চিরনিদ্রায় গ্রীন ঢাকার স্বপ্নদ্রষ্টা
প্রকাশিত : ১৯:১০, ২ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৭:১১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭
আর্মি স্টেডিয়ামে মেয়র আনিসুল হকের জানাজায় রাজনীতিকসহ সর্বস্তরের লোকজনের ঢল।
মা রওশন আরা হকের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মেয়র আনিসুল হক। মেয়রের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বনানীর কবরস্থানে শনিবার বিকেলে তাকে শায়িত করা হলো। এর আগে বিকেল ৩টা ১২ মিনিটে প্রয়াত মেয়রের মরদেহ আনা হয় আর্মি স্টেডিয়ামে। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিকেল ৩টা ২২ মিনিটে মঞ্চে উঠানো হয় তার লাশবাহী কফিন। সেখানে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন।
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষে সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ নুরুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান প্যানেল মেয়র ওসমান গণি, ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লা, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ.কে.এম শহীদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন। সেখানে সবার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ আছর তার জানাযা সম্পন্ন হয়।
বিকেল ৪টা ১৮মিনিটে জানাযা শুরুর আগে সবার উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন মেয়রের ছেলে নাভিদুল হক। এ সময় সবার কাছে তার বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং দোয়া চান। তিনি বলেন, “আমার বাবা একজন সৎ মানুষ ছিলেন। উনি নিজের স্বার্থে কাউকে কখনো কষ্ট দেননি। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কিছু কাজ করতে গিয়ে হয়তো কেউ কেউ তার আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকতে পারেন। তার জন্য আমি তার ছেলে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন”। এসময় তিনি জানাযায় অংশ নেওয়া সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার জানাযায় শরিক হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “তার মত দ্বিতীয় মেয়র ঢাকাবাসী কবে আবার দেখবে তা সন্দিহান। তার এমন অকাল প্রয়াণ আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে”।
মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গেই দায়িত্ব নেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, “আমাদের দুজনের মধ্যে খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আমাকে ছোট ভাই এর মত স্নেহ করতেন আর আমি তাকে বড় ভাই এর মত শ্রদ্ধা করতাম। ঢাকাকে পালটে দেবার স্বপ্নে দুজনই এক সঙ্গে কাজ করেছি আমরা। তার এমন অসময়ে চলে যাওয়াতে ঢাকার উন্নয়ন হোচট খেল। এমন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রতিদিন জন্মায় না। বড় ভাই বেঁচে থাকলে তার সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ করে থাকলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতাম”।
মেয়র আনিসুল হকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মেয়র আনিসুল হক এত আগে ওপারে চলে যাবেন তা ভাবিনি কখনো। একজন সৎ মানুষ ছিলেন তিনি। সবাইকে সাহায্য করতেন। ব্যবসায়ীদের পথিকৃত ছিলেন তিনি।’
আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “তিনি একজন ‘বাই বর্ন লিডার’ ছিলেন। ব্যবসায়িক অঙ্গন থেকে মেয়র পদ; সব ক্ষেত্রে একজন সফল নেতা ছিলেন তিনি। ঢাকার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি তার এ মৃত্যু।”
এছাড়াও মেয়র আনিসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে.ক. (অব.) ফারুক খান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এলডিপি নেতা মাহি বি. চৌধুরীসহ ব্যবসায়িক নেতারা।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন মেয়র আনিসুল হক। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয় তার।
এরপর শনিবার দেশে আনা হয় তার মরদেহ। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে সিলেট বিমান বন্দর এসে পৌঁছায় তার লাশবাহী বিমান। সেখান থেকে ঢাকার হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান পৌঁছায় দুপুর ১২টা ৩০মিনিটে। দুপুর ১টায় তার লাশ এসে পৌঁছায় বনানীর ১৮ নম্বরের বাসায়। এরপর সেখানে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি লাশের পাশে মোনাজাত করেন এবং মেয়র পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।
এসএইচ/