ টাকার চাল আমরা খেয়েছি ৬৫ টাকায়। তখন বিভিন্ন মিডিয়াতে যখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় চালের দামটা কিছুটা কমে স্থিতিশিল অবস্থায় থাকে। আপনারা জানেন যে-কিছুদিন আগেই আমন মৌসুম ছিলো। তাই এই মূহুর্তে সব কৃষকের কাছেই ধান আছে। কৃষক তার খোরাকের জন্য যা মজুদ রাখেন তা এখনও আছে। ঠিক এই সময় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এর পেছনে আমরা যে যুক্তিটা খুঁজে পাই তা হচ্ছে- ডলারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা ভারত থেকে চাল আমদানি করি। ইতিমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ২১ থেকে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কিন্তু বাংলাদেশে এসেছে। পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। তারপরেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে আমি মনে করি আমাদের একটা জিনিসের সমস্যা হচ্ছে। খাদ্যের একটা আইন ছিলো, সেটা মনে হচ্ছে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আমার মত যারা মিল মালিক রয়েছেন তারাই কিন্তু ব্যবসাটা করি। আবার কিছু ব্যবসায়ি আছেন যারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে মজুদ করে আড়তে বিক্রি করেন। এখানে তাদের কাছে কিন্তু প্রচুর চাল রয়েছে। অনেক সময় ঢালাও ভাবে বলা হচ্ছে মিল মালিকেরা দাম বাড়াচ্ছে। আসলে তা ঠিক নয়, কিছু মিল মালিকের কাছে প্রচুর টাকা চলে গেছে। ব্যাংক থেকেও তারা টাকা নিচ্ছে। এভাবেই একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গছে। এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই।
আপনি একটা বিষয় দেখেন যে চালের দাম ১/১১ এর সময় অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। শুধু চাল না সবপণ্যের দামই বৃদ্ধি পেয়েছিলো। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন তখন সেই চালের দাম ৪০ টাকায় চলে আসে। অর্থাৎ তার সঠিক নেতৃত্বে দামটা কমে এসেছিলো। আর একটা ছিলো তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন দেশে বাম্পার ফলন ফলে।
এই যে দেখেন কৃষকের ফসলের জন্য দরকার সেচ, সেচের জন্য দরকার বিদ্যুত তা সে পর্যাপ্ত পাচ্ছে। তার দরকার কিটনাশক তা সে পাচ্ছে। তার দরকার সার তাও সে পর্যাপ্ত পাচ্ছে। অন্যান্য সরকার যখন ক্ষমতায় আসেন তখন কিন্তু এই সুযোগ কৃষকরা পায় না। ফলনও ভালো হয় না। ফলে সম্পূর্ণভাবে আমাদের আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। অথচ আপনারা দেখেছেন যে আমাদের দেশ থেকে আমরা চাল বিদেশে রপ্তানিও করেছি। কিন্তু আপনারা জানেন- হঠাৎ করে দেশে বন্যা হয়েগেলো। তখন পর্যাপ্ত বোর চাল কিন্তু আমরা পাইনি। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে সিন্ডিকেট। সরকারের কোষাগারেও তখন খাদ্যের সঙ্কট ছিলো। যেখানে ৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কোষাগারে থাকতেই হবে সেখানে দেড় লক্ষতে নেমে আসলো। যারা মজুদদার, কালোবাজারি তারা এগুলো জানে। তারা সব সময়ই এই সুযোগগুলো কাজে লাগায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই চালের বাজার আবারও স্থিমিত হয়ে আসে।
একুশের বিজনেস : কিন্তু এখন হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণটা কি?
খোরশেদ আলম খান : এখন আমন মৌসুমে ধান এসেছে। কিন্তু আবারও দুই/তিন টাকা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে কারণ হচ্ছে বাজারে ধান নাই। প্রশ্ন হচ্ছে ধানটা তাহলে কই গেলো। ১৫ দিন আগেও ধানটা গৃহস্থের কাছে ছিলো। তবে সেই ধান কোথায় গেলো? কিছু মিল মালিক ধানগুলো সংগ্রহ করে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে দিয়েছে। এখন দাম বাড়ছে, তারা বাজারে চাল কম ছাড়ছে, যা ছাড়ছে তা বাড়িয়ে বাড়িয়ে ছাড়ছে।
আমরা প্রতিযোগিতা হারিয়ে ফেলেছি। আগে ৮০০ এর মত মিল থেকে চাল বাজারে দেওয়া হতো। যখন ৮০০ মিল বাজারে চাল দিচ্ছে তখন মজুদ করার কোন সুযোগ থাকে না। তখন দাম স্বাভাবিক ছিলো। এখন অধিকাংশ রাইস মিলই বন্ধ হয়েগেছে।
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হলে নিচের ভিডিওটি দেখুন :
প্রতিবেদনটি অনলাইনের জন্য সাজিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ
এসএ/
আরও পড়ুন