ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

চোখ হারাতে বসা সেই মিশুর উপর ৩ হামলাকারী রিমান্ডে

প্রকাশিত : ১৮:২৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ভোলা সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস মিশুর (১৯) উপর  হামলাকারীদের মধ্য থেকে গ্রেফতার হওয়া ৩ আসামীকে ২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

২৭ জানুয়ারি রোববার সকালে ভোলা চরফ্যাশনের অতিরিক্ত জেলা জজ কোর্টে আসামীদের হাজির করা হলে আদালত মামলার ১ নম্বর আসামী মিজান (২০), ২ নম্বর আসামী আক্তার (২৩) এবং ৫ নম্বর আসামী স্বপন (২৫) এই তিনকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন।

গত ২২ জানুয়ারি দুই দিনের শিক্ষা সফরে চরফ্যাশনের চর কুকরি মুকরি রওয়ানা দেয় ভোলা সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তাদের বাসটি দক্ষিণ আইচায় পৌঁছালে স্থানীয় জামাল মেম্বারের লোকজন অতর্কিতভাবে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে লাঠি এবং ইটপাট নিক্ষেপ করে ব্যাপক ভাঙ্চুর চালায়। শুধু তাই নয়; বাসে উঠে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা।

এঘটনার পরের দিন দক্ষিণ আইচা থানায় শিক্ষা সফরের গাড়িতে হামলার বিচার চেয়ে  ১২ জনের নামে দিয়ে এবং আরো অজ্ঞাত ১৫ জনের নামে মামলা করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শিক্ষা সফরের বাস এবং মিশুর উপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে ভোলা সরকারি কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে কলেজের গোটা ক্যাম্পাসে।

এ’সময় ভোলা-চরফ্যাশনের মূল সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঘটনার তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিকী এবং পুলিশ সুপার মোকতার হোসেনের বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

পরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক শেষে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আসামীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার। ওইদিনই দিবাগত রাতে জেলা পুলিশ সুপার মোকতার হোসেনের তত্ত্বাবধানে গোয়েন্দা পুলিশ এবং চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতার করে হাজতে পাঠায়।

রোববার সকালে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে শুনানী শেষে রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেন আদালত। এদিকে, এই ঘটনার সাথে জড়িত বাকী আসামীদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এ’ বিষয়ে দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম তালুকদার জানান, এই মামলায় অভিযুক্ত বাকি আসামীরা পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। যত দ্রুত সম্ভব আসামীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অবহেলা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে আবারো আন্দোলনে নামা হবে।

এ ঘটনা বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষা সফরের বাস এবং মিশুর উপর হামলাকারী কেউ পার পাবে না। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের প্রত্যেককে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি দুই দিনের শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে বাসযোগে চরফ্যাশনের চর কুকরি মুকরি রওয়ানা দেয় ভোলা সরকারি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ। ভোলা সদর থেকে বাসটি ছেড়ে গিয়ে প্রথমেই চর কলমি ইউনিয়নের শারেকখালী এলাকায় একটি খামার বাড়ি পরিদর্শন শেষে রওয়ানা হয় চর কুকরি মুকরির উদ্দেশ্যে। শিক্ষার্থীরা জানায়, বাসটি দক্ষিণ আইচায় পৌঁছালে স্থানীয় জামাল মেম্বারের লোকজন অতর্কিতভাবে হামলা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপর। লাঠি এবং ইটপাট করে ব্যাপক ভাঙ্চুর চালায়। শুধু তাই নয়; বাসে উঠে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিনা দোষেই এই হামলা এবং ডাকাতির স্বীকার হয়েছেন তারা। তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, মেয়েদের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ বাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় এবং আহতদের স্থানীয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এই ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস মিশুর চোখ মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা জানান, মিশুর বাম চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া নিয়ে শংকা রয়েছে। তবে, উন্নত চিকিৎসার করানো গেলে তার চোখের আলো ফিরে আশার সম্ভাবনা রয়েছে বলেন তারা। যার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে বলেও জানান চিকিৎসকরা।

পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন জামাল মেম্বারের চার বছরের বাচ্চাকে একটি মাইক্রোবাস চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। এই ঘটনার জেরেই শিক্ষা সফরের বাসে এবং শিক্ষার্থী মিশুর উপর হামলা চালায় দুর্র্বৃত্তরা।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি