ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএসএমএমইউ’র বৈকালিক সেবা

চিকিৎসকদের অবহেলায় বাড়ছে দুর্ভোগ

কাজী ইফতেখারুল আলম

প্রকাশিত : ২০:১৩, ৯ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২৩:৫০, ২ আগস্ট ২০২৩

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা পেতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ বহির্বিভাগে ভিড় করছে। সকাল ও দুপুরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি শিক্ষানবিশরা সেবা দিয়ে থাকলেও বৈকালিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাই তুলনামূলক কম খরচে চিকিৎসাসেবা পেতে দেশের প্রান্তিক এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী এসে ভিড় করছে হাসপাতালটিতে। তবে চিকিৎসকদের অবহেলা ও কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রোগী ও তাঁদের স্বজনরা।

স্বল্পমূল্যে মানুষকে বিশেষ সুবিধে দিতে ২০১১ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈকালিক বিশেষায়িত (বিশেষজ্ঞ) বহির্বিভাগ (আউটডোর) চিকিৎসা সেবা চালু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুরুর দিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবাকার্যক্রমের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালে বৈকালিক সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এই সেবা চালুর পর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে ঢাকা আসতে থাকেন শত শত রোগী। তবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেও, বাড়ানো হয়নি চিকিৎসকের সংখ্যা। একইসঙ্গে চিকিৎসকরা প্রাইভেট চেম্বারমুখো হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, বৈকালিক সেবায় প্রতিদিন ২৩টি বিভাগের অধীনে সর্বোচ্চ ২০ জন করে ৪৬০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। প্রতিদিনই বৈকালিক সেবা নিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো মানুষ বৈকালিক সেবা নিতে হাসপাতালে হাজির হন। তবে মাত্র ৪৬০ জন রোগী এ সেবা নিতে পারলেও চিকিৎসক না দেখিয়েই ফিরতে হয় শত শত রোগীকে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষদেরকে। বিশেষ করে দেশের প্রান্তিক এলাকা থেকে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক সেবা নিতে আসা রোগীরা সকাল ১০টা থেকেই হাসপাতালের সামনে লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর দুপুর ১২ টা থেকে টিকিট বিতরণ শুরু হয়। এতে হাজারো রোগী ও তাঁর স্বজনরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয়। বিশেষ করে, বৈকালিক সেবায় কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে রোগীদের গুণতে হয় অতিরিক্ত টাকা। অনেক সময় কর্মচারীরা রোগী ও তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে ১০০-৩০০ টাকার বিনিময়ে ‘কর্মচারী কোটায়’ টিকিট সংগ্রহ করে দেন। এতে অনেকেই লাইনের প্রথমদিকে দাঁড়িয়ে থাকলেও বেশির ভাগ সময় তাঁদেরকে জানানো হয়, ‘টিকিট শেষ হয়ে গেছে’। তাই চিকিৎসা সেবা না নিয়েই তাদেরকে ফেরত যেতে হয় নিজ নিজ ঠিকানায়।

বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা শায়লা নাজনীন বলেন, মেডিসিনের একজন বিশেষজ্ঞ দেখাতে আমি টানা দুদিন এসে এখানে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু টিকিট না পেয়ে খালি হাতে ফেরত যেতে হয়েছে। তবে ওইদিন দেখেছি, অনেকে দুপুরের দিকে এসেও চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সিরিয়াল ব্রেক করে তাদেরকে টিকিট দিয়েছেন। তাই আমাদের খালি হাতে ফেরত যেতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের এখন প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে হবে। তবে রোগীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শুধু টিকিটে সমস্যা-ই নয়, পরপর চিকিৎসক বদলের কারণে বদলে যাচ্ছে রোগীর প্রেসক্রিপশানও। সঙ্গে বদলাচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধরণও। এর সঙ্গে যুক্ত নতুন নতুন ওষুধ। এতে রোগীদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে, সংশয়-সন্দেহ। এমনই একজন রোগী সমবায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবদুল জলিল। তিনি বলেন, ‘আমি অর্থপেডিক ডিপার্টমেন্ট গত ৩০ ডিসেম্বর ডাঃ ইউছুপ আলিকে পায়ের ব্যাথা সংক্রান্ত সমস্যার কারণ দেখালে তিনি আমাকে এমআরআই করার পরামর্শ দেন। সাথে দুই মাসের মেডিসিন দেন । আমি এমআরআই না করিয়ে মেডিসিন খেতে থাকি। তার মাস খানেক পর ২৩ জানুয়ারি আবার এখানে আসি, কিন্তু দেখা হয় অন্য ডাক্তারের সাথে। নতুন ডাক্তার আবার মেডিসিন লিখে দিল। এরপরে এমআরআই করিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি এসে সেই রিপোর্ট দেখল আরেক ডাক্তার। আবার তিনি ১৪ দিনের নতুন ওষুধ দেন। ওষুধ খাওয়ার পরও ফের আমাকে আসতে হলো। কোনো প্রতিকার-পেলাম না। তাই ভাবছি কোনো প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তার দেখাবো। 

 এদিকে আরেক রোগী আয়েশা আকতার বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে ডাক্তার দেখাতে এসেছি, কিন্তু এখানে এসে মন মত সেবা পাচ্ছি না । ডাক্তারকে ভালো ভাবে সমস্যার কথা বলার আগেই তিনি (ডাক্তার) মেডিসিন লেখা শুরু করল। তিনি আমার কথা শুনতে নারাজ। শুধু (ইন্টার্ন) শিক্ষানবিশদের মাধ্যমে দেখেন। তাড়াহুড়া করে রোগী দেখেন । প্রাইভেট চেম্বারে যেভাবে সময় নিয়ে দেখেন এখানে সেইভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখলেন না। যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় মনটাই খারাপ হয়ে গেল’।

রোগীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, হাসপাতালটির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, এমন অভিযোগ আমার জানা নেই। বৈকালিক সেবাকে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ দাবি করে তিনি বলেন, এখান থেকে খুব স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে পারছে। তিনি আরও জানান, ৩০ টাকার বিনিময়ে সকালে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিকেলে ২০০ টাকার বিনিময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সকালের তুলনায় বিকালে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা আড়াইটায় অফিস শেষ করে তিনটায় বাড়তি সেবা অর্থাৎ জনসেবার জন্য বসেন। টিকেটের অর্থ থেকে চিকিৎসকরা পান ১০০ টাকা। বাকি টাকা হাসপাতালের তহবিলে যায়। প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে হাজারো রোগী আসেন। এখানে অনেক অনেক চিকিৎসক বসেন , যাদের সাক্ষাৎ পেতে গেলে অনেক দিনের সময় লাগে। এখন যেহেতু তাঁরা এখানে বসেন, তাই আমি মনে করি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ এসে ভালোই  সেবা পান। ভবিষ্যতে এই সেবাকে আরও বৃহৎ পরিসরে আরও বেশি সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।   

স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোরায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। দেশের মানুষ যাতে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা পান, সেজন্য গ্রাম পর্যায়ে স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে । এরই অংশ হিসেবে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম জোরদার করে সরকার।

ভিডিও: 

এমজে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি