চিকুনগুনিয়ায় কী করবেন
প্রকাশিত : ১০:৪৬, ৫ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১১:৩৩, ৫ জুলাই ২০১৭
মৌসুমটাই যেন জ্বরের। আশপাশে পরিচিত কারও না কারও জ্বর লেগেই আছে। কারও সিজনাল, কারও ডেঙ্গু, কারও আবার চিকুনগুনিয়া। তবে বেশিরভাগেরই মধ্যেই চিকনগুনিয়া আতঙ্ক কাজ করছে। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গু কিংবা অন্যান্য ভাইরাস জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নিয়মমাফিক ওষুধ ও পুষ্টিকর খাবার খেলে এবং বিশ্রাম নিলে পুরোপুরি সেরে উঠা সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. মোতাহার হোসেন বলেন, ঋতু বা পরিবর্তনের ফলে এই সময়ে ভাইরাস জ্বরসহ নানা ধরনের জ্বর দেখা দিচ্ছে। কারণ হচ্ছে এই সময়ে ভাইরাস জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়, বিশেষ করে ডেঙ্গু এমনকি সম্প্রতি চিকুনগুনিয়া বেশি হচ্ছে। ভাইরাস জ্বর সাধারণত ৭-১৪ দিন স্থায়ী হতে পারে। ওষুধ ও পুষ্টিকর খাবার খেলে সেই সঙ্গে বিশ্রাম নিলে এই সময়ের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যায়।
ডা. মোতাহার বলেন, সাধারণ ভাইরাল জ্বরে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত জ্বর শরীরকে দুর্বল করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা, খাবারে অরুচি, সর্দি-কাশি ইত্যাদি ভাইরাস জ্বরের প্রধান উপসর্গ। কিন্তু জ্বরের সঙ্গে যদি শরীরে র্যাশ বা ত্বকে ছোট লাল দানা দেখা দেয়, তবে তা কোনো কোনো সময় ভীতির কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকুনগুনিয়া
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস জনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এ রোগ ডেঙ্গু, জিকার মতোই এডিস প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। বর্ষার পর পর যখন মশার উপদ্রব বেশি হয় তখন এ রোগের বিস্তার বেশি দেখা যায়।
লক্ষণ
#হঠাৎ জ্বর আসার সঙ্গে গিঁটে প্রচন্ড ব্যথা ও ফুলে উঠা
#ত্বকে র্যাশ বা ফুসকারি
# প্রচণ্ড মাথাব্যথা
# শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি
# বমি বমি ভাব অথবা বমি
#চামড়ায় লালচে দানা
#মাংসপেশিতে ব্যথা
এর চেয়ে তীব্র হলে সন্ধি ফুলে যায়, গায়ে তীব্র ব্যথা, চোখে ব্যথা, রক্তচাপ ও প্রস্রাব হ্রাস প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। রোগটি সবচেয়ে জটিল রূপ নিলে উচ্চমাত্রার জ্বর, সন্ধি ব্যথা ও ফোলা, বমি এবং ডায়রিয়ায় রোগী অচেতনও হয়ে যেতে পারে। তবে চিকুনগুনিয়ায় ডেঙ্গুর চেয়ে মৃত্যুঝুঁকি কম।
চিকিৎসা
এ বিষয়ে আইচি মেডিকেলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খেতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে কোনো উপকার নেই। বরং অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে। গিটের ব্যথার জন্য গিঁটের উপরে ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক এবং হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। তবে প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিঁটের ব্যথা ভালো না হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
কী খাবেন
১. তরল খাবার : জ্বরের সময় যেই খাবারটির চাহিদা সবচেয়ে বৃদ্ধি পায়, সেটি হলো তরলজাতীয় খাবার। রোগীর বিপাকের হার বৃদ্ধি, শরীরের তাপমাত্রাকে স্বাভাবিকে আনা, হজমে ব্যাঘাত না ঘটানো ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে তরল খাবার নির্ধারণ করা হয়। তরল হিসেবে ফলের রস, স্যুপ, লাল চা ইত্যাদি খেতে পারেন। বিশেষ করে ভিটামিন সি-যুক্ত ফল, যেমন কমলা, মাল্টা, লেবু, জাম্বুরা, আনারস ইত্যাদি। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
২. নরম পথ্য: তরলের পাশাপাশি রোগীকে নরম বা অর্ধতরল খাবার দেওয়া গেলে ভালো। রোগীকে যেন বেশি চাবাতে না হয়, সহজে গেলা যায় এবং সহজে হজম হয়, সে জন্য নরম পথ্য নির্বাচন করতে হবে। যেহেতু তরল খাবারে ক্যালরি কম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান কম পাওয়া যায়, তাই তরল খাবারের পাশাপাশি রোগীকে নরম খাবারও দিতে হবে। নরম পাতলা মুগ ডালের খিচুরি, জাউভাত, সুজি, সাগু, পুডিং, নরম কাঁটা ছাড়া মাছ ইত্যাদি খাবার রোগীকে দিতে পারলে ভালো।
কী খাবেন না
ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত শক্ত খাবার ইত্যাদি। কড়া দুধ চা ও কফি, কোল্ড ড্রিংকস এসব খাবার শুধু হজমেই অসুবিধা করে না, জ্বরে দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। তাই এ সময়টায় এ ধরনের খাবার এড়িয়ে গেলেই ভালো হয়।
//এআর